বরিশাল

‘স্ত্রীর মামলায় চাকুরি হারাতে পারেন এসআই’

  প্রতিনিধি ১১ মার্চ ২০২৩ , ৪:৪৬:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিয়াজ মাহমুদ জয়, ভোলা প্রতিনিধি: 

এসআই আওলাদের বিরুদ্ধে করা তাঁর স্ত্রীর নারী ও শিশু নির্যাতন ও প্রতারণা মামলার সত্যতা প্রমাণিত হলে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে তাকে। অপরাধ প্রমাণিত হলে চাকুরীও হারাতে পারেন তিনি। তবে মামলার তদন্ত চলাকালীন সময়ে এ মুহুর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছেন না বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি।

বৃহস্পতিবার ৯ মার্চ রাতে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. আক্তারুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর সার্ভিস অফিসার মো. ইউছুফ হোসাইন জানান, এসআই আওলাদের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রীর দায়ের করা মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। মামলা হওয়ার পর তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে ক্লোজড করে বরিশাল পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। আদালতের মামলার পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে অভিযোগ দিয়েছেন। মামলার তদন্তসহ ওইসব অভিযোগগুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত কাজ শেষ হওয়ার পর আওলাদের অপরাধের বিষয়গুলো জানা যাবে। তদন্তে তাঁর অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে আইনানুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে।

স্বামীর ভাড়াটিয়া তালাবদ্ধ বাসার সামনে চারদিন অবস্থান করার পর বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বরিশাল হয়ে মানিকগঞ্জে ফিরে গিয়েছেন। এর আগে ওইদিন বিকেলে শশুড়বাড়ির লোকজন তাকে মারধর করায় তাদের বিরুদ্ধে ভোলা সদর মডেল থানায় অভিযোগ দিতে যান তিনি। কিন্তু আওলাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও অভিযোগ থাকায় সদর থানায় আর অভিযোগ নেয়া হয়নি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির জানিয়েছেন, যেহেতু আওলাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে একাধিক মামলা ও অভিযোগ হয়েছে এবং তার তদন্ত চলমান রয়েছে, তাকে প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে তাকে ক্লোজড করা হয়েছে। সেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে যেসকল ইউনিটে অভিযোগ দেয়া হয়েছে, আমরাও সেই ইউনিটগুলোকে এ অভিযোগ জানিয়ে রাখব। সেজন্য থানায় নতুন করে কোনো অভিযোগ নেয়া হয়নি।

মানিকগঞ্জ আদালতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আওলাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। এ মামলা দায়ের করার তিন দিন পর একই আদালতে ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রতারণার আরেকটি মামলা করেন তাঁর স্ত্রী। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) উভয় মামলার তদন্তভার দিয়েছেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় আওলাদকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হলেও প্রতারণা মামলায় মাহমুদুল হাসান মাসুদ নামে আরেকজনকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। এই মাহমুদুল হাসান মাসুদই তাদের বিয়ের কাজী ছিলেন। যিনি কিশোরগঞ্জে তাদের বিয়ে পড়িয়েছিলেন।

কাজী মাহমুদুল হাসান মাসুদ জানান, গতবছরের ৯ ডিসেম্বর আওলাদ তাঁর স্ত্রী রিনা বেগমকে নিয়ে কিশোরগঞ্জে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন এবং সেখানে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে তিনি তাদের বিয়ে পড়িয়েছিলেন। মাসুদের এক বন্ধু আওলাদকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছিলেন। তাঁর সেই বন্ধুর বাড়ি বরিশাল জেলায়।

মাসুদ আরও জানান, গত মাসের ৫ ফেব্রুয়ারি বরিশাল পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তাকে ডেকে আনা হয়েছিল। পুলিশ সুপার তাঁর কাছ থেকে বিয়ের বিষয়টি জেনেছিলেন এবং সেখানে তিনি তাদের বিয়ের কপিও দিয়েছেন।

এদিকে আওলাদের স্ত্রী রিনা বেগম তাঁর ভোলার ভাড়াটিয়া বাসায় অবস্থান করার পর থেকে আওলাদ ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শুক্রবার ১০ মার্চ রাতে আওলাদের বাবা ফোন রিসিভ করেছিলেন। এরপর সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি রং নাম্বার আখ্যা দিয়ে কল কেটে দেন৷ এরপর একাধিক ফোন করার পরও তিনি তা রিসিভ করেননি।

বৃহস্পতিবার ৯ মার্চ রাত থেকে শনিবার ১১ মার্চ দুপুর ১২টা পর্যন্ত আওলাদকে একাধিকবার কল করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তা রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে ও তাঁর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে বক্তব্যের জন্য তাকে একাধিক মেসেজ দেয়া হয়েছে। মেসেজে তিনি বিয়ের কথা স্বীকার করে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু এরপর তাঁর কাছ থেকে আরও তথ্য জানতে মেসেজ করা হলেও তিনি সেই মেসেজের কোনো রিপ্লাই দেননি। কয়েক মিনিট পর তিনি হোয়াটসঅ্যাপে রিপ্লাই দেয়া মেসেজ ডিলিট করে পেলেন।

বুধবার ৮ মার্চ ভোরের দর্পণ সহ দেশের বিভিন্ন টিভি-চ্যানেল পত্র পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে আওলাদের স্ত্রীর অভিযোগ ও তাঁর ভাড়াটিয়া বাসায় অবস্থানের সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর আওলাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী ও ব্যাচমেটরা মিডিয়া পাড়ায় দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন। সংবাদ বন্ধ করার জন্য আর্থিক সুবিধার অফার করেছিলেন। বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

কামরুল ইসলাম রুবেল নামে তাঁর বন্ধু পরিচয়ে এক ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়ে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে, এভাবে তাঁর অপরাধের সংবাদ ভাইরাল হলে তাঁর চাকুরীটা চলে যেতে পারে। সে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে এই দুই সন্তানের জননীকে বিয়ে করেছে। এরপরই তাকে আবার ডিভোর্সও দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই নারী খুব ডেঞ্জারাস, আওলাদ কখনো ভাবিনি এই নারী তাঁর বিরুদ্ধে এতকিছু করবে। এমন জানলে আওলাদ তাকে ডিভোর্স দিত না। আওলাদের নিউজ দেখে তাঁর সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি, সে এখন খুব ভয়ে আছে। আপনারা সাংবাদিকরা নিউজ করা বন্ধ করে দেন। একটু আন্তরিক হোন ভাই’।

গত মঙ্গলবার ৭ মার্চ সকাল থেকে স্বামীর ভরণপোষণ থেকে বঞ্চিত হয়ে তাঁর ভোলার ভাড়াটিয়া বাসার সামনে অবস্থান করেন রিনা বেগম। এরপর তাকে মারধর করে বাসায় তালা মেরে পালিয়ে যায় আওলাদের পরিবার। ৪ দিন তালাবদ্ধ ঘরের সামনে অবস্থান করে বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জে ফিরে যান তিনি।

আজ শনিবার ১১ মার্চ দুপুরে রিনা বেগম জানান, তিনি আবারও ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন। তাঁর ছোট ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জে ফিরে গিয়েছিলেন। স্বামী যতক্ষণ পর্যন্ত ভরণপোষণ দিবেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাঁর বাসার সামনেই অবস্থান করবেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by