ঢাকা

রমজানে বায়তুল মোকাররমের ইফতারে অংশ নেন হাজারো মুসল্লি

  এস এম বাবুল ২১ মার্চ ২০২৪ , ৩:১১:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

রমজানে বায়তুল মোকাররমের ইফতারে অংশ নেন হাজারো মুসল্লি

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এক সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য ইফতারির ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে ফাউন্ডেশন আর ইফতারির আয়োজন করে না। ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক সমাজের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদে এখন সব শ্রেণি পেশার মানুষদের জন্য ইফতারির ব্যবস্থা হয়।

মসজিদের তিন প্রান্তে আলাদা ভাবে এ ইফতার বিতরণ হয়ে থাকে। মসজিদের পূর্ব প্রান্তে টিনের ছাউনি বেষ্টিত খোলা অংশের উত্তর পার্শ্বে ইফতারের আয়োজন করে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লী কমিটি।বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) প্রেসিডেন্ট ও মুসল্লী কমিটির প্রধান উপদেষ্টা, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের অর্থায়নে দৈনিক তিন হাজার মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করেন জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি।

টিনের ছাউনির দক্ষিণ পার্শ্বে ইফতারি বিতরণ করেন বায়তুল মোকাররম মার্কেট ব্যবসায়ীদের একাংশ যারা তাবলিগের সাথে সম্পৃক্ত। প্রতিদিন এরা ৫৫০ রোজাদারের মাঝে ইফতারি বিতরণ করে থাকেন। মসজিদের দক্ষিণ গেট সংলগ্ন খোলা জায়গায় ইফতার বিতরণ করেন ভূয়াপুরের (টাঙ্গাইল) পীর সাহেব ফজলুল হক। এখানে প্রতিদিন ১ হাজার মানুষের ইফতারি বিতরণ করার কথা বললেন, পীর সাহেব।

আছরের নামাজ শেষে মসজিদের পূর্ব পাশের টিনের ছাউনি বেষ্টিত খোলা অংশে হ্যান্ড মাইক দিয়ে রোজাদারদের সারিবদ্ধ ভাবে বসার আহ্বান জানাচ্ছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লী কমিটির প্রচার সম্পাদক মো. আব্দুর রব ভুঁইয়া (কালু)। তাঁর কাছে জানা গেল এ অংশে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় প্রতিদিন তিন হাজার মানুষের মাঝে ইফতারি বিতরণ করেন। প্রত্যেক রোজাদারকে প্লাস্টিকের বাটিতে ইফতারি ও আধা লিটার পানির ১টা বোতল দেন।

প্লাস্টিকের প্রতিটি বাটিতে থাকছে ২টা খেজুর, ১পিচ বেগুনি, ১টা কলা, ১পিচ জিলাপি, কিছু মুড়ি ও ছোলা। বসুন্ধরা গ্রুপ তিন বছর যাবৎ এ আয়োজন করে আসছেন জানালেন, মুসল্লি কমিটির প্রচার সম্পাদক কালু মিয়া। টিনের ছাউনির দক্ষিণাংশে ইফতারি বিতরণ করছেন বায়তুল মোকাররম মার্কেট ব্যবসায়ীদের একাংশ যারা তাবলিগের সাথে সম্পৃক্ত। এদেরই একজন মো. মাহবুব। তিনি বলেন, প্রায় ২০/২৫ বছর ধরে ইফতারি বিতরণ করছেন তাঁরা। দৈনিক ৫৫০ জনের ইফতারির আয়োজন করেন।

এখানে ইফতার বিতরণ করছেন স্টিলের গোল প্লেটে একসাথে ছয়জনের খাবার দিয়ে। প্রতিজন রোজাদারের জন্য থাকছে ১পিচ জিলাপি, ১টা কলা, ১পিচ বাঙ্গি, ১পিচ শসা। বেগুনি, আলুর চপ, পিয়াজ ও ছোলা মিলিয়ে প্লেটের ছয় অংশে আলাদা ভাবে দিচ্ছেন এবং মাঝে দিচ্ছেন ছয়জনের জন্য কিছু মুড়ি। প্লাস্টিকের গ্লাসে এক গ্লাস শরবত ও দিচ্ছেন এরা। মসজিদের দক্ষিণাংশে ইফতারি বিতরণ করছেন পীর সাহেব ফজলুল হক ও তার অনুসারীরা। পীর সাহেব জানালেন, প্রতিদিন প্রায় এক হাজার লোকের ইফতারির ব্যবস্থা করেন তিনি। এখানে এক প্লেটে চার জনের ইফতারির ব্যবস্থা করেন।

২৬ বছর যাবৎ ইফতার বিতরণের কথা বললেন, পীর সাহেব। ভোরের দর্পণকে তিনি বলেন, আজ থেকে প্রায় ২৬ বছর আগে মাগুরার হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি প্রথমে এ ইফতারির আয়োজন করে। তাঁর মৃত্যুর পর পীর সাহেব ফজলুল হক প্রতি রমজানে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ প্রান্তে ইফতার বিতরণ করে যাচ্ছেন। মসজিদের পূর্ব পার্শ্বের টিনের ছাউনি বেষ্টিত অংশের দুই প্রান্তে অন্তত সাড়ে তিন হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতারে বসেছেন। এখানে কোনো শ্রেণি বিভেদ নেই, নেই ধনী-গরিবের পার্থক্য। সবার পরিচয় একটিই, সবাই রোজাদার। তারা রোজা পালন করছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

ইফতারও করছেন একসঙ্গে বসে। শহরের বড় ব্যবসায়ী এবং ভ্যানচালক, দিনমজুর সবাই এক সঙ্গে বসে ইফতার করেন এখানে। দৃশ্যটি মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) আসরের নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের। এটি শুধু একদিনের নয়। সারা রমজান মাসে ইফতারের প্রতিদিনের চিত্র এটি। এখানে ইফতারে থাকে না কোনো শ্রেণি-পেশার ভেদাভেদ। রমজান মাসের প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে হাজারও মানুষ আসেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ইফতারে অংশ নিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সমাজের অনেক প্রতিষ্ঠিত মানুষের পাশেই ভিক্ষুক, রিকশাওয়ালা, হকারসহ নানা বয়সীরা শরিক হয়েছেন এ ব্যতিক্রমী ইফতার আয়োজনে। আবুল হোসেন নামে সত্তরোর্ধ্ব অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী জানান, তার বাসা রাজধানীর গোপীবাগে গত দশ বছরের প্রায় প্রতিটি রোজাতেই তিনি বায়তুল মোকাররম মসজিদে ইফতার করেন। তিনি বলেন, ‘রমজানে সমাজের অবহেলিত লোকগুলোর সঙ্গে একত্রে ইফতার করার জন্য আসি। প্রতিদিন বাসা থেকে হাতে করে কিছু ইফতারও নিয়ে আসি। সবার সঙ্গে মিলে এখানে ইফতার করি। এখানে ধনী গরিবের কোনো পার্থক্য থাকে না।

ইফতারিতে অংশ নেওয়া আলমগীর হোসেন বলেন, তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ইফতারিতে অংশ নিতে আছরের নামাজ বায়তুল মোকাররম মসজিদে আদায় করেন এবং এখানে ইফতারি সেরে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। অনেকের মাঝে ইফতারি করতে তার পছন্দ তাই তিনি প্রথম রোজা থেকেই এখানে ইফতারি করেন।

ফুটপাতের দোকানদার মোফাজ্জল বলেন, এখানে ইফতারি করলে আসর ও মাগরিবের নামাজ ঠিক মতো পড়া হয় এ কারণে এখানেই ইফতারি করি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুসল্লি জানান, অনেক মানুষের মাঝে ইফতারির সওয়াব বেশি। তাই তিনি অনেক দূর থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইফতারি করতে আসেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by