দেশজুড়ে

দুর্গম থানচিতে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন

  প্রতিনিধি ১২ অক্টোবর ২০২৩ , ৪:২৫:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্গম থানচিতে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের দুর্গম থানচি রেমাক্রী ইউনিয়নের ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ম্রো, মারমা, ত্রিপুরা ও খুমি সম্প্রদায়ের ১৮টি পাড়ায় ৩শ পরিবারের বসবাস। অনেকক্ষেত্রেই আধুনিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত তারা।এই উপজেলায় আসার একমাত্র ভরসা নৌপ। দুর্গম পাহাড়ি জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চলতি বছরে লইক্রি পাড়া ও আন্দারমানিক ইয়াংনাং পাড়ায় ‘হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ নামে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা দুইটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন এই এলাকায়।

জেলা সদর থেকে আনুমানিক ২০০ কিলোমিটার দূরে লইক্রি পাড়া। এ পাড়ায় ম্রো সম্প্রদায়ের ৩৭ পরিবারের বসবাস। থানচি উপজেলা সদর থেকে ইঞ্জিন চালিত বোটে যেতে সয়ম লাগে ৫ঘন্টা। এ পাড়ায় সর্বোচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। 

লইক্রী পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুইতং ম্রো কার্বারী জানান, চলতি বছর হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন থেকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে দেওয়া হয়। স্কুল পেয়ে পাড়াবাসী খুবই খুশী এবং কৃতজ্ঞ । 

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যেন চলমান থাকে সেজন্য হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন ও সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। 

লইক্রি পাড়ার মত দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ২০০৪ সাল থেকে ‘প্রাথমিক শিক্ষা প্রোগ্রাম’ চালু করেছিলেন ‘হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ নামে এক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা। গত ১৯ বছরে ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন এই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। এইসব বিদ্যালয়ে ৯৪৮ জন ম্রো, ত্রিপুরা, মার্মা, খুমিসহ সকল সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। প্রতি স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন দুইজন করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেমাক্রি ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি বিভিন্ন পাড়ায় ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিন্দু ইউনিয়নে ৪টি, থানচি সদরে ৫টি, থানচি বলিপাড়ায় ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে মোট শিক্ষার্থী ৯৪৮ জন এবং শিক্ষক রয়েছে ৪৪ জন। সম্পূর্ণ এ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় খরচ বহন করেন। 

হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী বিদ্যাপূর্ণ চাকমা জানান, বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে বই, সিলেবাস, শিক্ষকদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সহযোগীতা এবং শিক্ষা কর্মকর্তাগণ বিদ্যালয়গুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরামর্শ প্রদান করে থাকেন বলে জানান তিনি । 

সবার জন্য বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা সরকারের ঘোষণার আলোকে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ডোনার না পাওয়া সত্ত্বেও সংস্থার নিজস্ব ফান্ড থেকে নিয়মিত শিক্ষাখরচ বহন করে বিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মং মং সিং।

তিনি আরো জানান, শুধু প্রাথমিক শিক্ষা নয় দুর্গম এলাকা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর জেলা শহরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। ছাত্র ও ছাত্রী আলাদা হোস্টেলে রেখে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানোর পর মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও মেডিকেলে পড়তে বৃত্তি প্রদান করা হয়। বর্তমানে ১৮জন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত আছে বলে জানান মং মং সিং। 

রেমাক্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুই শৈ থুই মারমা জানান, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন থানচির দুর্গম এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দুর্গম এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে সার্বিকভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছে এই সংস্থা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী যদি স্কুলের জায়গা দিতে কেউ রাজি থাকেন এবং নিয়ম অনুসারে আবেদন করলে দুর্গম রেমাক্রী ইউনিয়ন এলাকার শিশুদের সরকারী প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনা হবে আর বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে জাতীয় শিক্ষাক্রমের পাঠ্য পুস্তক সরবরাহ, শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ, বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয় বলে জানান তিনি।

Powered by