চট্টগ্রাম

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে চাঁইয়ের ব্যবসায় কারিগররা হতাশ

  প্রতিনিধি ২ আগস্ট ২০২২ , ৮:২৩:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

ভরপুর বর্ষা মৌসুম চললেও খাল, বিল ও নতুন চরগুলোতে পানি কম থাকায় দেশীয় চাঁইয়ের চাহিদা অনেক কমে গেছে। চাঁই ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দেওয়ায় হতাশ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা। পেশা বদলের কথা ভাবছেন কারিগরদের অনেকেই। প্রত্যাশিত বেচা না হওয়ায় বিনিয়োগ ফিরে পাওয়া নিয়ে চিন্তিত তারা। এজন্য নতুন করে বাড়তি সরঞ্জাম না এনে মজুদ চাঁইগুলো বেচেই বাড়ি চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মৌসুমী এ ব্যবসায়ীরা।
চাঁই পেতে মাছ কম পাওয়া এবং চায়না রিং চাইয়ের (চায়না দুয়ারী) দাপটে টিকতে না পারাকেই এজন্য তারা দায়ি করেছেন।

স্থানীয় মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও অবৈধ রিং চাঁইয়ের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযান বা ব্যবস্থাগ্রহণ দৃশ্যমান দেখা না হওয়ায় তাদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবংশী, হাজিমারা, চর ইন্দুরিয়া, জালিয়ার চর, মোল্লারহাট, পানিরঘাট, খাসেরহাট ও হায়দরগঞ্জ এলাকা ঘুরে পাওয়া গেছে এমন চিত্র।

উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের চরাঞ্চগুলোতে বাঁশের শলা ও প্লাষ্টিকের দড়ি দিয়ে তৈরি এক ধরনের মাছ ধরার ফাঁদকে ‘চাঁই’ বলা হয়। এটি মূলত: স্থানীয় ভাষায় ‘ইছা মাছ’ (চিংড়ি) ধরার জন্য ব্যবহৃত হয়। আবার পূর্বাঞ্চল এলাকায় এটি ‘আন্তা’ নামে পরিচিত। চাঁইয়ের ভেতরে খাদ্য দিয়ে জোয়ার-ভাটার সাথে তাল মিলিয়ে পাততে হয়। অপরদিকে খাদ্য ছাড়া সব ধরণের মাছের জন্য আন্তা পাতা হয় পানি প্রবাহের মুখে। মুলি ও ঢুলি দুই ধরনের বাঁশ দিয়েই এ চাঁই বানানো হয়। অন্যদিকে লোহার রিং ও চায়না সুতা দিয়ে তৈরী জাল দিয়ে বানানো হয় রিং চাই বা চায়না দুয়ারী।

হাজিমারা বাজারে প্রায় ১৫ বছর ধরে চাঁইয়ের ব্যবসা করছেন বিধান চন্দ্র সরকার, সমির চন্দ্র সরকার, রণজিত বিশ্বাস, তপন সরকার, নিখিল বৈদ্য ও লক্ষণ চন্দ্র বৈদ্য। তাঁদের সবার বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায়। প্রতি বছরের জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিকে এখানে আসেন। থাকেন দুই থেকে আড়াই মাস। চলে যান শ্রাবন মাসের শেষের দিকে বা ভাদ্রের প্রথমে।

রণজিত বিশ্বাস ও তপন সরকার বলেন, নদী ও খাল-বিলে পানি কম হওয়া এবং চায়না রিং চাইয়ের প্রভাবে দেশীয় প্রযুক্তির চাঁই অনেক চাঁইয়াল কিনতে চাচ্ছেন না। একটি চাঁই তৈরিতে আমাদের খরচ হয় ৪৩-৪৫ টাকা। সেটা খুচরা বেচা হয় ৫০ থেকে ৫৫টাকা। আবার বাজার ভালো হলে ৬০ টাকা পর্যন্ত যায়। প্রায় ১৪-১৫ বছর ধরে এ এলাকায় এসে ব্যবসা করছি। কখনোই ব্যবসায় এতোটা মন্দাভাব যায়নি। এ বছর চাঁইয়ের বেচা অনেক কম। মাছ কম পাওয়ায় চাঁইয়ালরা নতুন চাঁই কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাই নতুন করে কোনো খুচরা মালামাল আনছি না।

কারিগর বিধান চন্দ্র সরকার, সমির চন্দ্র সরকার, লক্ষণ চন্দ্র বৈদ্য ও নিখিল বৈদ্য বলেন, আমাদের গ্রামে সারাবছরই নানান ধরণের চাঁই পাতা যায়। সেখানে আমরা সারাবছর চাঁই তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করি। বাঁশ কেনা, বাঁশ ভিজানো, শুকানো, কাঠি করা, সুতা করা, সেগুলো আবার আলাদা আলাদাভাবে খুচরা আকারে তৈরি করা হয়। ১০ মাসের কাজের ফসল হিসেবে মৌসুমে মাত্র দুই থেকে আড়াই মাসের জন্য আমরা মতলব থেকে এখানে আসি। প্রতিটি অংশ খোলা আকারে বানানোর পর এখানে আনা হলে আমরা এসে ওইগুলো বেঁধে পুরো একটি চাঁই বুনে দেই। পেশার অস্তিত্ব নিয়ে আমরা হতাশাগ্রস্ত। তাই পেশা বদলের কথা ভাবছি।

রায়পুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (অ:দা) মোঃ বেলায়েত হোসেন সবুজ বলেন, দেশীয় প্রযুক্তির চাঁইকে আমরা উৎসাহিত করি। রিং চাই বা চায়না দুয়ারী সম্পূর্ণ অবৈধ। এগুলো ধ্বংসে সহসা অভিযান চালানো হবে।

 

 

 

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by