প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২০ , ১:৫৮:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ
আরিফুজ্জামান, কুষ্টিয়া :
কুষ্টিয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন না মেনেই চলছে ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ। ফলে মেশিনের তীব্র আলোতে মানুষের দৃষ্টি শক্তি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শহরের যত্র তত্র শতাধিক কারখানা চালু থাকলেও কুষ্টিয়া পৌরসভা হতে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন মাত্র ৪৭জন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ১৯৯৫ সালের ১২ধারা অনুযায়ী ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ চালাতে হলে অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়।
নির্দিষ্ট কিছু শর্তপূরণ সাপেক্ষে ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ চালানোর অনুমতি দেয়া হয়। সেসবের কোন কিছুরই তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে কুষ্টিয়ায় গড়ে তোলা হচ্ছে ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ। ফলে দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সিনিয়র কনসালটেন্স (চক্ষু) ডাক্তার মঈন উদদীন আহমদ বলেছেন, ওয়েল্ডিং এর সময় যে আলো বিচ্ছুরিত হয় তা “আল্টা ভায়েট রে”। খালি চোখে এ আলো দেখলে কিছু সময় পরে চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লালসহ তীব্র জ্বালা যন্ত্রনা করে, আলো সহ্য হয় না। একে “এআরসি বা ওয়েল্ডার ফ্লাস” বলে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেছেন, ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ পরিবেশ অধিদপ্তরের “ক-কমলা” শ্রেনি ভুক্ত। ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ চালাতে হলে পরিবেশ অধিদপপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। সু নির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, ঝালাই কাজ ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপের বাইরে পরিচালনা করা যাবে না। ওয়েল্ডিং করার সময় অবশ্যই কালো কাপড়ের পর্দা বেড়া হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে অনেকদিন যাবৎ ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ মালিকগন ছাড়পত্রের জন্য কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিসে যোগাযোগ করে না। ফলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুষ্টিয়া শহরের কিছু ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন মানলেও অধিকাংশ ওয়ার্কশপ কোনরকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কালো কাপড়ের ঘেরা বেড়া দেওয়া ছাড়াই সন্ধ্যার পর কুষ্টিয়া পৌরসভার রাস্তার উপরেই ঝালাই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
শহরের বাবর আলী গেট হতে পৌর বাজার পর্যন্ত রেল লাইনের দক্ষিণ পাশে পৌর রাস্তার ১০০ গজের মধ্যে ৫টি ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ রাস্তার উপরেই ঝালাই কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ গুলোর কোনটিরই অনুমোদন নেই। এ ছাড়া শহরের প্রতিটি রাস্তা সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে শত শত ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ চালু আছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত লাইসেন্স ইন্সপেক্টর মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ৪৭টি ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ কে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছি।অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তর। নিয়ম মেনে কালো কাপড় দিয়ে ঘিরে ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ চালাতে হবে।
অবৈধ ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্রের প্রয়োজন আছে কিনা এবিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। কুষ্টিয়া বাবর আলী গেটের পশ্চিম পাশের রেল ধারের মসজিদ ই-নূরের সামনে অবস্থিত ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপের মালিক ইসলাম বলেছেন, আমি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছি। দোকানের জায়গা কম হওয়ায় বাইরে কাজ করতে বাধ্য হই। কালো কাপড় দিয়ে কাজ করার নিয়ম থাকলেও সব সময় হয়ে ওঠে না।
কুষ্টিয়া ওজোপাডিকো লিঃ বিক্রয় ও বিতরন ১ এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী প্রনব চন্দ্র দেবনাথ বলেছেন, অনেকেই দোকান ঘরের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে পরবর্তিতে ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ পরিচালনা করছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার থাকেনা।তবে আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর কে প্রয়োজনে সহযোগিতা করবো।