দেশজুড়ে

খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই ‘প্রজাপতি পোল’

  প্রতিনিধি ৯ এপ্রিল ২০২১ , ৬:৪১:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

রফিকুল হাসান ফিরোজ, রাজশাহী :

মাত্র ৬৫ কিলোমিটার গতিবেগের ধুলিঝড়ে উপড়ে পড়া রাজশাহীর সড়কবাতিগুলো (প্রজাপতি পোল) খুলে নিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদেরর লোকজন। ফলে শহরের বিলশিমলা থেকে কাশিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কটির বিভাজন আবারো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। গত বুধবার থেকে সড়কবাতির খুঁটিগুলো খোলার কাজ শুরু হয়েছে। গত ১১ ফেব্রæয়ারি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সড়কবাতিগুলোর উদ্বোধন করেছিলেন। এর দেড় মাসের মাথায় ৪ এপ্রিল মৌসুমের প্রথম ঝড়ে অন্তত ৮৬টি সড়কবাতির খুঁটি হেলে পড়ে। এর মধ্যে অন্তত ৪০টি সড়ক বিভাজনের ভেতরে পড়ে যায়। কোন কোনটি আছড়ে পড়ে সড়কে। সড়কটিতে মোট ১৭৪টি খুঁটি বসানো হয়েছিল। প্রতিটিতে ছিল দুটি করে এলইডি বাতি।

রাসিকের এই সড়কবাতি বসানোর কাজটি পেয়েছিল ‘হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে, কংক্রিটের যে স্তম্ভের ওপর খুঁটিগুলো বসানো হয়েছিল সেটি সিডিউল অনুযায়ী হয়নি। আকারে ছোট সেই স্তম্ভটি সামান্য একটুই মাটিতে পুঁতেছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বেলে মাটির ওপর স্তম্ভটি কম করে পোঁতার কারণে ঝড়ে সেটি গোড়া থেকেই উপড়ে যায়।

 

এর পরদিন সোমবার রাসিক মেয়র লিটন সরেজমিনে খুঁটিগুলো পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি খুঁটিগুলোর সবই তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর কংক্রিটের স্তম্ভটি বেশি করে পোঁতার পর তার ওপরে আবারও খুঁটিগুলো স্থাপনের নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী বুধবার থেকে খুঁটিগুলো কংক্রিটের কাঠামো থেকে খুলে ফেলা হচ্ছে। শুক্রবারের মধ্যেই সব খুঁটি খুলে নেয়ার কথা রয়েছে।

 

বুধবার বিকালে মহানগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকায় দুটি ক্রেনের সাহায্যে খুঁটিগুলো খুলে ফেলছিলেন শ্রমিকেরা। তারা জানান, সড়কবাতির খুঁটিগুলো খুলে মহানগরীর সিটিহাট এলাকার এক গুদামে রাখা হচ্ছে। সব খুঁটি সরিয়ে নেয়ার পর কংক্রিটের কাঠামোটি তোলা হবে। তারপর সেটি আরও একটু বেশি করে মাটির নিচে পোতা হবে। পরে সড়কবাতির খুঁটিগুলো এনে কংক্রিটের কাঠামোর ওপর আবারো স্থাপন করা হবে।
সিটি কর্পোরেশন বলছে, এই কাজের শর্ত অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে কোন ক্ষতি হলে তা নিজ খরচে ঠিক করে দেবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যেহেতু ত্রæটি থাকার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকেই আবার সবকিছু নতুন করে বসাতে বলা হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে।

 

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত¡াধিকারী আশরাফুল হুদা টিটো বলেন, কংক্রিটের কাঠামোটি বেশি করে পুঁতে দিলে সড়কবাতির দৃষ্টিনন্দন নিচের অংশটি আইল্যান্ডে ঢাকা পড়ছিল। ওপরের প্রজাপতির মতো অংশটিও নিচু হয়ে যাচ্ছিল। সে কারণে কংক্রিটের কাঠামোটি কম করে পোতা হয়েছিল। এখন মেয়র আবারো নতুন করে কাঠামোটি তুলে আরো বেশি করে মাটির নিচে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা তাঁর।

প্রসঙ্গত, হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন এর আগে রাসিকের ১৬টি ফ্লাড লাইট বসানোর কাজ করেছে। ৯ কোটি ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৭ টাকা ব্যয়ে মহানগরীর ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফ্লাড লাইটগুলো বসানো হয়েছে। এই কাজেই ছয় কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। এর মধ্যেই ৫ কোটি ২২ লাখ টাকার প্রজাপতি সড়কবাতি বসানোর কাজ পায় এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে রাজশাহীতে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by