ঢাকা

গাজীপুরে বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ

  প্রতিনিধি ২ মে ২০২১ , ৭:৪৬:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

মঞ্জুর হোসেন মিলন, গাজীপুর:

গাজীপুরে সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নির্মাণে বন বিভাগ আপত্তি জানিয়েছে। বিনা অনুমতিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণকাজ শুরু করলে শালবনের ক্ষতি রোধে এই আপত্তি জানান বন বিভাগ।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ উপেক্ষা করে গাজীপুর নগরীর হাতিয়াব ময়লার টেক থেকে কালিঘাট কালভার্ট পর্যন্ত গাজীপুর সমরাস্ত্র কারখানা-রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস সড়কে ৩৩ কেভি ভোল্টের বিদ্যুতের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। বন আইনের তোয়াক্কা না করে লাইন নির্মাণের কারণে বন ও পরিবেশের ক্ষতিরোধকল্পে বনের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের কাজ বন্ধ করে দেয় বন বিভাগ। কয়েকদিন ধরে খুঁটি স্থাপন ও সঞ্চালন লাইনে তার টানানো ঠেকাতে বনকর্মীরা নজর রাখছে হাতিয়াব সড়কে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘বন ও পরিবেশের ক্ষতিরোধকল্পে বনের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ লাইন এবং রাস্তা নির্মাণসহ যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নের পূর্বে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শক্রমে প্রকল্প প্রণয়নের জন্য সুপারিশ করা হয়।’ এছাড়া গাজীপুর জেলা প্রশাসন বিগত ২০১৭ সালে সিদ্ধান্ত হয়, বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও বন বিভাগের গাছ কর্তনে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে বন বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। সংরক্ষিত বনভূমির ওপর দিয়ে কোনো বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ স্থাপন অথবা বিদ্যমান বৈদ্যুতিক লাইনের নিরাপত্তা সংরক্ষণ বা অন্য কোনো কারণে সংরক্ষিত বনের কোন গাছ সম্পূর্ণভাবে কাটার প্রয়োজন হলে বন বিভাগকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।

ঢাকা বন বিভাগের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের সালনা বিট কাম চেক স্টেশন অফিসার মো: বিপ্লব হোসেন জানান, অনুমোদন না নিয়েই পাকা সড়ক সংলগ্ন শাল বনের ভেতরে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করে নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের চেষ্টা করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড।

ইতোমধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের একপাশে শাল বনের ভেতর ৩৩টি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। খুঁটিগুলোতে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ তার টানানোর চেষ্টা করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের লোকজন।

ওই খুঁটিগুলোতে ৩৩ কেভি ভোল্টের বিদ্যুতের লাইন সচল হলে অগণিত শালগাছ কাটা পড়ার পাশাপাশি খুঁটির আশপাশের গাছগুলো বেড়ে ওঠার সুযোগ ব্যাহত হবে। কারণ, বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ও সিস্টেম লজ এড়াতে সঞ্চালন লাইন গাছ-পালার সংস্পর্শমুক্ত রাখে বিদ্যুৎ বিভাগ। তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয়ের অনুমোতি না নিয়ে বনের ভেতর বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন কিংবা নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন নির্মাণের সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, বন ধ্বংস হওয়ায় পরিবেশের ওপর ঝুঁকি বাড়ছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং জবরদখলের কারণে গাজীপুরের প্রাকৃতিক বন ও পরিবেশের ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। পল্লীবিদ্যুৎ গাজীপুরের প্রাকৃতিক ও সংরক্ষিত বনভূমির ভেতর দিয়ে উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎবাহী সঞ্চালন লাইন নির্মাণের বিষয়টি উদ্বেগজনক। বনাঞ্চলে অপরিকল্পিত উন্নয়নে বন ধ্বংস ও বণ্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বনের ভেতর দিয়ে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের ব্যাপারে বন বিভাগ আপত্তি তুলেছে। আমরাও তাঁদের অবস্থান সমর্থন করে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলব, বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা অবশ্যই প্রয়োজনীয় কাজ।

তবে বনভূমির ক্ষতি না করে সঞ্চালন লাইনটি বসানোর বিকল্প পথ খুঁজে নেয়া উচিৎ। একসময় গাজীপুরের জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ ভাওয়াল অঞ্চল বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ছিল। বন আইন অনুযায়ী এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণে বন ও পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুজন শাহা সাংবাদিকদের জানান, ২০ কিলোমিটার সড়কে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৩ কেভি ভোল্টের নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মিত হচ্ছে। এতে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক। বনের ভেতর দিয়ে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন বিষয়ে তিনি জানান, লিখিত অনুমোদনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া চলমান আছে।

বন অধিদপ্তর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সিএফ মো: মনিরুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রীপরিষদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত রয়েছে বনাঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে এসংক্রান্ত বিষয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়া বন বিভাগ কোনোভাবেই বিদ্যুতের লাইন বা স্থাপনা নির্মাণ করতে দিতে পারে না।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by