ফিচার

ইসলামে হজ্জের গুরুত্ব

  প্রতিনিধি ২২ জুন ২০২৩ , ৫:১০:০০ প্রিন্ট সংস্করণ


মুফতী আবুল কালাম আজাদ :


ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান হজ্জ। নবী করিম (সা:) ইরশাদ করেন ইসলামের মূল ভিত্তি হলো পাঁচটি (১) আল্লাহ তায়ালা এক এবং অদ্বিতীয় এবং মুহাম্মদ (সা:) তার প্রেরিত রসূল এই কথার সাক্ষ্য দেওয়া। (২) নামাজ আদায় করা। (৩) যাকাত প্রদান করা। (৪) বাইতুল্লাহ শরীফের হজ্জ করা। (৫) রমজানের রোজা রাখা। সু প্রিয় পাঠক মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন যত বিধান দিয়েছেন প্রত্যেকটি বিধানের সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে। দুনিয়াতে মানুষ যে ভাবে একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব করে। প্রথমে তাদের মাঝে একটি ওয়াদা হয়, যে আমি তোমাকে ভালোবাসি, কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবোনা। তারপরে যখন সম্পর্ক খুব ভালো হয় এখন যদি সে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছা করে তখন কিন্তু সাক্ষাৎ করতে পারে না কারণ দেখা
করতে হলে একটা বিশ্বাস প্রয়োজন তার জন্য, তখন একে অপরকে কাজ দেয় যখন সে কাজে পাশ হয় তখন মহাব্বত বেড়ে যায়। এখন দুজনের মাঝে মান অভিমান দেখা দিলে তারা না খেয়ে থাকে, পরে কথা বললে তাদের মাঝে মোহব্বত আরো বেড়ে যায়। এখন বন্ধুকে পরীক্ষা করতে তার নিকট কিছু চায়। এ সময় যদি পাশ করে তাহলে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে প্রস্তুত হয়। অনুরূপ ভাবে আল্লাহ তায়ালার সর্বোচ্চ ভালোবাসা তার সাক্ষাৎ পাওয়া অর্থাৎ সরাসরি তার সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করা। তার জন্য রয়েছে একটি ধারাবাহিকতা, আর আল্লাহ তায়ালা সেই ভাবেই বিধান দিয়েছন। মানুষ যেমন তার বন্ধুর সাথে প্রেমময় ওয়াদা করে তেমনি আল্লাহর সাথেও ওয়াদা করতে হয়, আর সেই ওয়াদার নাম হলো, লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, অথাৎ আল্লাহ ছাড়া আল্লাহ ছাড়া আর কাওকে ইলাহ বা মাবুদ মানি না। যখন এই ওয়াদা করা হয় তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর সাথে বান্দার বন্ধুত্ব শক্তিশালী হয়ে যায়। এখন আল্লাহ তায়ালাও পরিক্ষা নেন, যেমন মানুষ এক বন্ধু আরেক বন্ধুর পরিক্ষা নেন, কারন প্রকৃত বন্ধু তো সেই যে সুখে দুঃখে সবসময় পাশে থাকে। আল্লাহ বলেন যে ও বান্দা আমার জন্য কিছু করতে পারবে? বান্দা বলে হ্যাঁ পারবো। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তখন বলেন নামাজ আদায় কর। যখন কোন মানুষ এই কাজে পাশ করে, তখন বন্ধুত্ব আরো বেড়ে যায়। এখন সরাসরি কথা বলার অনুমতি চায়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলেন এখন না আরো পরিক্ষা আছে আসলে বন্ধুত্বের একটি পরিচয় হলো তাদের মাঝে মান অভিমানে খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া। আল্লাহ তায়ালাও তাই করেন, বান্দার ভালোবাসার প্রমাণ করতে গিয়ে রোজার বিধান দেওয়া হলো। মানুষ রোজা রাখা শুরু করে দিল। এখন চিন্তা করে এইবার হয়তো আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা হবে। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন বলেন যে না এখনও হয়নি, তুমি আমাকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে কিছু দেও, মানুষের একটি রীতি আছে মানুষ না খেয়ে থাকতে পারে কিন্তু কাওকে কিছু সহজে দিতে চায়না, তাই আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রিয়বস্তু মাল চেয়ে বসলেন আর তা হলো যাকাত। বান্দা ভালোবাসার প্রমান দিতে গিয়ে যাকাত আদায় করেন। এখন আল্লাহ পাক বলেন আস আমার দরবারে আস, হজ্জ করতে আস, আমার ঘরে আস। তাই তো হাজী সাহেবগন সেখানে গিয়ে কেবল একটি বাক্যই বলে। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক অর্থাৎ আমি হাজির হয়েছি ওগো আল্লাহ আমি আপনার নিকট হাজির হয়েছি। সরাসরি আল্লাহ তায়ালার সাথে কথোপকথন চলে। আর হজ্জ হলো আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম। যেমন হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর জন্য তার মা হযরত হাজেরা (আ:) এর পানির দৌড়া দৌড়ি করা। এটা আল্লাহ তায়ালার নিকট এতটা পছন্দ হয়েছে যে এটাকে নিজের পরিচয় বলে আখ্যা দিলেন তাই কিয়ামত পর্যন্ত যত হাজী সাহেবগন হজ্জ করতে আসবেন সকলে সাফা মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে দৌড়াতে হবে। কুরআনে এসেছে “নিঃসন্দেহে সাফা এবং মারওয়া আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। (সূরা বাকারা-১৫৯) আর এই হজ্জ করতে হয় নির্দিষ্ট সময়ে, আমার যখন মন চাইলো আর আমি হজ্জ করলাম তাতে হবে না, এবং এ সময়ে কোন নির্দিষ্ট বিধানাবলি ছাড়া আর কোন কাজ করা যাবে না কোন খারাপ কাজ করা যাবে না যে কাজ শরীয়ত গর্হিত সে কাজ করা যাবে না। এমনকি নিজের হালাল স্ত্রীকেও ব্যবহার করা যাবে না। কুরআনের ইরশাদ হয়েছে হজ্জের কয়েকটি মাস রয়েছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজ্জের পরি‌্যপূর্ণ নিয়ত করবে। তার পক্ষে স্ত্রীর সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। আশোভন কোন কাজ করা ঝগড়াÑবিবাদ করা হজ্জের সময় জায়েজ নয়। (সূরা বাকরা-১৯৭) উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হজ্জের মাহাতœ্য প্রকাশ করেছেন। এই সময়ে শুধু এক আল্লাহ ছাড়া আর কাওকে স্বরণ করার সুযোগ নাই । হজ্জ কার উপর ফরজ। যে ব্যাক্তির নিকট হজ্জের সফর পরিপূর্ণ করা এবং এই সময়ে পরিবারের লোকজনের খরচ বহন করার মাতো সামর্থ থাকে কোন ঋণ করতে না হয় তাহলে তার উপর হজ্জ ফরজ। যেমন আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলেন “আর এ ঘরের হজ্জ করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য, যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। (সূরা আল ইমরান-৯৭) সুতরাং সব ধরনের সামর্থ্য থাকতে হবে, টাকা পয়সা এবং চলাচল করার শক্তি থাকতে হবে। আমাদের অবস্থা তো এখন এমন হয়েছে যে যত দিন শক্তি আছে ততদিন হজ্জ করতে যাই না। অথচ যখন শরীরে পরিপূর্ণ শক্তি থাকে তখন যাওয়া প্রয়োজন। আর হজ্জ করতে যেমন কষ্ট হয় তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা হাজীদের জন্য রেখেছেন অনেক বড় সওয়াব।

মানুষ যখন হজ্জে যায় কাবা ঘরে এক রাকাত নামাজ আদায় করলে অন্য মসজিদে এক লক্ষ রাকাত নামাজ আদায় করার সওয়াব পাওয়া যায়। এবং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন হাজীদের প্রতি খুশি হয়ে তার জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। রহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহম্মদ (স:) ইরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুটির জন্য হজ্জ করল এবং কোন গোনাহের কাজ করলো না এবং ফাসেকি করলো না যখন সে হজ্জ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসবে তখন সে এমন নিষ্পাপ শিশুর ন্যয় র্ফিরে আসবে যে শিশু সবে মাত্র ভুমিষ্ট হলো। (সহীহ বোখারী ও মুসলিম) তাহলে একটু চিন্তা করে দেখুন আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন হাজীদের প্রতি কি পরিমান খুশি হন যে তার জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। নবী করিম (স:) আরো ইরশাদ করেন যে তোমরা হজ্জ এবং ওমরা এক সাথে কর। কারণ এই দুইটা দরিদ্রতা দূর করে এবং জীবনকে গোনাহ মুক্ত করে দেয়। (তিরমিজি, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ) আমরা মনে করি যে হজ্জে গেলে অনেক টাকা ব্যয় হয়। এত টাকা খরচ করলে আমি দরিদ্র হয়ে যাবো। প্রিয় বন্ধুগন আসলে বাহ্যিক ভাবে তা মনে হলেও বাস্তবে তার বিপরীত। কারণ নবী করিম (সা:) ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি হজ্জ এবং ওমরাহ করেন আল্লাহ তায়ালা তার সম্পদে বরকত দান করেন। এবং দাবিদ্রতা দূর করে দেন। উপরোক্ত হাদীস দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়। তবে সেই হজ্জ হতে হবে একমাত্র এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, যদি আমরা এই নিয়তে হজ্জ করি যে সবাই আমাকে হাজী সাহেব বলবে তাহলে সেই সওয়াব পাওয়া যাবে না। লোক দেখানোর জন্য হজ্জ করা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা আল্লাহর জন্যই হজ্জ এবং ওমরা পালন কর। (সুরা বাকারা-১৯৬) সুতরাং হজ্জ করতে হবে আল্লাহ তায়ালা কে রার্জী আর খুশি করানোর জন্য। আল্লাহ তায়ালা এবং রসূল (স:) হাজী সাহেব গনের পক্ষে যেমন সুসংবাদ দিয়েছেন, তেমনি যাদের উপর হজ্জ ফরজ হওয়া সত্বেও হজ্জ আদায় করলোনা তাদের প্রতি রাগ প্রকাশ করেছেন এবং ধমকিও দিয়েছেন। রহমতুল্লিল আলামীন হযরত মুহম্মদ (স:) ইরশাদ করেন যে ব্যাক্তির উপর হজ্জ ফরজ হওয়া সত্বেও হজ্জ আদায় করলো না এবং এমন অবস্থায় মারা গেল, তাহলে চাই সে ইয়াহুদি হয়ে মারা যাক বা নাসারা হয়ে মারা যাক (মিশকাত) অর্থাৎ এমন ব্যক্তি মারা যাওয়ার সময় চাই তার কালিমা নসিব হোক বা না হোক এতে আমার কোন দুঃখ নেই। চিন্তা করে দেখুন যে মায়ার নবী একটি উম্মতের ইমানের জন্য পাগল পারা হয়ে যায় সেই রহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহম্মদ (স:) বলেন তার জন্য আমার দুঃখ নেই। সুতরাং যাদের উপর হজ্জ ফরজ হয়েছে তারা যেন অবশ্যই হজ্জ করতে পারে আল্লাহ তায়ালা সেই তাওফিক দান করুন। একজন মানুষ নিষ্পাপ হওয়ার জন্য সহজ উপায় হলো হজ্জ করা। হজ্জ করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে বেগুনাহ মা’সুম বানিয়ে দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে হজ্জে মাবরুর দান করেন।

Powered by