সাদ্দাম হোসেন, ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধিঃ
যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় স্বামীর মারধরের শিকার হয়ে শশুর বাড়ি থেকে পারভীন আক্তার (২৩) নামে এক গৃহবধূ নিখোঁজের সাড়ে চার মাসেও সন্ধান মেলেনি। মেয়ের সন্ধানে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন নিখোঁজ পারভীন আক্তারের বাবা। আদালতে মামলা দায়েরের আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও পারভীন আক্তার বেঁচে আছে কি-না, মারা গেছে, অথবা কোথায় কার কাছে কেমন আছে? এসবের কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
পারভীন আক্তার জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চরপুটিমারী ইউনিয়নের চতলাপাড়া গ্রামের মো. আলিম উদ্দিনের মেয়ে। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর পাশ্ববর্তী শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলা ভেলুয়া ইউনিয়নের দষ্টিপাড়া গ্রামের আফছের আলীর ছেলে মো. শফি মণ্ডল (৩৫) এর সঙ্গে পারিবারিকভাবে পারভীন আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর নিজ বসতবাড়িতে মুদির দোকান দেয় শফি মণ্ডল। দোকানে মালামাল তোলা জন্যে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে স্ত্রী পারভীন আক্তারকে চাপ দেয় স্বামী শফি মণ্ডল। যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা জানালে পারভীন আক্তারকে দিনেরাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে শফি মণ্ডল এবং তার পরিবারের সদস্যরা।
এ নিয়ে সালিশ-বৈঠক হলে আর কোনো দিন স্ত্রী পারভীন আক্তারকে মারধোর করবে মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেকে দোষমুক্ত করেন শফি মণ্ডল। কিন্তু মাসখানেক পর পুনরায় দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সে। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় পারভীন আক্তারের ওপর নেমে আসে শশুর বাড়ির নির্যাতন।
এক পর্যায়ে গত ৩০ মার্চ যৌতুকের টাকার জন্য শফি মণ্ডল মারধোর করে স্ত্রী পারভীন আক্তারকে। খবর পেয়ে আলিম উদ্দিন মেয়ে পারভীন আক্তারকে উদ্ধারে জামাতা শফি মণ্ডলের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে পারভীন আক্তারের কোনো সন্ধান না পেয়ে শফি মণ্ডলকে প্রধান বিবাদী করে ৬ জনের নামোল্লেখে পরদিন ১ লা এপ্রিল শ্রীবরদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
কিন্তু অভিযোগ দায়েরের এক মাস পরও থানা পুলিশ প্রভাবশালী আসামিদের তদবিরে ঘটনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়নি। উপায়ান্তর না পেয়ে পরবর্তীতে গত ৩ মে শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জামাতা শফি মণ্ডলকে প্রধান আসামি করে দেবর, শশুর ও শাশুড়িসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আলিম উদ্দিন। মামলা নম্বর ১৭৮। মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) শেরপুর শাখায় তদন্তাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরপুর সিআইডি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোবাইলফোনে বলেন, ‘মামলাটির তদন্তের ভার আমার কাছে রয়েছে। তদন্ত চলছে।’ আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আদালতে দাখিল করা হয়নি।
শ্রীবরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস জানান, ‘ওই ঘটনাটি আমি এ থানায় যোগদান করার আগের। সেকারণেই নিখোঁজ গৃহবধূ পারভীন আক্তারের বিষয়টি আমি অবগত নই।’ শ্রীবরদী থানায় তৎকালীন দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) বর্তমানে শেরপুর সদর থানায় কর্মরত শফিকুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগের পেক্ষিতে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।
সেখানে পারভীন আক্তারকে না পেয়ে তার পরিবারকে আদালতে মামলা করতে পরামর্শ দিয়েছি।’ সরেজমিনে পারভীন আক্তারের শশুর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বসতবাড়িতে মুদির দোকানে বসে জিনিসপত্র বিক্রি করছেন শফি মণ্ডল। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেয়ে মুহূর্তেই সুকৌশলে সটকে পড়েন তিনি। এরপর অনেক চেষ্টা করেও শফি মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
শফি মণ্ডলের মা ছমিরন বেগম (৬০) বলেন, ‘পুত্রবধূ পারভীন ঘটনার দিন বিকালে আমাদের না জানিয়ে বাবার বাড়ি ইসলামপুরে চলে যায়। পথের মধ্যে অনেক লোকই পারভীনকে যেতে দেখেছে। এখন উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা ঢুকে দিয়েছে।’ আলিম উদ্দিন বলেন, ‘মেয়ের সন্ধানে হন্যে হয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজছি। মেয়ে বেঁচে আছে কি-না, সেটাও জানতে পারছি না। দীর্ঘদিনেও মেয়ে পারভীন আক্তারের খোঁজ না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ছি।