ঢাকা

যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং যানজটে ক্রেতা দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ মানুষের ঢল

  প্রতিনিধি ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ , ৭:২০:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নের ভেতরে স্থায়ী ও নির্ধারিত পার্কিংয়ের স্থান থাকা সত্তে¡ও চারদিক ঘিরে পুরো এলাকা জুড়েই যত্রতত্র অবৈধ পার্কিংয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে নিয়মিত পরিবহন যাত্রী ও পথচারীসহ মেলার ক্রেতা দর্শনার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। পুলিশের নামে পার্কিংয়ে আদায় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকা। এনিয়ে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে গতকাল শনিবার ছুটির দিনে ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগমনে মেলা জমে উঠে। দুপুরের পর থেকে মেলাপ্রাঙ্গণে মানুষের ঢল নামে। ক্রেতা বিক্রেতারা কেনা কাটায় ব্যস্ত সময় পার করে। শুক্রবার ছুটির দিনে ১ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করে। শনিবার দিনও মানুষের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। মূল্যছাড়, ডিসকাউন্ট আর বিভিন্ন অফারে পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রচুর। মেলার সাপ্তাহিক ছুটির শেষ দিনে ক্রেতা বিক্রেতারা কেনা বেচায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্যমেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নের ন্যায় গাড়ি পার্কিংয়ের দরপত্র আহবান করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ২০লক্ষ টাকায় বাণিজ্য মেলার নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ইজারা পায়। সে ইজারার টাকা আদায় করতে পুলিশের নিয়োজিত যুবকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।  গত ১৯ জানুয়ারি মেলার পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণখালী গ্রামের হামিদুল হক (৩৮) নামের এক যুবক নিজের মোটরসাইকেলে বাড়ি যাওয়ার সময় পুলিশের নিয়োজিত লোকজন তার পার্কিংয়ের টাকা দাবি করে। সে টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে পিটিয়ে জখম করা হয়। পরে উদ্ধার করে হামিদুল হককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গাড়ি পার্কিংয়ের ঘটনায় দড়িগুতিয়াবো গ্রামের জয়নাল আবেদিন (৪৫) ও তার ছেলে রোবেল আহমেদকে (২২) গত ২৭ জানুয়ারি পুলিশ আটক করে। পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থানের পাশ্ববর্তী সড়কে পরিবহন চলাচলকারীদের কাছ থেকেও জোরপূর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত ঢাকা বাইপাস সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কের আশপাশে যত্রতত্র বাস, ট্রাক, সিএনজি, লেগুনা, অটোরিক্সা, প্রাইভেটকার সহ বিভিন্ন যানবাহন পার্কিংয়ের পাশাপাশি যাত্রী উঠানো নামানো হচ্ছে। তাতে প্রতিনিয়ত যানজটসহ নানা প্রতিকুলতার সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী, পথচারী ও মেলার ক্রেতা দর্শনার্থীরা। বাণিজ্য মেলাকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী এ অবস্থা চলছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে পাঁচটি বিষয় সহ যানজটকে দায়ী করে মেলার ব্যবসায়ীরা বিনা ভাড়ায় সাতদিন সময় বাড়ানোর জন্য সংবাদ সম্মেলন করে দাবি জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, যানজটের কারণে ক্রেতা দর্শনার্থীরা আশানুরূপ মেলায় আসেনি। কেউ কেউ আসলেও যানজটের ভোগান্তিতে পড়ে দ্বিতীয়বার ক্রেতা দর্শনার্থীরা মেলায় আসেনি। যেসকল ক্রেতা দর্শনার্থী মেলায় একাধিকবার আসেন যানজটের কারণে এবার তারা মুখ ফিড়িয়ে নিয়েছেন। বারবার প্রশাসনকে তাগিদ দেয়া হলেও যানজট নিরাসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেনি পুলিশ।

মেলার পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা সামছুল ইসলাম বলেন, এসকল অবৈধ পার্কিং যেকোন সময় পুলিশ উচ্ছেদ করতে পারে। গ্রেফতার করতে পারে চাঁদা আদায়কারীদের। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
মেলার ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়া বলেন, অবৈধ পার্কিং ও টাকা আদায়ের অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। ক্রেতা দর্শনার্থীদের সুষ্ঠু যাতায়াতের জন্য করা যত্রতত্র পার্কিং তুলে নিতে হবে। পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, পার্কিংয়ে চালকদের অব্যবস্থাপনা আর স্থান সংকটে ঢাকা বাইপাস সড়কের দুইপাশসহ যত্রতত্র পার্কিং করা হচ্ছে। তবে তা নিরসনে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, বাণিজ্য মেলার নির্ধারিত স্থানেই গাড়ি পার্কিং করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ২০ লক্ষ টাকায় ইজারা পেয়েছে।
সেই ইজারার টাকা পুলিশের নিয়োজিত লোকজন রশিদের মাধ্যমে আদায় করছে। পার্কিংয়ে টাকা আদায়ে অনিয়মকারী ৪/৫ জনকে ইতিমধ্যে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, গাড়ি চালকদের অদক্ষতা ও অবহেলাই যানজটের প্রধান কারণ। এছাড়া মেলার সীমানা প্রাচীরের বাইরের কোন বিষয় আমার দায়িত্বে পরে না।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by