দেশজুড়ে

বরিশালে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে স্বাক্ষর করা অনুদানের একটি চেকের খোঁজ

  প্রতিনিধি ১১ মে ২০২১ , ৪:৩৬:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

এসএম ওমর আলী সানি, আগৈলঝাড়া (বরিশাল):

৭১’র মুক্তিযুদ্ধার সংগঠক ও যুদ্ধকালীন রাডারটিচ ইঞ্জিনিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধ আব্দুর রকিব সেরনিয়াবাত-এর ছোটভাই রাজিব সেরনিয়াবাত বলেন, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ২০০১ সালে তার পিতা-মারা যাওয়ার আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে স্বাক্ষরিত অনুদানের একটি চেক হাতে দিয়ে সংরক্ষণের দায়িত্ব দেন। মৃত্যু আগে বাবা আমাকে বলেছেন- ‘মনে করো এটি একটি চেক নয়, এই হলো স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। আর এই চেকে যে কলম দিয়ে বঙ্গবন্ধুু স্বাক্ষর করেছেন, সেই কলমের কালি হচ্ছে তোমার মুক্তিযোদ্ধা ভাই রকিব সেরনিয়াবাত-এর রক্ত। এই চেকের মধ্যেই আমি খুঁজে পাই বঙ্গবন্ধু আর আমার ছেলে রকিবকে। আবেগপ্লাবন কণ্ঠে কথাগুলো বলেন, বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে স্বাক্ষর করা অনুদানের একটি চেক পরম যত্নে দীর্ঘদিন থেকে সংরক্ষণ করা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান রাজিব সেরনিয়াবাত।

তিনি আরো বলেন, সুযোগ পেলে চেকটি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সরাসরি তুলে দিব সুযোগ পেলে। রাজিবের মেঝ ভাই ছিলেন আব্দুর রকিব সেরনিয়াবাত তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সংগঠক ও যুদ্ধকালীন রাডারটিচ ইঞ্জিনিয়ার। অন্য ভাই আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত।

বরিশাল জেলার তৎকালীন গৌরনদী থানা বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের সেরাল গ্রামে আব্দুর রকিব সেরনিয়াবাতের জন্ম।

মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু রবিক সেরনিয়াবাত সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও গৌরনদী পাক হানাদারমুক্ত হয়েছিল ছয়দিন পর ২২ ডিসেম্বর। ওই সময় সরকারি গৌরনদী কলেজের পাক সেনাদের স্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থানরত সেনা সদস্যদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে রকিব সেরনিয়াবাত ছিলেন অন্যতম। তিনি আরও বলেন, দেশ স্বাধীনেরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রকিব সেরনিয়াবাত ১৯৭৪ সালে সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৪ঠা এপ্রিল রাতে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে আততায়ীর গুলিতে রকিব সেরনিয়াবাত নিহত হন। গৌরনদী কলেজ শহীদ মিনারের পাশেই দাফন করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা রকিব সেরনিয়াবাতকে।

তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বোন জামাতা ও তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের স্নেহধন্য। জানা গেছে, মর্মান্তিক ওই ঘটনার পর ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে রকিবের বাবা সেকান্দার আলী সেরনিয়াবাতকে তিন হাজার টাকার অনুদানের একটি চেক প্রদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিজের স্বাক্ষর রয়েছে ওই চেকটিতে। চেকটিতে উল্লেখ রয়েছে-‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, সোনালী ব্যাংক স্থানীয় কার্যালয়, ঢাকা। একাউন্ট নং-৪৬৯৩।’

চেকটি সেকান্দার আলীর হাতে পৌঁছে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে। এরপর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু স্ব-পরিবারে শহীদ হওয়ার পর তার স্মৃতি ধরে রাখতে অনুদানের টাকা আর তোলেননি মুক্তিযোদ্ধা রকিব সেরনিয়াবাতের পিতা সেকান্দার আলী। পরিবারের এক সদস্য চেকটি ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা তুলতে গেলে সেখান থেকেও চেকটি ফেরত আনেন সেকান্দার আলী। পরিবারের অভাবের মাঝেও সন্তানহারা পিতা পরমযতেœ চেকটি সংরক্ষণ করে রাখেন তার কাছে।

এ ব্যাপারে রাজিবের বড় ভাই আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতের স্বাক্ষিরত চেকটি আমাদের পরিবার থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দিতে চাই। এটাই আমাদের পরিবারের ইচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by