প্রতিনিধি ১ জুন ২০২১ , ৭:০৮:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ
গণপরিবহনে অর্ধেক সিট ফাঁকা রেখে চালক ও হেলপার সহ যাত্রীদের মুখে মাক্স ও হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেখে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গণপরিবহন চলাচলে যে নির্দেশনা সরকার দিয়েছিল তা মানছে না অধিকাংশ গাড়ীর চালক ও চালকের সহকারী। অনেকে গাড়ী চালাচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই। করোনার প্রথম ওয়েভে বন্ধ গণপরিবহন চালুতে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানা হলেও এবারে তা মানছে না অধিকাংশ পরিবহন শ্রমিক।
কিছু কিছু চালক ও চালকের সহকারীর মুখে মাক্স দেখা গেলেও হান্ড স্যানিটাইজারের দেখা মেলেনি কোন সহকারীর কাছে। হান্ড স্যানিটাইজার প্রশ্নে কোন সদুত্তর মেলেনি এদের কাছ থেকে।
তাছাড়া গণপরিবহনে অর্ধেক সিট ফাঁকা রাখার নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ গাড়ীতে এই নিয়ম মানা হয়নি। অনেক গাড়ীতে দাঁড়িয়ে ও যাত্রী বহন করার অভিযোগ আসছে। অভিযোগের শীর্ষে আছে রাজধানীর গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা গাবতলী লিংক পরিবহন। এ ছাড়া মিরপুর-১২ থেকে ছেড়ে আসা বিকল্প অটো, বিহঙ্গ, শিকড়, খাজাবাবার বিরুদ্ধে ও অভিযোগ আছে সরকারী নির্দেশনা না মানার। গাফতলী লিংক (৮ নম্বর) গাড়ীর কন্টাক্টর সুমনের কাছে দাঁড়িয়ে যাত্রী বহনের কথা জানতেই যাত্রীদের উপর দায় চাপিয়ে বলেন, যাত্রীরা জোর করে গাড়ীতে উঠে, নামতে চায়না, তাদের নামতে বললে আমাদের উপর চড়াও হয়। এদের কাছ থেকে ভাড়া কম নেওয়া হয় কিনা? এমন প্রশ্নে চালকের ওই সহকারী জানায়, অনেকেই ভাড়া কম দেয় আবার অনেকে কাছে টাকা না থাকার অজুহাতে ভাড়া কম দেয়। তবে গাড়ীতে থাকা যাত্রী শাহআলম বলেন, গাফতলী থেকেই যাত্রী দাঁড়িয়ে আনা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ভাড়াও কম নেয়া হয়নি। একই অভিযোগ করলেন গাড়ীতে থাকা অন্যযাত্রীরা।
রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় সকল গণপরিবহনের অবস্থা একই। সরকারি দেওয়া নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বেশির ভাগ পরিবহন। যাত্রীরা অভিযোগ করছেন সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এ খাত দিন দিন বেপোরোয়া হয়ে ওঠছে। রাজধানীর মিরপুর, কালশী, গাফতলী, ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন ও গুলিস্থান ঘুরে পরিবহনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী বহনে ব্যাপক অনিয়ম দেখা গেছে। কোন কোন গাড়ীতে দুই সিটেই যাত্রী বসানো হয়েছে।
আবার অনেক গাড়ীতে দাড়িয়েও যাত্রী নেয়া হচ্ছে। মিরপুর থেকে মতিঝিল ছেড়ে আসা বিকল্প অটো পরিবহনের হেলপারকে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে যাত্রী নিয়ে গাড়ী চলে তাতে তেলের দাম ওঠেনা। এ জন্য কিছু যাত্রী দাঁড়িয়ে নেয়া হয়। একই প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু যাত্রী হৈ চৈ করলে গাড়ীর চালক গাড়ী থামিয়ে দিয়ে যাত্রীদের গালাগাল করেন এমন অভিযোগ করছেন ওই গাড়ীতে প্রেসক্লাব আসা আরেক যাত্রী পাপ্পু।
তিনি আরো বলেন, চালক ও তার সহকারীর নাম জানতে চাইলে কেউই তাদের নাম ও পরিচয় দেননি। মিরপুর-১২ থেকে মতিঝিল, গুলিস্থান, সদরঘাট ও যাত্রাবাড়ী অভিমুখে চলাচলকারী গাড়ীর চালক ও তাদের সহকারীদের আচরণ প্রায় একই। তাদের ইচ্ছায় এ রুটের যাত্রীদের চলতে হয় এমনটা জানালেন, মতিঝিলের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পল্লবীর জাকির হোসেন। বাসা মিরপুরের পল্লবীতে হওয়ায় এ রুটেই তিনি বেশি চলাচল করেন।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের পরামর্শ প্রদানে পদক্ষেপ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রজাপতি ব্যানারের এমডি কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রজাপতি পরিবহনের সকল মালিক ও শ্রমিকদের শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ী চালাতে বলা হয়েছে। চালক ও সহকারীকে মুখে মাক্স ও হাতে হান্ড স্যানেটাইজার ব্যবহারের নির্দেশ আছে। তাছাড়া যে সকল যাত্রীর মুখে মাক্স নেই ওই সকল যাত্রীকে গাড়ীতে তোলা যাবেনা। গাড়ীর অর্ধেক আসন ফাঁকা ও দাঁড়িয়ে কোন যাত্রী বহন না করার ও নির্দেশনা দেওয়া আছে। পাশাপাশি আমাদের সাইনিং পয়েন্টে এ সকল নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোন পরিবহন শ্রমিক নির্দেশ অমান্য করলে সেক্ষেত্রে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। বিআরটিএ ও ডিএমপি যৌথভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছেন বলে এ কর্মকর্তা জানালেন।
পরিবহনের বিশৃঙ্খলা ও সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হকের সাথে। ভোরের দর্পণকে তিনি জানান, পরিবহনের বিশৃঙ্খলা নিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অনেক অভিযোগ এসেছে। পরিবহনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্ভব নয়। যাত্রীরা প্রয়োজনে গাড়ীতে ওঠবেই। এতে আরো স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরকারের কাছে আগেই দাবি জানিয়েছিলাম যত সিট তত যাত্রী এবং আগের ভাড়ায় গাড়ী চলাচলের। এতে যাত্রীর চাপও অনেকটা কমে যেত, পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষার ঝুঁকি ও হ্রাস পেত।