খুলনা

যশোরের চামড়ার মোকাম চামড়ার দাম না পেয়ে হতাশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

  প্রতিনিধি ৮ আগস্ট ২০২০ , ৭:৩৩:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

উত্তম ঘোষ, যশোর : ঈদুল আজহার দিন সকাল থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রতিপিস ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা দরে ১শ’ গরুর চামড়া কিনেছিলেন নড়াইলের লোহাগড়ার ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী সানাই বিশ্বাস। সেগুলো বাড়িতে লবণজাত করে রেখে শনিবার বাড়তি দামের আশায় এসেছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিমা লের বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে। চামড়ার এ বৃহৎ মোকামে এসে তার ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকার চামড়া ৩শ’ টাকার বেশি দাম পাচ্ছে না। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত তিনি। কয়েকবছর ধরে চামড়ার দাম না পেয়ে এবছর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসা ছাড়ার। শুধু সানাই বিশ্বাসই নন এমন অবস্থা প্রায় সকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। তবে চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি সরকার নির্ধারিত দামেই কেনাবেচা হচ্ছে এ হাটে। ফলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হওয়ার কোন সুযোগ নাই।
দক্ষিণ-পশ্চিমা লের বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে ঈদপরবর্তী দ্বিতীয়হাট বসে শনিবার। এদিন অন্তত ২ কোটি টাকার চামড়া নগদ বেচাকেনা হয়েছে দাবি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুলের। এদিন ট্যানারি প্রতিনিধি ও বাইরের ব্যাপারিদের সমাগম এবং চামড়ার আমদানি বেশি থাকলেও দাম নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চামড়া নিয়ে খেলছে ট্যানারি মালিকরা। তারা দিনের পর দিন বকেয়া পরিশোধ না করে টালবাহানা করছেন। এতে মৌসুমি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। মোকামে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানালেও ট্যানারি মালিকদের রোষানলে পড়ার ভয়ে অনেকেই সাংবাদিকের কাছে কথা বলতে চাননি।
শনিবার সরেজমিনে ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথাবলে জানাগেছে, যশোর-খুলনা মহাসড়কের রাজারহাট এলাকায় এ চামড়ার মোকাম। দেশের অন্যতম বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের এই হাটে প্রায় ৩শ’ আড়ত রয়েছে। এ হাট বসে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার। যশোর ছাড়াও আশেপাশের জেলাগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা এ হাটে চামড়া নিয়ে আসেন। কোরবানি ঈদ ঘিরে প্রতিবারই রাজারহাটে ১৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়। কিন্তু গত শনিবার ঈদ-পরবর্তী প্রথম হাটে বৃষ্টির কারণে চামড়া নিয়ে আসতে পারেননি ব্যাপারিরা। ফলে সীমিত পরিসরে হাট জমলেও গত হাটে অর্ধকোটি টাকারও চামড়া বেচাকেনা করতে পারেনি। তবে শনিবার রাজারহাট চামড়ার হাটের চিত্র ছিলো ভিন্ন। এদিন হাটে চামড়ার সরবরাহ ছিল আশাব্যঞ্জক। অনেক ব্যবসায়ী হাটে চামড়া রাখার জায়গা পর্যন্ত পাননি। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই রাস্তার ওপর চামড়া নিয়ে বসেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বাড়তে থাকে ভিড়। ট্যানারি শিল্পে দেওয়ার জন্য স্থানীয় আড়তদারেরা চামড়া কিনে মজুত করেন। এদিন হাটে ভালো চামড়া উঠলেও দাম নিয়ে সন্তুষ্টি নন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীররা। প্রতি পিচ গরুর চামড়া মান ভেদে ১শ’ থেকে ৭শ’ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ২০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ঋণ নিয়ে চামড়া ক্রয় করেছেন তারা। কিন্তু বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম না পেয়ে আসল যেমন তেমন লবন খরচও উঠবে না তাদের।
এদিন হাটে চামড়া বিক্রি করতে আসা যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার চামড়ার ব্যবসায়ী সুনিল ঘোষ জানান, গতহাটে ১শ’ পিচ চামড়া আনলেও বাইরের ব্যবসায়ী ও হাট না জমায় চামড়া বিক্রি করেনি। শনিবার হাট জমলেও চামড়ার ঠিক দাম পাচ্ছি না। তিনি আরো বলেন, প্রতিপিচ ছাগলের চামড়া ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে চামড়া কিনেছি। এরপর লবণ ও পরিবহন মিলে চামড়াপ্রতি খরচ হয়েছে তার ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এখন হাটে ২০ টাকার বেশি দাম উঠছে না। লাভ হওয়া দূরে থাক, লবণের দামই উঠছে না। পুঁজিতেই টান পড়ছেন তার।
যশোরের রাজার হাটে চামড়া নিয়ে আসা মাগুরা জেলার রানা হোসেন। এসময় তিনি জানান, লাগাতার কয়েকবছর ধরে চামড়ার দাম না পেয়ে এবছর সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্যবসা ছাড়ার। কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছেন, ট্যানারী মালিকরা বকেয়া পরিশোধ না করায় সর্বশান্ত হয়েছেন তিনি। লাভের আশায় এবারও চামড়া ক্রয় করছেন। তবে ট্যানারী মালিকরা দাম না বাড়ালে এবারও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দিয়ে চামড়া নিয়ে ট্যানারি মালিকরা খেলা করছেন। তাদের কারণে চামড়া বাজারে অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা পাচ্ছেন, ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন। অথচ চামড়া কিনছেন বাকিতে। কোটি কোটি টাকা বাকিও ফেলে রাখছেন বছরের পর বছর। গত দুই বছরে তিনি ঢাকার ট্যানারি মালিকের কাছে ৩৮ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। এই টাকা গুলো পেলেই কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারতেন বলে তিনি মনে করেন।
তবে ঢাকার হেমায়েতপুর চামড়ার ব্যবসায়ী মেসার্স হালিম এন্ড সন্সের স্বত্তাধিকারী হাজী হালিম বলেন, গেল বছরের তুলনায় এবছর প্রতি চামড়ায় ২শ’ টাকা বেশি। গ্রেড অনুযায়ী চামড়ার দাম নির্ধারণ হয়। সেহেতু যে চামড়ার যেমন দাম তেমনি পাবেন তারা। এতে তাদের লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
রাজার হাট চামড়ার হাটের ইজাদার হাসানুজ্জামান হাসু জানান, সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে এই হাটে। তবে ঈদের আগে ব্যবসায়ীরা বকেয়া টাকা পেলে বেচাকেনা আরোও ভাল হতো বলে তিনি জানান।
যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, কোরবানি ঈদ-পরবর্তী প্রথম হাটে রাজারহাটে প্রায় চামড়ার হাট না জমলেও দ্বিতীয় হাট জমেছে। এদিন প্রায় ২ কোটির টাকার বেশি চামড়া বিক্রি হয়েছে। সরকারী নির্ধারিত দামেই কেনাবেচা হচ্ছে এ হাটে। ফলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হওয়ার কোন সুযোগ নাই।
এ দিকে জেলা বিপনণ কর্মকতা সুজাত হোসেন খান জানান, সরকার বেধে দেওয়া দামেই এই হাটে চামড়া কেনাবেচা হ”্ছ।ে তাছাড়া চামড়া পাচার হওয়ার কোন শঙ্কা নেই বলে তিনি জানান।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by