চট্টগ্রাম

নোবিপ্রবির নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন

  প্রতিনিধি ১৪ মার্চ ২০২১ , ৯:২৭:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

নোবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

গতকাল রোববার (১৪ মার্চ) সকাল ১১ টায় নোয়াখালী প্রেসক্লাব এর সামনে এ মানবন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনের পরে নোয়াখালী প্রেসক্লাবে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর। এ সময় নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, অফিসার সমিতির নেতৃবৃন্দ, কর্মচারীবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি ও কর্মচারীবৃন্দ সম্মিলিতভাবে এ মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। দীর্ঘ (প্রায় ২ বছর) যাবত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্তের কারণে ও এর দীর্ঘ সূত্রিতায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। এমতাবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রমসহ প্রশাসনিক কাজেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। পাশাপাশি এ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে শিক্ষাছুটির বিপরীতে, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মাস্টাররোল কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজনুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর। এ সময় তিনিবলেন, “ প্রায় ২২ মাস ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নোবিপ্রবির সকল পর্যায়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিবাদে আজকের এই মানববন্ধন। ২০১৯ সালের এপ্রিলের শেষের দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নোবিপ্রবি সকল পর্যায়ের নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

এতে প্রায় ৬০ এর অধিক শিক্ষক এবং প্রায় ৫০-৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, অস্থায়ী, মাস্টাররোল এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকুরী স্থায়ীকরণ করা যায়নি।

ফলে তাদের আপগ্রেডেশন বন্ধ আছে। যাদের আপগ্রেডেশন ২ বছরে হওয়ার কথা তাদের আপগ্রেডেশন ৩-৪ বছর সময় লেগে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে যে ভাবে বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় নোবিপ্রবিতেও ঠিক একইভাবে নিয়োগ প্রক্রিয় সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দুই বছর নোবিপ্রবির নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি। আমরা অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে চাই, যেখানে আমাদের আজ শ্রেণীকক্ষে থাকার কথা সেখানে আজ আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।

বর্তমানে প্রায় সবগুলো বিভাগে শিক্ষক স্বল্পতা দেখা দিয়েছে, এতে শিক্ষার মান অত্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে অতি দ্রুত নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে করে শিক্ষার
সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি”। এসময় তিনি নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করেন। একইসঙ্গে তিনি শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী, ইউজিসি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজনুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা সবাই নিবেদিত ভাবে কাজ করে চলেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, দ্রæত নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ
ফিরিয়ে দিতে হবে এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান তিনি”।

 

এসময় শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফিরোজ আহমেদ,ডিবিএ বিভাগের শিক্ষক রুবেল মিঞা, এমআইএস বিভাগের শিক্ষক আব্দুস সালাম, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. জসীম উদ্দিন, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি তারেক মো. রাশেদ উদ্দিন, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নার্গিস আক্তার হেলালি, অফিসার্স এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাভ ইকবাল উজ্জল, কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হিসাব পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাইদুর রহমান এবং কর্মচারীর মধ্যে বক্তব্য রাখেন সোহরাভ হোসেন, অস্থায়ী কর্মচারীর মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাখেন টিটু চন্দ্র দাস।

বক্তারা তাদের দাবি পূরণ না হলে ২৮ মার্চ ২০২১ হতে বিশ^বিদ্যালয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে আমরণ অনশন কর্মসূচির আল্টিমেটাম দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাছুটির বিপরীতে, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাদের পরবর্তীপদে পদোন্নতির সময়ও প্রায় ২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এদিকে অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মাস্টার রোল কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী হচ্ছে না।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে। তাই বক্তারা নোবিপ্রবিতে সব ধরনের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। বক্তারা আরো বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, মাত্র দুই জন শিক্ষক দিয়ে দুটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চলছে।

ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় শিক্ষামন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অচিরেই যেন এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে উদ্যোগী হন, মানববন্ধনে এমনটাই দাবি করেন নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি ও কর্মচারী নেতৃবৃন্দ।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by