ঢাকা

রূপগঞ্জে কৃষি জমির টপ সয়েল যাচ্ছে ইটভাটায়, প্রশাসন নিরব

  প্রতিনিধি ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৭:৫০:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগজ্ঞ) প্রতিনিধি:

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চলছে কৃষি জমির মাটি কাটার হিড়িক। অবাধে কাটা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। এ মাটি ব্যবহার হচ্ছে ইটভাটাসহ নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কাজে। মাটিবাহী ড্রামট্রাক অবাধ চলাচলে গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ড্রাম ট্রাক/ ট্রাক্টরের মাটি পাকা সড়কে পড়ে পিচ্ছিল হয়ে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) কেটে নেওয়ায় কমছে ঊর্বরতা। এতে ফসলের উৎপাদন কমার পাশাপাশি কমছে চাষাবাদ, ঘটছে পরিবেশের বিপর্যয়। এ যেন দেখার কেউ নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম পেশায় একজন প্রকৌশলী, তিনিও এবছর বিরাব গ্রামে শুরু করেছে মাটির ব্যবসা। স্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে গভীর করে বিক্রি করছে ইট ভাটায়। এতে করে চার পাশের জমি ভেঙ্গে পড়ছে গর্তে।

এ ব্যাপারে সাইফুল ইসলামের ছেলে জয় বলেন, আমরা আমাদের জমির মাটি কাটছি তাতে কার কি। পাশের যারা জমির মালিক তাদের বিষয়টা আমরাই বুঝে নেব।

এ ব্যাপারে কথা হয় ভুক্তভোগী জমির মালিক স্থানীয় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আব্দুল কাদিরের সাথে তিনি বলেন, এসব ভূমি দস্যুদের ভয়ে আমি আমার জমিতে সরকারী নিয়ম মেনে অল্প গভীল করে পুকুর কেটে রেখেছি। তাতে আমি সমন্বিত ধান ও মাছ দুটোই চাষ করতে পারবো। কিন্তু আমার পাশের জমিতে গভীর করে মাটি কাটার ফলে আমার পুকুরের পাড় ভেঙ্গে চলে যাচ্ছে তাদের জমিতে। প্রতিবাদ করিনা তারা স্থানীয় নেতা, পাছে আমার আরো কোন ক্ষতি করে তাই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জমির মালিক বলেন, বাংলাদেশের অনেক যায়গায় ইটভাটা আছে আমাদের দেখার মধ্যে অনাবাদী জমি থেকে মাটি কাটা হয় ইট তৈরীর জন্য। কিন্তু আমাদের দেশেই ভিন্ন। আমাদেও এলাকায় বেছে বেছে ফসলি জমি থেকেই ইট তৈরীর মাটি কাটা হচ্ছে। এতে যেমন ক্ষতি হচ্ছে জমির তেমনী ক্ষতি হচ্ছে আশপাশের রাস্তাঘাটের। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

ভোলাব গ্রামের কৃষক মফিজুর রহমান জানায়, টাকার লোভে অনেক জমির মালিক মাটি বিক্রিতে ঝুঁকছেন। ২০-২৫ ফুট গর্ত করে মাটি বিক্রি হচ্ছে। ফলে পাশের জমির মাটিও ভেঙ্গে পড়ছে। বাধ্য হয়ে ওইসব জমির মাটিও বিক্রি করছেন মালিকরা। স্কাভেটর মেশিন দিয়ে দিন এবং রাতের আধারে এসব মাটি কাটা হচ্ছে। স্থানীয় কিছু নেতা কর্মীদের যোগ সাজোসে চলছে এসব হরিলুট। প্রতিবাদ করলে হুমকি দিচ্ছে তারা। এসব দেখেও প্রশাসন নীরব।

রূপগঞ্জ উপজেলা ব্যাপী একাধিক সিন্ডিকেট মাটি ব্যবসায় সক্রিয়। এরসাথে জড়িত ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাত করে অবাধে কেটে চলেছে কৃষি জমির উপরিভাগের ঊর্বর মাটি। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে চাষাবাদ। বেশিরভাগ মাটি কিনছেন ইটভাটার মালিক কিংবা নতুন করে ঘরবাড়ি করা বিত্তবান ব্যক্তিরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় মাটিও আমদানি নির্ভর হতে হবে আমাদের।

উল্লেখ্য, রূপগঞ্জে শতাধিক ইটভাটার মধ্যে চলতি বছর বেশিরভাগ ইটভাটাই নেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তার পরও প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এসব হরিলুট। ভাটার ইট তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে মাটি। শুধু তাই নয় এ বছর কয়লার দাম বাড়ায় এসব ভাটায় কয়লার পরিবর্তে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, নিষিদ্ধ টায়ার। ভাটাগুলো কৃষি জমির আশপাশে অবস্থিত হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ফসলসহ পরিবেশ। মাঝে মাঝে লোক দেখানে দুএকটি অভিযান পরিচালনা পরিচালনা হলেও আবার তা ঠিক করে চলছে ইটভাটা। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র পেলেও অজ্ঞাত কারণে তা আমলে নিচ্ছে না প্রশাসন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত বলেন, জমির শ্রেনী পরিবর্তন করা একটি দন্ডনীয় অপরাধ। আমরা ভূক্তভোগীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যে বা যারাই মাটি কেটে ফসলী জমি ক্ষতি করার সাথে জড়িত তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by