Uncategorized

নারীর ক্ষমতায়নে যুবলীগ নেতার ব্যাতিক্রমি উদ্যেগ

  প্রতিনিধি ৫ অক্টোবর ২০২০ , ৬:৫১:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নারীর ক্ষমতায়নে যুবলীগ নেতার ব্যাতিক্রমি উদ্যেগ

মো. সাইফুল ইসলাম, নরসিংদী : নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে নিজেদের ভাগ্য ফিরিয়েছেন ১ হাজার নারী। অসহায়, দরিদ্র, বিধবা ও অস্বচ্ছল পরিবারের নারীরা এখান থেকে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে হয়েছেন স¦াবলম্বী। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষন কেন্দ্র। সংগঠনটি ট্রেইলারিং, বাটিক, এম্বয়ডারি, কার্পেট,নকশি কাঁথা ও বল্ক-বাটিক তৈরীতে নারীদের গড়ে তুলছে দক্ষ প্রশিক্ষক। পাশাপাশি এসব মহিলাদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষন কেন্দ্র। জানা যায়, বর্তমান উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: আল-মুজাহিদ হোসেন তুষারের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত ও উনার মা সমাজসেবক নিগার সুলতানা রুজির সার্বিক তত্ত¡াবধানে সমাজের অবহেলিত দরিদ্র নারীদের আতœ-কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনামূল্যে সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষন কেন্দ্রটির যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের প্রথম দিকে। সংগঠনটি যাত্রালগ্ন থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে কেন্দ্র নির্বাচন করেন। এসব কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত চরসিন্দুর, গজারিয়া ও ঘোড়াশাল পৌরসভার ৩৪ টি ব্যাচে কয়েক ধাপে ১ হাজার অসহায়, দরিদ্র, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধাবা নারীদের বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়ানো হয়। পরে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে এদের মধ্য প্রায় ২০ জন নারীকে বিনামূল্য দেওয়া হয় সেলাই মেশিন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নারীই সেলাইকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে এখন সংসার চালায়। স্বামীর পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচও যোগান দেন প্রশিক্ষিত এ নারীরা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা নিজেদের দক্ষ করে এ কাজের মাধ্যমে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন। এ ছাড়া ঘোড়াশাল পৌরসভার আওতাধীন অসহায় দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে এখনো সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কাজের স¦ীকৃতি সরুপ ২০১৪ সালে সংগঠনের তত্ত¦াবধায় নিগার সুলতানা রুজি পেয়েছেন পলাশ উপজেলা
প্রশাসন থেকে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নারীর সম্মাননা। বালিয়া মধ্যপাড়ার, নূরনাহারা, পারুল, মোমেনা, নাছিমা, বিলকিছ, জানান, আগে তাদের
ঘরে অভাব অনটন ছিলো নিত্য দিনের সঙ্গী। ছেলে মেয়ের বায়না পূরণ করার মতো ক্ষমতা ছিল না তাদের। আর এখন তারা নিজেরাই সচ্ছল। এসব গ্রামের অভাবী নারীরা এখন আর কেউই বসে থাকে না। তারা সংসারের সব কাজ করার পর অবসরে এই সেলাইয়ের কাজ করে। একজন নারী সংসারে সব কাজ করার পর অবসরে কাজ করেও মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। ঘোড়াশাল পৌরসভার দড়িহাওলা গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা আক্তার জানান, সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কাজ শিখছি। এখন নিজের খরচ চালিয়ে সংসারের
খরচও দিতে পারছি। প্রশিক্ষন কেন্দ্রের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মো: নাজমুল হক জানান, মো: আল-মুজাহিদ হোসেন তুষার শুধু সেলাই প্রশিক্ষন কেন্দ্রই নয়, মুমূর্ষ রোগীদের জন্য চিকিৎসা খরচ প্রদান, অসহায় দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা,অসচ্ছল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা উপকরণ
বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ওনার কর্মকান্ড প্রশংসনীয়। এ ছাড়া তুষারে মা নিগার সুলতানা রুজি সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে আশপাশের অবহেলিত পিঁছিয়ে পড়া দরিদ্র নারীদের নিয়ে কিছু একটা করার কথা অনেক আগে থেকেই ভাবতেন। তখন থেকে বিভিন্নভাবে অসহায় নারীদের সহায়তাও করতেন তিনি। সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পলাশ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মুজাহিদ হোসেন তুষার জানান, গত ৮ বছরে সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১ হাজার নারী খুঁজে পেয়েছে স্বাবলম্বী হওয়ার ঠিকানা। তারা প্রত্যেকেই এখন প্রশিক্ষিত ও স্বাবলম্বী নারী। সংসার চালিয়েও তারা অর্থ সঞ্চয় করতে পারছেন। এখন তারা অনেকটাই আত্মপ্রত্যয়ী। ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিবান, ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে অসহায় নারীদের এগিয়ে নিতে হবে। এ বিষয়ে পলাশ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেহানা পারভীন জানান, নারীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করে প্রান্তিক নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। বেকার নারীদের মাঝে আশার আলো ছড়াচ্ছে ‘সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষন কেন্দ্র’। এ জন্য সংগঠনটির কার্যক্রম প্রশংসার দাবীদার।

Powered by