চট্টগ্রাম

বান্দরবানে ড্রাগন ফলের বাম্পার ফলন, সংরক্ষণের অসুবিধায় বিপাকে খুচরা ও পাইকাররা

  প্রতিনিধি ৭ জুন ২০২২ , ৮:৪১:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:

বান্দরবানের আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশের কারনে এই মৌসুমে জেলায় ড্রাগন ফল চাষিরা খুশি,জেলা সদর সহ কয়েকটি উপজেলায় এবার ড্রাগন ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে।অন্নান্য ফলের মত বিদেশি এই ফলটিরো রয়েছে বাজারে ব্যাপক চাহিদা, তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক কৃষক ব্যাপক আকারে চাষাবাদ করতে পারছে না কৃষি ঋনের কোন সুযোগ না পাওয়ার কারনে।

চলতি মৌসুমের ড্রাগন ফলের ফলন নিয়ে খুশি কৃষকেরা ,পাইকারি বাজারে ফল সরনরাহের ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধারো সম্মুক্ষীন হচ্ছেন অনেক কৃষক, তাদের দাবী ফলের পাইকারি ব্যাবসায়িরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে বাগানীদের কাছ হতে ফল সংগ্রহ করছে। জেলার বাইরের পাইকাররা এখন ভিড় জমাচ্ছে ড্রাগন ফল চাষিদের বাগানে,উল্লেখ্য বান্দরবান হতে সংগ্রীহিত ড্রাগন ফলের চাহিদা রয়েছে রাজধানী ঢাকা সহ বেশ কয়েকটি জেলায়।

সরজমিনে দেখা যায় জেলা সদরের চিম্বুক, বাবু পাড়া এলাকায় ১ একর জমিতে এবার ড্রাগন ফলের চাষ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা য়ংসম ম্রো, তিনি জানান দুরদুরান্ত হতে আগত পাইকারি ব্যাবসায়িরা এসে বাগান থেকে ড্রাগন ফল সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। এই মৌসুমে তার ১ একর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষাবাদ করতে সার কীটনাশক ও আনুসাংগিক খরচ মিলিয়ে সর্বমোট ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে, আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ থাকলে ধারণা করছেন ১ একর জমি হতে ৪ হাজার কেজি ড্রাগন ফল উৎপাদন করবেন। তিনি বলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হতে ঋণের সুবিধা পেলে আরো বেশি পরিমানে ড্রাগন ফলের আবাদ করা যেতো ।

ড্রাগন ফল চাষীর হিসেবে এই মৌসুমে পাইকারি ২৫০ টাকা বিক্রয় করলে যদি কাংখিত ৪ হাজার কেজি ড্রাগন ফলের উৎপাদন হয় তাহলে তার বাজার মূল্য দাড়ায় ১০ লক্ষ টাকা যা উৎপাদন খরচের দ্বীগুন।সাধারণত বছরের এপ্রিল থকে নভেম্বরের এই সময়টাতেই ড্রগনফল চাষের উত্তম সময় বলে জানালেন কৃষক য়ংসম ম্রো।

কথা হলো ড্রাগন ফল বাগানে আশা একজন ফল ব্যাপারীর মোঃ জামালের সাথে, তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ফলের ব্যাবসার সাথে জড়িত, বান্দরবান থেকে বিভিন্ন মৌসুমে ফলের বাগানীদের কাছ হতে ফল সংগ্রহ করে তা মজুদ ও সংরক্ষণের পর বিক্রি করছেন জেলা সদর,চট্টগ্রম,কুমিল্লা ও রাজধানী ঢাকা শহরের পাইকারদের কাছে।তিনি জানালেন জেলা সদরে কোন ক্লোল্ডস্টোরেজ ব্যাবস্থা নাই এ জন্য ফল সংরক্ষণ করাটা অসুবিধা। মোঃ জামাল জানালেন, এই ব্যবসায় লাভ যেমন বেশি তেমনি ফল রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যার কারনে অনেক সময় লোকসানের সম্ভাবনাও থাকে।

এই মৌসুমে তিনি বাগান থেকে কেজি প্রতি ২০০-২২০ টাকা দরে ড্রাগন ফল সংগ্রহ করে তা আবার মাঝারি পাইকারদের কাছে পৌছে দিবেন ২৪০-২৬০ টাকার ভেতরে পরিবহন খরচ সহ,তবে চাহিদার তুলনায় ড্রাগন ফলের চাষাবাদ কম হওয়ায় বাগানিরা অনেক সময় দাম ধরে রাখে।

এবার ঘুরে আশা যাক জেলা সদরে ফলের খুচরা বাজার থেকে, কথা হলো রহমানের সাথে, তিনি একজন খুচরা ফল বিক্রেতা তিনি প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করছেন ২৮০ টাকা।বললেন থানছি হতে ড্রাগন ফল পরিবহন খরচসহ কেজি প্রতি খরচ পড়েছে ২৬০-২৭০ টাকার ভেতরে আমরা প্রতি কেজিতে ১০-২০ টাকার বেশি লাভ করি না। জেলায় ড্রাগন ফলের চাহিদা আছে, মানুষ আগে এই ফল তেমনটা না চিনলেও অনেকে এখন এ ফলটির সাথে পরিচিত তাই বিক্রয় করতেও অসুবিধা হয় না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গেলো অর্থবছরে জেলা সদর সহ ৬ টি উপজেলা মিলিয়ে মোট ৩০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষাবাদ হয়েছে যা থেকে ১৪৪ মেট্রিকটন ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়েছে যার পাইকারি বাজার মূল্য দাড়ায় তিন কোটি ষোল লক্ষ আশি হাজার টাকা। ধারনা করা হচ্ছে চলতি মৌসুমে আরো অনেকেই ড্রাগন ফল চাষাবাদে আগ্রহী হওয়াতে উৎপাদনও আরো বাড়বে। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন পার্বত্য বান্দরবানে পূর্বের চেয়েও আরো বেশি কৃষক ফল চাষাবাদে ঝুকেছে,ফলের বাগান করে অনেক পাহাড়ি ও বাংঙ্গালী কৃষক সাবলম্বি হচ্ছে।

গত মৌসুমে জেলা সদর সহ ৬ টি উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে ১৪৪ মেট্রিকটন ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়েছে নিঃসন্দেহে এটা একটি ভালো দিক,আমাদের চিরাচরিত ফলের পাশাপাশি বিদেশি এই ফলটিও এখন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তিনি বলেন উৎপাদন মৌসুমে বাজারে ফলের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকে তাই কৃষক পাইকারি বাজারে অনেক সময় ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়,আর চাষিরা সঠিক মূল্য না পেলে পরবর্তীকালে তারা চাষাবাদেও অনাগ্রহ দেখায়।তবে আমরা কৃষকদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানো করছি।আশা করছি ড্রাগন ফল চাষাবাদে কোন কৃষক লোকসান গুনবে না,অনুকূল পরিবেশ,সঠিক ভাবে জমীতে কিটনাষক প্রয়োগ ও রক্ষনানা বেক্ষন করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।আর পার্বত্য বান্দরবানের আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষাবাদে উত্তম জায়গা।

তিনি জানালেন কৃষকদের সার্থে কাজ করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,ফলের বাগানীদের কৃষি ঋনের ব্যাপারে এখনো কোন ব্যাবস্থা না থাকলেও আমরা এটা বিবেচনায় নিতে পারি,তবে জেলায় একটি আধুনিক কোল্ডস্টোরেজ থাকাটা জরুরী এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের আলোচনা চলছে।

জেলায় বিদেশি ড্রাগন ফলের চাষাবাদ ও বাজারে এর চাহিদা বিবেচনায় আশার আলো জ্বালাতে এই ফলের চাষাবাদ,লাভের দিক দিয়েও দ্বীগুন হওয়ায় অনেক চাষী আগ্রহ দেখাবেন এই ফল চাষে।এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও বাগান পরিচর্যার বিষয়েও জেলা হার্টিকালচার ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে দেয়া হবে সঠিক নির্দেশনা,সব মিলিয়ে ড্রাগন ফল চাষেও স্বনির্ভর হতে পারে পার্বত্য বান্দরবানের পাহাড়ি ও বাঙ্গালী অনেক কৃষক।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by