ঢাকা

দুর্নীতি ও অনিয়ম করেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে গোপালগঞ্জ সওজ’র সহকারী প্রকৌশলী সফিকুর রহমান

  প্রতিনিধি ২৫ জুলাই ২০২০ , ৩:৪৯:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্নীতি ও অনিয়ম করেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে গোপালগঞ্জ সওজ’র সহকারী প্রকৌশলী সফিকুর রহমান

কে এম সাইফুর রহমান, গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
সড়ক ও জনপথ গোপালগঞ্জ জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. সফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে আবারো নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক অপকর্ম করার পরও তিনি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে। চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি টিভি চ্যানেল, অনলাইন পত্রিকা সহ দৈনিক দেশকালের কাগজ, দৈনিক জনবাণী ও সপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে একাধিকবার দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর প্রকাশিত হয়। এরপরও থেমে থাকেননি মো.সফিকুর রহমান।

অভিযোগ রয়েছে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেনের জোরেই তিনি একের পর এক চাঁদাবাজি, ডিভিশন থেকে সিএস, ইস্টিমেট, আইপিসি অনুমোদন করানোর জন্য অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নামে ৫% ও নিজের অফিস খরচ বাবদ ৫% হারে মোট ১০% টাকা সরাসরি নিয়ে থাকেন। এমনকি অনলাইনে কাগজপত্র জমা বাবদ ঠিকাদারদের নিকট থেকে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আদায় করেন তিনি।

সম্প্রতি শরীয়তপুরের একটা সাপ্লাইয়ের কাজের ব্যাপারে উৎকোচের টাকা না পেয়ে কাগজপত্র ফেরৎ পাঠিয়ে দিয়েছেন মোঃ সফিকুর রহমান। পরে ঠিকাদারদের চাপের মুখে সেই কাগজপত্র শরীয়তপুর থেকে ফেরৎ এনে পাশ করিয়ে দেন তিনি। প্রভাবশালী এই কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা সকলে জানলেও কাজের স্বার্থে প্রকাশ্যে কোন ঠিকাদার মুখ খুলছেন না। গোপনে তদন্ত করলে এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে।

বিগত দিনে ঐ পদে অনেক কর্মকর্তা এসেছেন, আবার মেয়াদ শেষে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গিয়েছেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজ সফিকুর রহমানের মতো কোন কর্মকর্তাকেই দেখেন নি তারা। সফিকুর রহমান গোপালগঞ্জে যোগদান করার পর গোপালগঞ্জ জোন অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন তিনি। সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে কর্মস্থলে বরাদ্দ পাওয়া কক্ষে আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করে চলেছেন দিনের পর দিন। অপরদিকে তার ব্যক্তিগত আয়েশে অতিরিক্ত বিল গুণতে হচ্ছে সরকার বাহাদুরকে। এতে করে গোপালগঞ্জ সড়ক অফিসের সুনাম দিন দিন ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে দাবি অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। মোঃ সফিকুর রহমানের অত্যাচারে ইস্টিমেটর নাসরিন সুলতানা নামে এক মহিলা কর্মকর্তা এখান থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

মোঃ সফিকুর রহমান সহকারী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় অন্যায়ভাবে কোটালীপাড়া এসডিই ও জোনের ইস্টিমেটর এর দায়িত্ব পালন করেছেন। পত্র-পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর উক্ত দায়িত্ব থেকে তিনি সরে দাঁড়ান। তার বিরুদ্ধে অফিসের কেউ বদলির ভয়ে মুখ খুলে না, মুখ খুললে অথবা তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে অন্যত্র বদলি করে দেবেন বলে হুমকি দেন প্রকৌশলী মোঃ সফিকুর রহমান। এছাড়া ২ হাজার টাকা করে না দিলে পত্রিকায় নিয়োজিত সংবাদকর্মী ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধিদেরকে বিজ্ঞাপন দেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রতি বিজ্ঞাপনে ২ হাজার টাকা দিতে হয়। পত্রিকার বিল পরিশোরে সময় বিলের ওপর ১০% কমিশন না দিলে সেই পত্রিকার বিল পরিশোধ হয় না।

মো. সফিকুর রহমান এসডি’র দায়িত্ব থাকাবস্থায় সাইট পরিদর্শন বা কোথাও গেলে সাব ডিভিশনের গাড়ি ব্যবহার করেন। অথচ ঢাকা মেট্রো ভ-৯৫৪৬ নং গাড়িটি ব্যবহার না করেও প্রতি মাসে ২০০ থেকে ২৫০ লিটার জ্বালানী তৈল ইস্যু করে সরকারি অর্থ আত্মসাত করে চলেছেন তিনি। তিনি প্রতিদিন খুব সকালে ঢাকা মেট্রো-ভ-৯৫৪৬ নং গাড়িটি নিয়ে তাকে বিভিন্ন বাজার এলাকায় দেখা যায় বাজার করেন। ক্ষমতার দাপটে গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের আওতায় থাকা বিভিন্ন গাছ থেকে আম, কাঁঠাল ও অন্যান্য গাছের ফল পেড়ে নিজের গ্রামের বাড়িতে ও ঢাকাতে নিয়ে যান তিনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জম্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কাজ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ঠিকাদারের নিকট থেকে উৎকোচ নিয়েছেন বলে একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন। এছাড়া জম্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা সড়কের আলোকসজ্জা কাজের ঠিকাদার বাস্তবে মো. সফিকুর রহমান নিজেই। কেবল কাগজে-কলমে দেখানোর জন্য ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কিভাবে তিনি নিজেই ঠিকাদারী কাজ করেন এটা নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে।

সহকারী প্রকৌশলী মো. সফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী স্যারের নির্দেশে আমি সব কাজ করি। আর সকল সরকারি কর্মকর্তাই টুকিটাকি অনিয়ম করেন। এগুলো নিয়ে লেখার কিছু নেই। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো.জাকির হোসেনকে অফিসে গিয়ে না পেয়ে মুঠোফোনে আলাপ করলে তিনি বলেন, এগুলো আমাদের অধিদপ্তরের ব্যাপার। এই বিষয়াদি নিয়ে সাংবাদিকদের নিউজ না করাই ভালো। তিনি কোন সাংবাদিকদের সাথে সরাসরি সাক্ষাত করতে চান না বলেও জানান। সচেতন মহল মনে করেন পর্দার আড়ালে দুর্নীতিবাজ ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎকারী প্রকৌশলী মো. সফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সরেজমিনে তদন্ত করলে এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে। গোপালগঞ্জবাসী এই বির্তকিত কর্মকর্তার দ্রুত অপসারণ চায়। এদের নিয়ে বারে বারে টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় নিউজ হলে গোপালগঞ্জের সুনাম নষ্ট হয়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by