প্রতিনিধি ১৬ এপ্রিল ২০২১ , ৭:০৭:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ
রোজার শুরুতেই রাজশাহীতে তুঙ্গে উঠেছে আখের রসের চাহিদা। ঠা-ঠা রোদে পোড়া দিন শেষে ইফতারে তৃষ্ণা মেটাতে রোজাদারেরা ভিড় করছেন আখের রস বিক্রেতাদের কাছে। সবার চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম তিনদিন এমন চিত্রই দেখা গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গেট সংলগ্ন বিনোদপুর মোড়ে আখের রস বিক্রি করেন রমজান আলী (৪২)।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে তাঁর কাছে ভিড় বাড়তে থাকে মানুষের। রমজান যা আখ এনেছিলেন বিকাল ৪টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। ক্রেতার সংখ্যা এত বেশি ছিল যে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত আখ মাড়াই মেশিনের মাধ্যমে রস বের করে দিতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন রমজান আলী। এখানে আখের রস কিনতে গিয়ে হাবিবুর রহমান শেখ নামে এক ব্যক্তি বলেন, প্রতিবছরই তিনি ইফতারে আখের রস রাখেন। ইফতারে আখের রস আর লেবুর শরবত তাঁর তৃষ্ণা মেটায়। এবার রমজানে গরম আরও বেশি। তাই আখের রসের জন্যই ছুটে এসেছেন। রমজানের প্রতিটা দিন ইফতারে আখের রস রাখতে চান বলেও জানান হাবিবুর রহমান শেখ।
সব রস বিক্রি শেষে বিক্রেতা রমজান আলী বললেন, সারাবছরই তিনি এখানে আখের রস বিক্রি করেন। রমজান এলেই চাহিদা বেড়ে যায়। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। তাই ভেবেছিলেন চাহিদা আগের বছরের চেয়ে কমই হবে। কিন্তু দেখেন ভিন্ন চিত্র। আশপাশের পাড়া-মহল্লার মানুষ লকডাউন উপেক্ষা করেই তাঁর কাছে আসেন রস কিনতে। দুপুর ২টা থেকে ৪টার মধ্যেই তিন মণ আখের রস বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি গøাস রসের দাম ধরেছেন ১৫ টাকা করে।
মহানগরীর দড়িখড়বোনা মোড়ে আখের রস বিক্রি করেন মো. বাবু। দুপুরের পর তাঁর কাছেও ক্রেতাদের ভিড় জমে যায়। ভিড় সামলাতে বাবু তাঁর বাবা মো. খোকাকে ডেকে পাঠান। বাবু মেশিনে আখ থেকে রস বের করছিলেন। আর তাঁর বাবা রস ভরে দিচ্ছিলেন ক্রেতাদের বোতলে। রস বিক্রি নিয়ে বিকালে ভীষণ ব্যস্ততা দেখা যায় বাবা-ছেলের। ভিড় দেখা যায় ক্রেতাদের।
সময় যত গড়াচ্ছিল বাবুর আখের মজুতও কমে আসছিল। এই দেখে ক্রেতারা বাবুর বাবা খোকার কাছে বোতল জমা দিয়ে রাখছিলেন। অতিরিক্ত বোতল জমা পড়ে যাওয়ার পর যাঁরা আসছিলেন বাবু তাঁদের বলছিলেন, আর রস নেই। তাঁরপরও লোকজন অপেক্ষা করছিলেন। রস নেই শুনে স্থানীয় এক যুবক বললেন, ‘এলাকার ছেলেকে রস দিবা না? কাকে দিবা? এটা হয়?’ শেষে আগে বোতল জমা দেয়া ব্যক্তিদের একটু কম কম দিয়ে এই যুবককে রস দিলেন বাবু।
এই বিক্রেতা জানিয়েছেন, প্রতিদিন তিনি দুই মণ আখ মাড়াই করে রস বিক্রি করতে পারেন। রমজানে চাহিদা বাড়ে বলে এ দিন তিনি চার মণ আখ এনেছিলেন। কিন্তু এই আখের রস দিয়েও চাহিদা মেটানো যায়নি। পরদিন থেকে তিনি আরো বেশি আখ আনবেন।
বাবু জানান, তিনি যে আখের রস বিক্রি করেন সেগুলো রাজশাহীর নয়। বাইরের জেলা থেকে আনতে হয়। রস বিক্রি করে মহাজনকে টাকা দেন। সাধারণ সময় তিনি প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা লাভ করতে পারেন। এবার রমজানে লকডাউনের মধ্যেও রস বিক্রি করতে পারলে দিনে অন্তত দেড় হাজার টাকা করে লাভ হবে। এতে ঈদটা তাঁর ভালোভাবেই আসবে।