আইন-আদালত

আদালতের অনেক রায় কার্যকর না হওয়া দুঃখজনক: প্রধান বিচারপতি

  প্রতিনিধি ১০ এপ্রিল ২০২১ , ৬:৫১:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আদালতের নির্দেশনা পালনে দেশের নির্বাহী বিভাগসহ সকলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারপরও রায় কার্যকর না হওয়া দুঃখজনক। কেন রায় কার্যকর করতে বারবার আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করতে হবে, এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।

শনিবার (১০ এপ্রিল) দুই বিচারপতির লেখা ভিন্ন দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।

হাইকোর্ট গত এক দশকে বেশ কিছু যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। কিন্তু সে রায়গুলো কার্যকর কতটা হচ্ছে এমন প্রশ্ন করেন লেখক সাহিত্যিক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন। সঠিকভাবে রায় কার্যকর হয় কিনা তা দেখভালের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের পরামর্শ দেন এই অধ্যাপক।

তার এ বক্তব্যের রেস টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রফেসর মুনতাসির মামুন একটা কথা বলেছেন, আমাদের রায় কার্যকর হচ্ছে না। এজন্য একটা সেল করা দরকার।’

তিনি বলেন, সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদে বলা আছে দেশের নির্বাহী বিভাগসহ সবাই সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে নির্দেশ পালনে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। সেখানে কেন আমাদের আবার তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করতে হবে। কারণ রাষ্ট্রের সবার দায়িত্ব হলো সুপ্রিমকোর্টের রায় কার্যকর করা। আমরা কন্টেম্পট করে করে হয়রান। কন্টেম্পট করেও প্রপারলি রায় কার্যকর যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। এটা এখন দুঃখের বিষয়।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তি তো আসলে সরকারি না। সম্পত্তির মালিক হলো জনগণ। সরকার হলো সংরক্ষণকারী। জনগণের পক্ষে সরকার সম্পত্তি সংরক্ষণ করে। এই সরকারি সম্পত্তি সংরক্ষণ করা কিন্তু সকলের দায়িত্ব। আমি বলতে চাই, আমাদের যেসব রায় হচ্ছে আশা করি নির্বাহী বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রত্যেকটা রায় বাস্তবায়িত হবে।’

এসময় তিনি ভিন্ন একটি বিষয়ে অবতারণ করে বলেন, সেদিন বঙ্গভবনে মালদ্বীপের ফাস্ট লেডি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন যারা বঙ্গবন্ধুর ঘাতক তাদের কি বিচার হয়নি। তখন আামি তাকে বলেছি, এদের বিচার হয়েছে। সাধারণ আদালতেই এদের বিচার হয়েছে। এদের বিচারের রায় হাইকোর্ট হয়ে আপিল বিভাগ পর্যন্ত বলবৎ থেকেছে। পরে খুনিদের ফাঁসি হয়েছে। যারা পলাতক রয়েছে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে তাদের ধরে আনার।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার কথা হলো, এই যে আমাদের যে একটা বিশাল অর্জন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছি। এই কথা তো যারা বিদেশি মেহমান এসেছে। তাদেরকে বলতে পারিনি। এবং আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা এসেছে তাদের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরতে পারিনি। সুতরাং আমি বলবো এসব বিষয়ে আরও বেশি নজর দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি জাগ্রত করতে হয় তাহলে কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কথা আনতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো খুনিদের দেশ নয়, এটা বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশ। বঙ্গবন্ধুর এই সোনার দেশ অবশ্যই আমরা রক্ষা করবো। বিচার বিভাগ এ বিষয়ে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে আপনাদের কথা দিতে পারি।

আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রচিত ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ একজন যুদ্ধ শিশুর গল্প এবং অন্যান্য’ এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ‘বঙ্গবন্ধু সংবিধান আইন আদালত ও অন্যান্য’ দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বই দুটি প্রকাশ করে মাওলা বাদ্রার্স প্রকাশনী।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর, অ্যাটর্নি জেনারেল একে এম আমিন উদ্দিন, লেখক-সাহিত্যিক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু প্রমুখ।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by