ময়মনসিংহ

জামালপুরে লকডাউনে যৌনপল্লীতে খাবারের হাহাকার

  প্রতিনিধি ৫ জুলাই ২০২১ , ৫:৪০:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

খদ্দের নেই। ঘরে নেই খাবার। পায়নি সরকারি-বেসরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও। ঘর ভাড়া নিয়ে চোখেমুখে দেখছেন অন্ধকার। চলতি লকডাউনে এভাবেই কাটছে যৌনকর্মীদের দুর্বিষহ জীবন।

 

জামালপুর শহরের রানীগঞ্জ যৌনপল্লীর বাসিন্দা মালা বলেন, ৪ দিন ধরে লকডাউন। পল্লীতে খদ্দের আসে না। কামাই-রোজগার একদম নাই। ঘরে খাবার নাই। ঋণ করে খেয়ে না খেয়ে কোনমতে দিন পার করছি।

ঘর থেকে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলেন ৩৫ বছর বয়সী যৌনকর্মী বেবী। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘ক্ষিধার জ্বালা আমরা সহ্য করি। কিন্তু পুলাপান ক্ষিধায় কান্নাকাটি করে। ওগোর মুখের দিকে তাকাতে পারি না। কেউর কাছে চামু, হগলের একই অবস্থা।’

পল্লীর সরু গলিতে পান দোকানে বসে আছেন রঙ্গমালা। বয়স ৪০। চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই বলে উঠলেন, ‘আমগো খবর কে রাখে! ৪ দিন ধরে লকডাউন। খদ্দের না থাকায় কামাই করতে পারতেছি না। আমাগো খুব কষ্ট। পেঠে খাবার নাই। এখানকার অনেক মানুষ না খাইয়াই থাকে।’

তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ একবেলা আধপেট খাইয়া ক্ষিধার জ্বালা মেটায়। অনেকে গলির ধারে বসে ক্ষিধার জ্বালায় কান্দাকাটি করে। আমগো কষ্ট দেহার কেউ নাই। এ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোন সায্য-সহযোগিতা পাই নাই।’

জামালপুর শহরের দয়াময়ী পাড়া এলাকায় রানীগঞ্জ যৌনপল্লীতে রোববার (৪ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পল্লীর চারপাশ সুনশান নীরবতা। ময়লা অবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চারপাশে। নোংরা পুতিময় গন্ধেই এদের বসবাস। চলতি লকডাউনে নেই খদ্দেরের আনাগোনা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে থাকা যৌনকর্মীরা কাটাচ্ছে অলস সময়। তাদের চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে শুকনো মুখগুলো।

তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই যৌনপল্লীতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মিলে ৫ শতাধিক লোকের বসবাস। কর্মহীন যৌনকর্মীদের ঘরে ঘরে অভাব দেখা দিয়েছে। খাদ্যের অভাবে খুবই কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে তারা। পল্লীর অভ্যন্তরে কারো কাছে সাহায্যপ্রাপ্তিরও অবস্থা নেই। সকলেরই একই অবস্থা।

বয়স্ক যৌন্যকর্মীদের অবস্থা আরো খারাপ। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সেখানে এগিয়ে যায়নি সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কেউই। ক্ষুধার্ত যৌনকর্মীরা জেলা প্রশাসন ও পৌরসভাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে দ্রুত সাহায্য চেয়েছেন।

জামালপুর পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, কর্মহীন অসহায় যৌনকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। পৌরসভার পক্ষ থেকে দ্রুত খাদ্যের সমস্যা সমাধান করা হবে। কোনো যৌনকর্মী না খেয়ে থাকবেন না। ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানালেন পৌর মেয়র।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান জানিয়েছেন, কর্মহীন যৌনকর্মীদের খাদ্যের সমস্যা জানতে পারলাম। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by