রংপুর

তিস্তার চরে আগাম আলু রোপণে ব্যাস্ত চাষিরা

  প্রতিনিধি ২২ অক্টোবর ২০২৩ , ৩:৫৬:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

তিস্তার চরে আগাম আলু রোপণে ব্যাস্ত চাষিরা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলের আগাম জাতের আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখানকার কৃষকরা আগাম আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে চরের মাঠ জুড়ে সময়ের আগে আলু রোপণকে ঘিরে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। চরাঞ্চল গুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা আলু চাষে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে বেশীর ভাগ জমিতে নারী শ্রমিকেরা আলু রোপণের কাজ করছেন। দম ফেলানোর সময় নেই তাদের।

জানা গেছে, উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নের বিভিন্ন চরাঞ্চলে এ জেড ৭হাজার৬, ব্রি-৭১, ব্রি-৭৫, ব্রি-৮৭ ও বীনা-৭ জাতের ধানসহ স্বল্পমেয়াদী আগাম জাতের আমন ধান লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে ধান কাটা ও মাড়াই প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

উপজেলা কৃষি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা প্রায় ৭’শ ২০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছিল প্রায় ৮’শ ৯০ হেক্টর। লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৭০ হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছিল। এ অর্থবছরে আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আগাম জাতের আলু চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার তিস্তার চর বেষ্টিত একাকা গুলোর মধ্যে গোড়াইপিয়ার চর, আম্নিআষারের চর, জুয়ান সতরার চর, দরিকিশোরপুরের চর, টিপমার চর, শুকদেবকুন্ডের চর, বজরা চর, সাতালস্কারের চর সহ আরও অনেক এলাকা ঘুরে দেখা যায় তিস্তার চর বেষ্টিত এলাকা গুলোতে আগাম জাতের আলু চাষে ব্যাস্ত সময় পার করছেন আলু চাষিরা। তারা আগাম আলু চাষ করে ভালো দামে বাজারে বিক্রি করার আশায় আলু চাষে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। আলু চাষ করার পর শরিষা, গম, পিয়াজ সহ বিভিন্ন ধরনের শস্য ফলাবেন।

কৃষকরা জানান, চলতি বছরে দু’দফায় বন্যায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিস্তার নিকটবর্তী গ্রামের কৃষকরা। ফলে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে তারা আগাম আলু চাষের প্রস্তুুতি নিয়েছেন। তবে এবার তুলনামূলক আলুর বীজ, সার ও কীটনাশক এর মূল্য বেশি হওয়ায় আলু চাষে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আলুর বাজার দর তুলুনামূলক বেশি থাকায় আগাম জাতের আলু আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন তারা।

উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার জুয়ান সতরার চরের আগাম জাতের আলু চাষি হাফিজুর রহমান (৩৮) জানান, এবারে ৪ একর জমিতে আলুর চাষ করতেছি। তার মধ্যে ২ একর জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করা প্রায় শেষের পথে। আগাম জাতের আলু প্রায় ৬০ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। এবারে আলুর বীজ সহ সার ও কীটনাশক এর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় একর প্রতি খরচ হবে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে ফলন ভালো হলে একর প্রতি আলুর আশা করছেন প্রায় ১’শ ৫০ মণ। বাজারে ১৬’শ টাকা মণ থাকলে প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা হয়। যা খরচের থেকে দ্বিগুন লাভ করা সম্ভব।

বিভিন্ন এলাকার আগাম জাতের আলু চাষি আশরাফুল, মফিজ মিয়া, মিন্টু মিয়া, মতিন ও রঞ্জু মিয়া সহ আরও অনেকে জানান, আমরা চরের মানুষ। এখানকার মাটিতে সকল আবাদ হয়। তবে আলু, বাদাম, মরিচ, পেঁয়াজ এই ফসলগুলা ভালো হয়। এখন চরে আগাম জাতের আলু লাগাচ্ছি। কারণ এই আলু আগাম উঠবে। তখন বাজারে ভাল দামও পাওয়া যাবে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, তিস্তার চরে আমার ব্লকে আগাম জাতের আলু চাষে ব্যাস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। আগাম জাতের আলু চাষে ফলন ও দামে ভালো থাকায় আলু চাষিরা অনেক লাভবান হন। সার্বক্ষণিক আলু চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, এখন যে জমিতে কৃষকেরা আলু লাগাচ্ছেন, তা ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে তুলে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। মৌসুমের শুরুতে নতুন আলুর চাহিদা থাকায় এমনিতেই বাজারে দাম চড়া থাকে। চরাঞ্চলের বালুমিশ্রিত পালি মাটিতে আগাম আলুর ফলন ভালোই হয়। তাই কৃষকেরা আগাম আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানে আমরা তৎপর রয়েছি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by