বাংলাদেশ

খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, পুরোপুরি সুস্থ নন: চিকিৎসক

  প্রতিনিধি ২০ জুন ২০২১ , ৮:০৮:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, তবে তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন বলে জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, এখন থেকে তাঁর চিকিৎসা বাসায় চলবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে যেকোনো সময় আবারও হাসপাতালে নেওয়া হতে পারে।

শনিবার রাত নয়টার দিকে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজার সামনে ডা. এফ এম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে খালেদা জিয়া কিছু জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত হচ্ছিলেন। আমরা তার রক্ত পরীক্ষা করে বুঝতে পেরেছি। এ সংক্রমণ তার বর্তমান স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) অবস্থাকে বিনষ্ট করতে পারে। এ আশংকায় তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও দুই দিন ধরে কিছু নার্স, ডাক্তার, স্টাফ ডেলটা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন।  হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ অবস্থায় হাসপাতালে রাখা ওনার জন্য ঝুঁকিটা অনেক বেশি। এর মধ্যে পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়াকে সারা জীবনে রক্ত দেওয়ার নজির নেই।

এর আগে ৫৩ দিন পর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে শনিবার গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ছাড়পত্র পাওয়ার পর রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে হাসপাতাল থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। ‘ফিরোজায়’ পৌঁছান রাত সাড়ে ৮টার দিকে।

তিনি বলেন, আমরা বলছি যে, খালেদা জিয়া স্ট্যাবল (স্থিতিশীল)৷ মানে হচ্ছে তার যে আসল অসুখগুলো ছিল, সেটা স্থিতাবস্থায় এসেছে। আমরা বলছি না, তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাসায় এসেছেন। তার হার্ট ও কিডনি ও লিভারের জটিলতা যেগুলো কোভিডের কারণে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল, সেগুলো থেকে উত্তরণ ঘটেছে। কিন্তু সেই অসুস্থতাগুলো এখনও রয়েই গেছে।

ডা. সিদ্দিকী বলেন, তার চিকিৎসার জন্য যে টেকনোলজি, প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া দরকার, সেগুলো আমরা কিন্তু এখনো পরিপূর্ণভাবে করতে পারিনি। যে জন্য একটা রিস্ক (ঝুঁকি) থেকেই যাচ্ছে। এখন আমরা প্ল্যান (পরিকল্পনা) করেছি, তাকে বাসায় রাখব। কিন্তু এমনও হতে পারে তাকে আগামী দুই বা তিন সপ্তাহ পরে আবার হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিভিউ করার প্রয়োজন হতে পারে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার লিভারের যে সমস্যা, এর জন্য যে চিকিৎসা এবং চিকিৎসায় উন্নত যে টেকনোলজি (প্রযুক্তি) প্রয়োজন, সেগুলো আমাদের দেশে নেই। তার লিভারের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।

মেডিকেল বোর্ডের প্রধান আরও বলেন, ওনাকে (খালেদা জিয়া) হাসপাতালে নেওয়ার পর সিটি স্ক্যানসহ সব ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়।  প্রথম দেখা গেল ওনার বুকে পানি এসেছে, এটা হার্ট ফেইলিউর–সংক্রান্ত। করোনার একটা জটিলতা হচ্ছে হার্ট ফেইলিউর হতে পারে। প্রথম তিন দিন চিকৎসা দেওয়ার পর ওনার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও তারপরই উনি জ্বরে আবার আক্রান্ত হলেন। বুকে আবার পানি এল। একদিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেল। এ অবস্থায় সিসিইউতে নিয়ে গিয়ে দেখা গেল, অর্ধেক বুক পানিতে ভরে গেছে। চেস্ট টিউব দিয়ে বের করি। দেখা গেল পানি না রক্ত। প্রায় ১৮ দিন চেস্ট টিউবে পানি নিঃসরণ করা হয়। ভেন্টিলেটরে দেওয়ার জন্য পরিবারেরর মতও নেওয়া হয়েছিল। ৭ লিটারের মতো পানি বের করা হয়। পরীক্ষার সময় দেখতে পেয়েছি, হার্ট ফেইলিউর, কিডনি সমস্যা ছিল। লিভারেরও সমস্যা ছিল।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, হাসপাতালে থাকলে ইনফেকশন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও চিকিৎসকরা মনে করছেন। সে কারণেই তারা তাকে (খালেদা জিয়া) বাসায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেবেন।

খালেদা জিয়া গত ২৭ এপ্রিল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। ৬ দিন পর (৩ মে) তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয় তাকে। পরে অবস্থার উন্নতি হলে এক মাস পর গত ৩ জুন চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে কেবিন ফিরিয়ে আনা হয়। এ সময় দু’দফা  খালেদা জিয়া জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে তার জ্বর নিয়ন্ত্রণে আসে।  গত ১৪ এপ্রিল গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা‘য় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। করোনামুক্ত হন ৯ মে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, শনিবার দুপুরে মেডিকেল বোর্ড নিয়মিত ফলোআপ বৈঠক করেন। খালেদা জিয়াকে বাসায় নেওয়ার বিষয়ে সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by