রংপুর

হারভেস্টার সহযোগী যন্ত্র উদ্ভাবন কৃষক আনোয়ারের

  প্রতিনিধি ১ জুন ২০২১ , ৬:৩১:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

মো. হারুন-উর-রশীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) :

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার অদূরে বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক ডা. আনোয়ার নিজ প্রচেষ্টায় দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন কৃষি যন্ত্রকিকরণ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে কৃষক ডা. আনোয়ার তৈরি করেছেন ধান কাটার হারভেষ্টার মেশিনের সহযোগী পরিবহন যান। এই যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে হারভেষ্টার দিয়ে ধান কাটা মাড়াই শেষে স্বল্প খরচেই ধান পরিবহণ করা এবং বস্তা জাত করা সম্ভব হচ্ছে।

জানা গেছে, ধান কাটা মাড়াই মৌসুমে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা নানা সমস্যার সম্মুখিন হয়। তাই কৃষকদের কাটা মাড়াই সুবিদার্থে কৃষি দপ্তরের অধিন ভুর্তকি মূলে ধান কাটা মাড়াইয়ের জন্য অত্যাধনিক হারভেষ্টার মেশিন সরবরাহ করেন। ওই হারভেষ্টার দিয়ে কৃষকরা দ্রæত সময়ে জমির ধান কাটা ও মাড়াই কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। কিন্তু হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা মাড়ার সময় একটি মেশিনে ধান সংগ্রহের ধারণ ক্ষমতা ২৫ মন। কাটা মাড়াইর পর জমি থেকে কৃষকের সুবিধা জনক স্থানে ওই ধান আনলোড কিংবা বস্তাজান করতে গেলে সময়ের প্রয়োজন এবং হারভেষ্টারের জ্বালনী খরচ ও রক্ষণা বেক্ষণ খরচ অনেক বেশী।

আবার জমি থেকে কৃষক ওই ধান বস্তা জাত করতে লেবার ব্যবহার করলে তার খরচও অনেক বেশী। এই চিন্তা ধারা থেকে কৃষক আনোয়ার তার প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবন করেন হারভেষ্টা সহযোগী পরিবহণ যান। যা দিয়ে এক একর জমির ধান হারভেষ্টার থেকে কৃষকের সুবিধাজনক স্থানে পরিবহণ করতে সময় লাগে কম এবং খরচ হয় মাত্র ৬ থেকে ৭ শত টাকা। অথচ একই পরিমাণ জমি ধান শ্রমিক দিয়ে পরিবহণ করতে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা।

বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক ইমরান হোসেন জানান, তিনি চলতি বছর সাড়ে ৭ একর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করেছে। ধান কাটা মাড়ার আধুনিক যন্ত্র হারভেষ্টার দিয়ে ভাড়ায় ধান কাটা মাড়াই সম্ভব হলেও জমি থেকে ধান পরিবহণের সমস্যা। তাই তিনি আনোয়ারের উদ্ভাবিত হারভেষ্টার সহযোগী যান দিয়ে ধান পরিবহণ করছেন। তাতে তার সময় কম লাগছে এবং খরচ কম হচ্ছে।
উপজেলার হরগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক সাখাওয়াত দেখতে এসেছেন ধান কাটা মাড়াই ও পরিবহণ ব্যবস্থার। তিনি জানান, এভাবে ধান কাটা মাড়াই ও পরিবণ করলে আমাদের খরচ সাশ্রয়ী হবে।

বাসুদেবপুর গ্রামের ২টি হারভেষ্টারের মালিক মো. গোলাম মোস্তফা লিখন জানান, তিনি সরকারের ভুর্তকিতে দু’টি হারভেষ্টার নিয়েছেন। কিন্তু হারভেষ্টা দিয়ে ধান কাটা মাড়াই দ্রæত হয়। তবে পরিবহনের ক্ষেত্রে হারভেষ্টারের রক্ষণা বেক্ষণ ও জ্বালানী খরচ অনেক বেশী। সব মিলে কৃষকের কাছে হারভেষ্টরের ভাড়া বেশী চাইলে কৃষকেরও সমস্যা। তাই আনোয়ারে তৈরি হারভেষ্টর সহযোগী যান ব্যবহার করলে কৃষক উপকৃত হবে। আরো ভালো হয় সরকার হারভেষ্টরের সাথে এই সহযোগী যানও যদি ভুর্তকিতে কৃষকদের সরবরাহ করতে পারেন।

উদ্ভাবক আনোয়ার হোসেন জানান, হারভেস্টারের সহযোগী হিসেবে এই যন্ত্রটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। হারবেস্টার মেশিন জমিতে দ্রæত সময়ে ধান কাটতে সক্ষম কিন্তু হারভেস্টারে শুধুমাত্র ২৫ মন পর্যন্ত জমি থেকে কাটা ধান ধারণ করতে সক্ষম। হারভেস্টার যদি সেই ধান বহণ করে গৃহস্থের বাড়ি অবধি পৌঁছে দিতে তার সময় ও জ্বালানী দুই-ই প্রয়োজন। তাই হারভেস্টারকে সহযোগিতা করতে এই মেশিনটি বানানো হয়েছে। হারভেস্টার ধান কাটবে তারপর এই সহযোগি যন্ত্রে সেটি আনলোড করবে। সহযোগি যন্ত্রটি অল্প সময়ে সেই ধান গৃহস্থের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ধান বস্তা জাত করতে সক্ষম। আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তকামনা করছি। সরকারিভাবে আমাকে সহযোগিতা করলে আমি এই সহযোগি যন্ত্রটি কৃষকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারব। এতে কৃষক কম খরচেই স্বল্প সময়ে জমি থেকে ধান ঘরে তুলতে পারবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, আনোয়ার হোসেনের উদ্ভাবিত মেশিনটি একটি কৃষি ও কৃষক বান্ধব মেশিন। এটি কৃষকদের কল্যাণে কাজ করবে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে আনোয়ার হোসেনের মেশিনটি সুফল বয়ে আনবে। কারণ বড় কৃষি জমির ভেতর থেকে ধান কেটে মাড়াই করে কৃষকের বাড়ীতে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত কাজ করবে এই মেশিন। এতে কৃষকের শ্রম, সময় ও অর্থ সবকিছুই কম লাগবে।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by