বাংলাদেশ

সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছে টাকা ফেরত চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

  প্রতিনিধি ৬ মার্চ ২০২২ , ৬:২৩:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা এবং সেরামের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপাক্ষিক চুক্তির অংশ হিসেবে কেনা হয় মোট তিন কোটি ডোজ টিকা। 

এর মূল্য ধরা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত চুক্তির পর ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকাও পরিশোধ করে, যা প্রায় পৌনে ২ কোটি ডোজের মূল্য। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে।

সেরাম ইনস্টিটিউট কয়েক ধাপে দেড় কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে। বাকি দেড় কোটি ডোজ তারা সরবরাহ করতে পারেনি। চুক্তি অনুযায়ী তা ৫০ লাখ ডোজ করে পর্যায়ক্রমে দেওয়ার কথা থাকলেও নিজেদের প্রয়োজন ও সংকটের যুক্তিতে সংস্থাটি তা আর দেয়নি।

বর্তমানে সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা দিতে চাইছে। কিন্তু এখন বাংলাদেশে পর্যাপ্ত টিকা মজুদ রয়েছে। এ মুহূর্তে বাড়তি টিকার দরকার নেই। তাই টিকা আর নিতে চায় না। বরং অতিরিক্ত পরিশোধ করা টাকা কীভাবে ফেরত পাওয়া যায় সে রাস্তা খুঁজছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল শনিবার (৫ মার্চ) বলেছেন, ‘এখন সেরাম কর্তৃপক্ষ আমাদের বাকি টিকাগুলো সরবরাহের আগ্রহ দেখাচ্ছে, কিন্তু এখন তো আমাদের তা প্রয়োজন নেই। যখন প্রয়োজন ছিল তখন তারা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে আমাদের দিতে পারেননি। আমরা এখন তা নেব কিনা এ নিয়ে নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন আছে। আর যদি টাকা ফেরত চাই সেজন্যও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’

স্বাস্থ্য বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এই টিকা আর নেওয়া হবে না। এর বিপরীতে যে পরিমাণ টাকা বাংলাদেশ ফেরত পাবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সেরাম কর্তৃপক্ষ এখন টিকাগুলোর সরবরাহ করতে বেশ আগ্রহী। কিন্তু ওই পরিমাণ টিকা এখন বাংলাদেশে এনে মজুদ করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। কারণ আমাদের বিপুল পরিমাণ টিকা মজুদ আছে।

দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর ১১ মাস পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গণহারে কোভিড প্রতিরোধী টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে সরকার। এ কর্মসূচির শুরুতে প্রয়োগ করা হয়েছিল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি টিকা। এজন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বরেই সেরামের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। শুরুতে সব ঠিক থাকলেও ভারতে সংকট দেখা দেওয়ায় এক পর্যায়ে বাংলাদেশকে টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সেরাম। এরই মধ্যে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে।

গত বছরের ২৫ জানুয়ারি প্রথম চালানে কেনা টিকার ৫০ লাখ ডোজ বাংলাদেশকে পাঠিয়েছিল সেরাম। পরের মাসে ৫০ লাখের বদলে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠায়। এরপর ভারতে টিকার সংকট ও চাহিদার কথা বলে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির সরকার। পরে ধাপে ধাপে আরও কিছু টিকা পাঠায় সেরাম। সব মিলিয়ে চুক্তির দেড় কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশে পাঠিয়েছে সেরাম।

সময়মতো টিকা সরবরাহ করতে না পারায় তার প্রভাব এসে পড়ে বাংলাদেশের করোনা টিকা প্রয়োগের কার্যক্রমের ওপর। টিকা সংকটের কথা বিবেচনা করে একসময় প্রথম ডোজ প্রয়োগও বন্ধ করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চীনসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে টিকা কেনা হয়। বিভিন্ন উৎস থেকে উপহার হিসেবেও বেশ কিছু টিকা আসে। জুন থেকে স্বাভাবিকতা ফেরে দেশের টিকাদান কর্মসূচিতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন ধরনের সাড়ে ১২ কোটির বেশি প্রথম ডোজ, ৮ কোটি ৫৮ লাখ দ্বিতীয় ডোজ ও সাড়ে ৪০ লাখ তৃতীয় ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by