দেশজুড়ে

ইলিশ আহরণে মৎস্য আড়ৎ ও জেলেপল্লীতে চলছে প্রস্তুতি

  প্রতিনিধি ২ নভেম্বর ২০২৩ , ৮:১৪:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ

ইলিশ আহরণে মৎস্য আড়ৎ ও জেলেপল্লীতে চলছে প্রস্তুতি

মা ইলিশের বাধাহীন প্রজননের জন্য সকল প্রকার মৎস্য আহরণে ১১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ। বৃহস্পতিবার (২নভেম্বর) রাত ১২টার পর থেকেই দেশের সকল নদ-নদী ও সাগরে আবার শুরু হবে ইলিশসহ সবধরণের মাছ ধরার মহোৎসব। সেই লক্ষ্য নিয়ে বাগেরহাটের শরণখোলার মৎস্য আড়ৎ ও জেলেপল্লীতে চলছে জোর প্রস্তুতি। জেলেশ্রমিকরা দীর্ঘদিন অবসর সময় কাটিয়ে সাগরে যওয়ার উদ্দেশে তাদের নিজ নিজ মহাজনের আড়ৎ ও ট্রলার মালিকের গদিতে ফিরেছেন।

তবে এবারের ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা (অবরোধ) নিয়ে মৎস্যসংশ্লিষ্টরা দিলেন ভিন্ন তথ্য। তাদের দাবি, এবার অবরোধের সময় নির্ধারণ সঠিক হয়নি। মা ইলিশ ডিম ছাড়ে পূর্ণিমা গোনে। কিন্তু এবার অবরোধ দেওয়া হয়েছে অমাবষ্যার গোনে। ইলিশের প্রজননের জন্য অবরোধ দেওয়া হলেও অর্ধেক মা ইলিশও ডিম ছাড়তে পারেনি। অবরোধের পরেই এর প্রমান পাওয়া যাবে। এই অবরোধ ১১ অক্টোবরের পরিবর্তে আরো ১৫ দিন পিছিয়ে পূর্ণিমার গোনে দেওয়া উচিৎ ছিল বলে তারা মনে করেন।

বুধবার (১ নভেম্বর) দুপুরে শরণখোলার রাজৈর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য ট্রলার এসে ভিড়েছে ঘাটে। জেটিতে জাল, তেলের ড্রামসহ বিভিন্ন মালামালের স্তুপ। জেলেশ্রমিকরা সেগুলো তুলছেন ট্রলারে। আবার কেউ কেউ ঝুঁড়িতে করে বরফ নিয়ে ভরছেন ট্রলারের কুঠুরিতে। মহাজন, আড়ৎদার ও ট্রলরা মালিকরা নিজ নিজ গদিতে হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত।

এসময় জেলে-মহাজন ও আড়ৎদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নানা ক্ষোভ ও হতাশার কথা। জেলে মোস্তফা, সুজন, আসাদুজ্জামান, কুদ্দুস হাওলাদারসহ অনেকেই জানান, তারা অবরোধেই শেষ হয়ে গেছেন। ৬মসের ইলিশ মৌসুমের তিন মাসই থাকে অবরোধ। তার ওপর দফায় দফায় দুর্যোগে সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। প্রত্যেকে জেলে হাজার হাজার টাকা দেনাগ্রস্ত হয়ে পেড়েছেন। অবরোধকালীন সরকার তাদের যে খাদ্য সহায়তা দেয় তা খুবই সামান্য। তারা সহায়তা বৃদ্ধির দাবি জানান সরকারের কাছে।

এফবি মা-বাবার দোয়া ট্রলারের মাঝি ছগির হোসেন, এফবি সল্লাহ ট্রলারের মাঝি ডালিম পহলান, এফবি রূপসা ট্রলারের মাঝি আলম মিয়া ও এফবি খায়রুল ইসলাম ট্রলারের মাঝি কবির হোসেন জানান, অবরোধের সময় ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এতে দেশীয় জেলে-মহাজনরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছে ভিনদেশি জেলে-মহাজনরা। সরকার যদি মুধুমাত্র ২২ দিনের অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা) রেখে ৬৫ দিনের অবরোধ তুলে নেয় তাহলে তারা উপকৃত হতেন।

মৎস্য আড়ৎদার মজিবর তালুকদার ও কবির হাওলাদারের দাবি, মা ইলিশ মূলত পূর্ণিমার গোনে ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবারের ২২ দিনের অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা) দেওয়া হয়েছে অমাবষ্যার গোনে। পূর্ণিমার সময় ডিম ছাড়ার জন্য ঝাকে ঝাকে মা ইলিশ সাগর থেকে শাখা নদ-নদীতে উঠে আসে। এবারের অবরোধ সফল হয়েছে বলে মনে করছেন না তারা। বিশেষজ্ঞরাই বা কি ভেবে অমাবষ্যার গোনে অবরোধ দিল তাও তাদের বোধগম্য হচ্ছে না।

এই মৎস্য আড়ৎদাররা হতাশা প্রকাশ করে আরো জানান, তারা একেকজন ট্রলার মালিক ও আড়ৎদার এই মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এবছর ইলিশ কম ধরা পড়ায় তারা প্রত্যেকেই লোকসানে আছেন। তাদের এই লোকসানে পড়ার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ভরা মৌসুমে যখন বেশি ইলিশ ধরা পড়ে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়, ঠিত তখনই ৬৫ দিনের অবরোধ দেওয়া হয়। ওই সময় ভারতের জেলেরা এসে সমস্ত মাছ ধরে নিয়ে যায়। এতে দেশিয় জেলে-মহাজনরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সরকারও বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই ৬৫ দিনের অবরোধ না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

শরণখোলা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন জানান, তাদের সমিতির আওতায় তিন শতাধিক ট্রলার রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার চারটি ডকে দেড় শতাধিক ট্রলার মেরামত করে সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তু রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকেই এসব ট্রলার সাগরের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

শরণখোলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও শরণখোলার জেলে-মহাজনরা যথাযথভাবে নিষেধাজ্ঞা পালন করেছেন। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞাতা।

নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার আরো বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সরকার নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিধারণ করেছে। সেভাবেই নিষেধাজ্ঞা সফলে আমরা কাজ করেছি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by