শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার, পারলে আমার কিছু করে দেখাও: জাককানইবি শিক্ষক

  প্রতিনিধি ৩০ মার্চ ২০২২ , ৬:০৭:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

মো. আরাফাত রহমান, জাককানইবি:

 

তোমাদের ফলাফল প্রকাশ হয়ে গিয়েছে, এখন থেকে তোমরা আমাদের শিক্ষার্থীই না । যা পারো করে ফেলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার। পারলে আমার কিছু করে দেখাও । গতকাল ২৯ মার্চ (মঙ্গলবার) পরীক্ষার খাতায় নাম্বর টেম্পারিং ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামকে দুই ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য করেন প্রফেসরের ড. নজরুল ইসলাম।

গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে ও নাম্বর টেম্পারিং এর অভিযোগ এনে বিভাগীয় প্রধানের কক্ষের সামনে অবস্থান নেয়। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বরাতে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার নাম্বর মূল পরীক্ষা শুরুর আগে প্রকাশ করার নিয়ম থাকলেও একক সিদ্ধান্তে বিভাগটির প্রধান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম তা প্রকাশ করেন না। তিনি পরীক্ষার খাতা হারিয়ে ফেলার কারণে ৩ বার একটি ইনকোর্স পরীক্ষায় বসতে হয়েছিল বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এমনকি বিভাগ থেকে কোনো শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে কীভাবে শিক্ষক হয় তা দেখে দেওয়ার হুমকিও দেয় নজরুল ইসলাম। এমন অভিযোগ তুলেছেন অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ৫১জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পাঠদান চলে। যাদের মধ্যে কেউ ৩.৫০ পেয়ে অতিক্রম করতে পারেনি।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, শুরু থেকে আমাদের ফার্স্ট গার্ল এমনকি পুরো বিভাগে যার রেকর্ড মার্ক তাকেও নাম্বার কমিয়ে দিয়েছে। নজরুল স্যার আমাদের গালমন্দ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন আমাদের ব্যাচ থেকে শিক্ষক হতে চাইলে তিনি দেখে নেবেন। স্যারের এই কথার প্রভাবই আমাদের আজকের এই ফলাফল। আমরা নিশ্চিত খাতা পুনরায় মূল্যায়ন করলে আমাদের রেজাল্টের সিজিপিএ বাড়বে। অনেকেই চাকরির বাজারেও নামতে পারবে। উনার একক স্বেচ্ছাচারিতা থেকে আমরা মুক্তি চাই।

স্নাতক পর্যায়ে বিভাগটিতে রেকর্ড মার্ক পাওয়া শিক্ষার্থী জারমিনা রহমান প্রধানমন্ত্রীর স্বণপদকের জন্যে মনোনিত হয়েছেন। সেই শিক্ষার্থীকেও নম্বার টেম্পারিং করে ৩.৪৫ দিয়েছেন প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম।

ফলাফল নিয়ে জারমিনা বলেন, স্যারদের কোথাও ভুল হতে পারে। আমি পুনরায় মূল্যায়ন করার অনুরোধ জানাই। আমি ভালো পরীক্ষা দিয়েছি। আমার যে ফলাফল এসেছে তা প্রত্যাশিত নয়।

শিক্ষার্থীদের অবস্থানের ঘটনায় তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনেছি। একদিনের সময় চেয়েছি আমরা। উপাচার্য স্যারকে আমরা জানাবো এবং বুধবার সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন উপাচার্য স্যার। আমাদের কথা শুনে আশ্বস্ত হয়ে বুধবার সকাল পর্যন্ত আন্দোলনে না যাবার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, অনুষদে সিনিয়র শিক্ষক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে যায় এমন কোন কথা বলা যায় না। উনি ক্লাসের থেকে বেশি ব্যস্ত শিক্ষক রাজনীতিতে। ৬ মাসের কোর্সে ৪-৫টি ক্লাস করিয়ে পরীক্ষায় বসান শিক্ষার্থীদের। যার কারণে শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্থ।

উল্লেখ্য, এর আগে বিভাগটিতে একাধিক শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা একই রকম অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে বিক্ষোভ ও তালা লাগিয়েছিল বিভাগটিতে। বরাবারই উপাচার্যের হস্তক্ষেপে সাময়িক সমাধান আসলেও স্থায়ী সমাধান আসেনি। বারবার একাই বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করার কারণে প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by