রাজশাহী

খাল বিল-নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা

  প্রতিনিধি ১৫ অক্টোবর ২০২১ , ৭:৫৯:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

বসন্ত দাস, বেড়া (পাবনা) : খাল বিল-নদীতে ফোটে ওষুধি গুনে সমৃদ্ধ নানা প্রজাতির শাপলা ফুল। এর মধ্যে নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর লাল ও বেগুণী শাপলা ফুলের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। আবহমান কাল থেকেই শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। গ্রাম-গঞ্জের হাট বাজারে পাওয়া যেত শাপলা ফুলের মধু (পদ্ম মধু) শালুক আর ঢেঁপের খইয়ের মোয়া। শুকনো মওসুমে বিল ঝিল-নদী-জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির শাপলা।

বর্ষাকাল শুরু থেকে শরৎকালের শেষভাগ এ সময় পর্যন্ত গ্রামবাংলার খাল বিল-নদীতে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকত নয়নাভিরাম লাল, নীল, বেগুণী ও সাদা শাপলা। বর্ষার শুরুতে শাপলার জন্ম। হেমন্তের শিশিরভেজা রোধ মাখা সকালে বিলে চোখ পড়লে রং-বেরঙের শাপলার বাহারী রুপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। মনে হত কোন এক সাজানো ফুল বাগানের মধ্যে শ্রষ্টার শ্রেষ্ট জীব হিসেবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি। শাপলার নয়নাভিরাম এ দৃশ্য প্রকৃতি প্রেমিদের কাছে টানে। শাপলা ফুলের আর এক নাম পদ্ম।

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় দুর্গোৎসব পূজো অনুষ্ঠিত হয় শরৎকালে। শরৎকালে এ পূজো অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে নামকরণ করা হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। দেবী দুর্গার পূজো দিতে শাস্ত্র মতে ১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে দেবীর আরাধনা করতে হয়। এক সময় এই ফুল সহজেই পাওয়া যেত। এখন এই ফুল সংগ্রহ করতে পূজোর আয়োজকদের হিমসিম খেতে হয়। ১০৮টি নীল পদ্ম না হলে পূজো অসম্পূর্ণ হয়ে যাবে এজন্য তারা দূর-দূরান্ত থেকে নীল পদ্ম সংগ্রহ করে আনেন।

জানা যায়, সাদা বর্ণের শাপলা সবজি হিসেবে এবং লাল রঙের শাপলা ওষুধি গুণে সমৃদ্ধ। ছোটদের কাছে শাপলা ফুল খুবই প্রিয়। বাড়তি জনসংখ্যার চাপে বিল বাওর জমি ভরাট করে বড়ি তৈরি করা হচ্ছে। জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল আবাদে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ, মৎস্য চাষ, জলবায়ু পরিবর্তন, অবৈধ দখল ও শুকিয়ে যাওয়ার কারণে খাল নদী-বিল থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে শাপলা ফুল। আগে অনেকেই সৌন্দর্য্যরে জন্য পুকুরে চাষ করতেন লাল শাপলা। বর্তমানে পুকুরে মাছ চাষ হওয়ায় লাল ও বেগুণী শাপলা হারিয়ে যেতে বসেছে। আগে গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারে পাওয়া যেত ঢেঁপের খই মোয়া। এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না পদ্ম মধু ও সুস্বাদু ঢেঁপের খইয়ের মোয়া।

অতীতকাল থেকেই শাপলার ফল দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খই ভাজা হয়। যেটি গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে ঢ্যাঁপের খই নামে পরিচিত। শাপলার মাটিটর নিচের মূল অংশকে শালুক বলে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিলের পানি কমে যায় তখন অভাবী মানুষ শালুক তুলে বাজারে বিক্রি করে। সেদ্ধ শালুক বেশ সুস্বাদু।

বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মসকর আলী জানান, শাপলা তিন প্রকারের হয়ে থাকে। সাদা, বেগুণী ও লাল রঙের। এরমধ্যে সাদাফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে এবং লাল রঙের শাপলা ওষুধি কাজে ব্যবহার হয়। শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক সবজির চেয়ে শাপলার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাত গুন বেশি। খাল বিল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বাণিজ্যিকভাবে শাপলার চাষ না হওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে শাপলা।

 

Powered by