রংপুর

অযত্নে-অবহেলা জলঢাকায় ৪ শত শহীদের ঠিকানা বধ্যভূমির বেহাল দশা

  প্রতিনিধি ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ , ৭:৩০:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

হাসানুজ্জামান সিদ্দিকী হাসান, জলঢাকা (নীলফামারী) :

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার একটি ঐতিহাসিক স্থান কালিগঞ্জ বধ্যভূমি। সেখানে রয়েছে চারশত শহীদের ঠিকানা। উপজেলা সদর হতে ৮ কিলোমিটার দূরে ডিমলা রোডর কালিগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বাজারের মেইন সড়কের পার্শ্বে উত্তর- পশ্চিমে স্বাধীনতা যুদ্ধে হিন্দু পরিবারের বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৪শ জনের প্রাণ কেরে নেয় পাক সেনারা। সেই বধ্যভূমিতে তাদের স্বরণে নির্মিত হয় স্মৃতিস্তভ। সেই স্মৃতিস্তভ আজ অযতœ আর অবহেলায় পরে আছে। প্রতি বছর বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা ব্যাক্তিরা অনেক কথাই বলেন। চলে গেলে আর কিছুই হয় না ও মনে থাকে না। বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভের উপর উল্লেখ করা আছে ৭৮ জনের নাম। সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল বধ্যভূমির চার পার্শ্বে ময়লা আবর্জনা, গাছের পাতা, মলমূত্র ত্যাগ ও সামনে মাছ-মাংসের ব্যাবসা দোকানসহ নাম ফলকে পাতা ময়লা দিয়ে ভর্তি যা এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মূল বধ্যভূমির পাশে আরেকটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করছে সরকার। তবে একমাত্র মূল বধ্যভূমিটি ও নতুন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত বধ্যভূমির স্থানটি সংস্কার ও মেরামত না করার ফলে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। জাতীয় সংসদের তৎকালীন চিফ হুইপ আব্দুর রউফ উক্ত স্থান পরিদর্শন করে বধ্যভূমি হিসাবে কালিগঞ্জকে চিহ্নিত করে নাম ফলক উন্মোচন করেন। তারপর হতে মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েই দায় শেষ করেন সকলে।
বিষয়টি গভীর ভাবে অনুধাভন করে তৎকালীন জলঢাকা উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার্র হাসান হাবিব ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল তৈরি করা হবে। কিন্তু তিনি বদলি হয়ে যাবার পর এখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল আর হয়নি।
সেদিনের সেই গণহত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ হেমন্ত শীলের পুত্র কমলাকান্ত শীল জানান, সেদিন ছিল ৭১ সালের ২৭ এপ্রিল। চারদিকে বাজছে যুদ্ধের বাজনা। আমরা পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বালাগ্রাম হতে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে ভারতে শরনার্থী হয়ে যাওয়ার পথে কালিগঞ্জে জড়ো হই। কিন্তু সেখানে আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়ায় পার্শ্ববর্তী ডোমার থানা হতে ৭টি গাড়িতে আসা পাক সেনারা। তারা নেমেই ছেলে বুড়ো, শিশু মহিলাদের আলাদা করে। তারপর বুড়ো ও যুবকদের একসাথে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করায় ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সে সময় আমি শিশুদের দলে থাকায় দূর থেকে দেখেছি সে দৃশ্য ও আমার পিতার মৃত্যুকালীন ছটফটানি। পরে মানুষের সাথে ভারতে চলে যাই। নয় মাস পর দেশ স্বাধীন হলে ফিরে আসি এবং দেখি আমাদের ভিটেমাটি সব জাল দলিল ও দখল করে অন্যরা বসবাস করছে।
সেই সময়ে যুবকদের দল হতে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া শহীদ অশ্বিনী অধিকারীর পুত্র অমর অধিকারী বলেন, সেই দিন কালীগঞ্জের এই যায়গায় গুলি হবার সাথেই আমি জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরে এলে দেখি আমার সারা গায়ে হালকা মাটিচাপা। প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়েছিল। তারপর পা নাড়তে গিয়ে দেখি নড়ে না। আমার গোঙানীর শব্দ শুনে এলাকার লোকজন এসে আমাকে মাটির নিচ হতে উদ্ধার করলে দেখতে পাই পায়ে গুলি লেগেছে। সেই গুলি বের করলে ভালো হই। এলাকাবাসী স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক সেনাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হিন্দু পরিবারের বিভিন্ন বয়সী মানুষের প্রাণ হারানোর ঐতিহাসিক স্থান কালিগঞ্জ বধ্যভূমির স্থানটিতে একটি কমপ্লেক্স নির্মাণের দাবি জানান।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by