চট্টগ্রাম

বিজয়ের ৫০ বছরেও সংরক্ষিত হয়নি চাঁদপুরের বধ্যভূমিগুলো

  প্রতিনিধি ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ , ২:০৬:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর প্রতিনিধি:

একাত্তরে বিজয়ের ৫০ বছর আজ। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার অর্ধশত বছরের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। কিন্তু যুগের পর যুগ পার হলেও সংরক্ষণ করা হয়নি চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিগুলো।। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যমে এখনো আহত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে।

মুক্তিযোদ্ধকালীন সময়ে জেলার ছোটসুন্দর, বাগাদী, দাসাদী ও শিলন্দিয়া গ্রাম, ফরিদগঞ্জ, কাদলা, আহমদনগর, সাচার, গৃদকালিন্দিয়া, বড়কুল, রায়শ্রী, বড়স্টেশন, কাসিমপুর, দত্রা, চরভাগল, রঘুনাথপুর, লাওকরা, রহিমানগর, রসুলপুর ও এনায়েতনগর এলাকায় হানাদার বাহিনী ব্যাপক গণহত্যা চালায় বলে জানা যায়।

পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার সঙ্গমস্থলে চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন ‘মোলহেড’ এলাকায় একটি বধ্যভূমি ‘রক্তধারা’। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে কয়েক হাজার মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু রক্তমাখা এ স্থানটির ভাবগাম্ভীর্জতা ও পবিত্রতা রক্ষায় তেমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর ইতিহাসও জানে না নতুন প্রজন্মের অনেকেই। উপরন্তু মোলহেড এলাকায় বিভিন্ন সময় হয়েছে মেলা, উৎসব, নাচ-গান।

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চাঁদপুরে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর, রাজাকাররা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। সেই নিষ্ঠুরতার সাক্ষ্য বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত ও সংরক্ষণে আজও যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ জেলায় ঠিক কতগুলো বধ্যভূমি আছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই প্রশাসনের কাছে।

বোমা বানাতে গিয়ে চাঁদপুরের প্রথম চার শহীদের স্মরণে শহরের ট্রাকরোড এলাকায় নির্মিত নির্মিত হয় ‘কালাম-খালেক-সুশীল-শংকর’ স্মৃতিসৌধ অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও শহীদদের স্মরণে জেলা শহরে লেকের উপর নির্মাণ করা হয়েছে ভাসমান স্মৃতিস্তম্ভ ‘অঙ্গীকার’। শহরের পাঁচ রাস্তার মোড় কালীবাড়িতে নির্মাণ করা হয় ‘শপথ ফোয়ারা’। এসব স্মৃতিস্তম্ভগুলো সহ অজানা অনেক ঐতিহ্যবাহী স্পটগুলো অযত্ন আর অবহেলার ৫০ বছর পূরণ হলো।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, এসব বধ্যভূমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আত্মত্যাগের গৌরবগাথা তিলেতিলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুরে বধ্যভূমি ও গণকবরগুলোর খোঁজখবর নিয়ে শহিদের স্মৃতি রক্ষায় যাতে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তা নাহলে পরবর্তী প্রজন্ম বুঝতে পারবে না বীর মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাদের জন্য বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। জানতে পারবে না কত ত্যাগের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তারা শিগগির-ই এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ ওয়াদুদ বলছেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ আর দেশপ্রেমের কথা তাদের জানাতে হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘ যাদের জন্য আমরা স্বাধীণ দেশ পেয়েছি তাদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য সরকার খুবই আন্তরিক। এ লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও এলজিইডি থেকে বধ্যভূমির তালিকা চেয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা জেলায় ১৮ থেকে ২০ বধ্যভূমির তালিকাভূক্ত করতে পেরেছি।’

আরও খবর

Sponsered content

Powered by