রাজধানী

আম্মু কখন আসবে, প্রশ্ন রোজিনার ছোট্ট মেয়েটির

  প্রতিনিধি ১৯ মে ২০২১ , ৪:৪৪:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পন ডেস্কঃ

পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম।  গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের ছোট্ট ঘরে একরাত ইতোমধ্যে কেটে গেছে তার।  এর আগের রাত কেটেছে থানা হাজতে।

এদিকে রোজিনার পথ চেয়ে বসে আছে ৮ বছর বয়সী মেয়ে।  আম্মু কখন বাসায় ফিরবে, কখন খাবার খাইয়ে দেবে, কখন পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়াবে সেই অপেক্ষায় শিশুটি।

রোজিনার মেয়ে এখনও জানে না তার মা কারাবন্দি।  তাকে বলা হয়েছে রোজিনা ঢাকার বাইরে আছেন।  রোজিনার বড় ভাই মো. সেলিম এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, একমাত্র মেয়েটি রোজিনাকে ছাড়া কোনোভাবেই থাকতে পারে না।  মেয়েকে রোজিনার কারাগারে যাওয়ার বিষয়টি বলা হয়নি।  সোমবার রাত ও মঙ্গলবার সারাদিন পরিবারের সবাইকে মেয়েটি একই কথা বলতে থাকে, আম্মু কোথায়, আম্মু কবে আসবে? আমরা কোনোমতে তাকে বুঝ দিয়ে রেখেছি।

শিশুটির মা তার সত্যিই ঢাকার বাইরে আছেন, কাশিমপুর কারাগারে।  মেয়েটা জানে মা আছেন অফিসের কাজে।  এক অর্থে সেটাও সত্য।  নিজের প্রতিবেদন সংক্রান্ত কাজে সচিবালয়ে গিয়েই এখন প্রায় ১০০ বছরের পুরনো একটি আইনে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রোজিনা।

রোজিনার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মা ছাড়া থাকতে পারে না মেয়েটি।  রোজিনাও একই দশা।  মেয়ের একাকিত্ব দূর করতে তাদের পরিবারের সবাই এক জায়গায় থাকছেন।

পরিবার জানায়, রোজিনার বিষয়টি না জানাতে শিশুটিকে মোবাইল ও টিভি দেখতে দেওয়া হচ্ছে না।  পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার পর একবার মেয়ের সঙ্গে কথা বলানো হয় রোজিনাকে।  এ পাশ থেকে মেয়ে জানতে চায়, আম্মু তুমি কোথায়, কবে আসবে? রোজিনা ইসলাম বলেন, আম্মু, তুমি চিন্তা করো না। আমি একটু কাজে ঢাকার বাইরে এসেছি।  অফিসের কাজে এসেছি।  কাজ শেষ করেই চলে আসব।

রোজিনার ভাই সেলিম বলেন, আমার ভাগ্নি (রোজিনার মেয়ে) যাতে একা হয়ে না যায়, তার মাকে মিস না করে সেজন্য তার মামি, মামাতো ভাই-বোন, বাবাসহ পরিবারের সবাই একসঙ্গে আছি। আমরা পরিবারে একটি আনন্দঘন পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি, যাতে মেয়েটা আপাতত তার মায়ের কথা মনে না করে।

সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদন রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান।  সেখানে ফাইল চুরির অভিযোগ তুলে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।  একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।  রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়।

সোমবার রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়।  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী এ মামলা দায়ের করেন।  রোজিনার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ এনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এরপর ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে মঙ্গলবার সিএমএম আদালতে তোলা হয় এই সাংবাদিককে।  মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত রোজিনার রিমান্ড ও জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠান।  আগামীকাল বৃহস্পতিবার তার জামিন শুনানি হতে পারে।  আদালতের আদেশের পর রোজিনা ইসলামকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by