রাজধানী

হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও নারী কেলেংকারির অভিযোগ

  প্রতিনিধি ২৬ আগস্ট ২০২১ , ৪:০১:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

এস এম বাবুল:

রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও নারী কেলেংকারির অভিযোগ উঠছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বরাবরে হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবরে কলেজের নির্যাতিত শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে অধ্যাক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

 

গত বছরের ১৭ থেকে ১৯ অক্টোবর কলেজটিতে তদন্ত চালায় সরকারি ওই সংস্থাটি এবং গত ৩১ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারীরা। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা পরিদর্শক টুটুল কুমার নাগ, সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মোঃ মুকিব মিয়া ও অডিট অফিসার মো. মতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত তের পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজের অধ্যাক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষার্থী শাহারা জেরিনকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কর্তৃক যে সকল অনিয়মের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে শিক্ষকদের সম্মানিভাতা কলেজ ফান্ডে জমা না করে নিজের ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা রেখে ইচ্ছামতো লেনদেন, ভূয়া ভাউচার, বৈদ্যুতিক মালামাল না কিনেও বিল-ভাউচার দেখানো, শিক্ষকদের আয়কর না দিয়েও আয়কর দেয়া হয়েছে বলে দেখানো।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, কলেজ থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকার বৈদ্যুতিক মালামাল দোকান থেকে কলেজের নামে কেনা হয়েছে বলে অধ্যক্ষ তদন্ত কমিটিকে জানান। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে ২৭ হাজার ৬০ টাকার মালামাল কেনাই হয়নি বলে দোকান কর্তৃপক্ষ তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান। এতে তদন্ত কমিটি বলেছে, মালামাল না কিনেও কেনার কথা বলা এবং তা প্রমাণ না হওয়ায় এই টাকা অধ্যাক্ষ আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিবেদনে কলেজের আসবাবপত্রসহ সকল ধরনের কেনাকাটায় লাখ লাখ টাকা লুটের কথা বলা হয়েছে।

একই সাথে ভূয়া ভাউচার কলেজ ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজের বেশ কিছু শিক্ষক ও কর্মচারী ভোরের দর্পণকে জানান, শিক্ষার্থীর মায়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক থাকায় ওই শিক্ষার্থীকে বেতন ও পরীক্ষার ফি মওকুফসহ ২০২০ সালে পরীক্ষায় অংশগ্রহনের অনুমতি ও কলেজে কেক কেটে ওই শিক্ষার্থীর জম্মদিন পালন করা হয়েছে। অন্য শিক্ষার্থীরা আর্থিক সমস্যার জন্য অধ্যাক্ষের নিকট আবেদন নিয়ে গেলে তিনি এম.পি’র নিকট পাঠিয়ে দিতেন।

কিন্তু শিক্ষার্থী শাহারা জেরিন এর বেতন ও পরীক্ষার ফি মওকুফ এর আবেদন তার পি,এস মোঃ সহিদুল ইসলাম কে দিয়ে লেখানো হয়েছে এবং ওই ছার্ত্রীর স্বাক্ষরও সহিদুল ইসলামকে দিয়ে করানো হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর ২০২০ সালে পরীক্ষায় অংশগ্রহনের অনুমতির আবেদন শিক্ষক রুবিনা আক্তার দিনাকে দিয়ে লেখানো হয়েছে। তবে কলেজের শিক্ষার্থী শাহারা জেরিনের ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়া সত্ত্বেও তাকে অধ্যক্ষ এবং তার সহযোগী কর্র্তৃক বিশেষ সুবিধা প্রদান অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১২ সালে রাজধানীর ওই কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন ময়েজ উদ্দিন। যোগ দেয়ার পর থেকেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠতে থাকে তাঁর বিরুদ্ধে। ময়েজ উদ্দিন শুধু এই কলেজেই নয়, আগে যে কলেজে ছিলেন অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জিআর ইনস্টিটিউশনে নিয়ম ভেঙে অধ্যক্ষ থাকাকালে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তির টাকা এফএসএসপির উপবৃত্তির টাকাও মেরে খেয়েছেন।

সেবারও ডিআইএ তদন্তে অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে শোকজ করে। একইসঙ্গে তার এমপিও বাতিল করে নয় লাখ আট হাজার ১২৫ টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দেয়ার নির্দেশও দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্ত প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭, ১৭-১৮ এবং ১৯-২০ অর্থবছরের ভ্যাটবাবদ ছয় লাখ ২৭ হাজার ১৪৮ টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষকদের সম্মানী বণ্টনেও আয়কর না দিয়েও দেখানো হয়েছে আট লাখ ৬২ হাজার ১৫৮ টাকা। এই টাকাটিও সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার জন্য অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিটি কর্তৃক আনীত অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন ভোরের দর্পণকে বলেন, ডিআইএ তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ‘ব্রডশিটে’ জবাব দিতে হয়। আমি সেই ব্রডশিটে টাকা আত্মসাৎ হয়নি বলে জবাব দেব। ভ্যাটের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ব্রডশিটে জবাব দেয়ার পর আমাকে কত টাকা দিতে হবে তা মন্ত্রণালয় জানাবে। মন্ত্রণালয় জানানোর পরই আমি টাকা ফেরত দেব।

শাহ আলী মহিলা কলেজ মার্কেট সভাপতির মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, মামলাটি পিবিআইয়ে তদন্তনাধীন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবেনা। শিক্ষার্থীর মায়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের কথা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টিকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন বলে প্রতিবেদককে জানালেন।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by