আন্তর্জাতিক

লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

  প্রতিনিধি ২৬ অক্টোবর ২০২৩ , ৭:০৩:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
ফাইল ছবি

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারীগোষ্ঠী হামাসের সাথে তীব্র যুদ্ধের মাঝে উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশী লেবাননের সাথে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ইসরায়েলের। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ওপর ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ক্রমবর্ধমান হামলায় দেশটির সাথে যুদ্ধের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মাঝেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।

বৃহস্পতিবার লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের খবরে ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। লেবাননের সরকারি সংবাদ সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) বলছে, ইসরায়েলি হামলায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে হামলার কারণে সীমান্তের আইতা আল-শাব শহরের কাছে উন্মুক্ত স্থানে আগুন ধরে গেছে।

এনএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকার টায়ার জেলায় বিমান ও ড্রোন হামলা করেছে ইসরায়েল। সেখানকার একটি তোষক তৈরির কারখানায় ইসরায়েলি গোলা আঘাত হেনেছে। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে।

গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননের হিজবুল্লাহর সদস্যদের সাথে ইসরায়েলির সামরিক বাহিনীর প্রায় প্রত্যেক দিনই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। লেবানন সীমান্ত থেকে ইসরায়েলি সামরিক চৌকির পাশাপাশি বসতি লক্ষ্য করেও ড্রোন ও রকেট হামলা করছে হিজবুল্লাহ।

লেবাননভিত্তিক শক্তিশালী সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর সঙ্গে বুধবার বৈঠক করেছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীগোষ্ঠী হামাস ও ইসলামিক জিহাদের দুই শীর্ষ নেতা। এ সময় হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল-আরোরি এবং ইসলামিক জিহাদের মহাসচিব জিয়াদ নাখলার সঙ্গে ‘গাজায় ইসরায়েলের হামলা ও নিজেদের করণীয়’ নিয়ে আলোচনা করেন হাসান নাসরুল্লাহ।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, হিজবুল্লাহ হয়তো ইরান ও তাদের হাইকমান্ডের নির্দেশে হামাসকে সহযোগিতা করার জন্য ইতিমধ্যে একটি নতুন ফ্রন্ট তৈরি করে ফেলেছে। তারা বলছেন, যদি সত্যিই হিজবুল্লাহ কোনও নতুন ফ্রন্ট গঠন করে— সেক্ষেত্রে তার ভবিষ্যৎ ফলাফল হামাস ও গাজা উপত্যকার বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বস্তিকর হবে। তবে লেবাননের জন্য তা হবে রীতিমতো ‘বিধ্বংসী’ এবং ইসরায়েলের জন্য ‘বিপর্যয়কর’।

  • ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বাধার শঙ্কা কতখানি

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের কনফ্লিক্ট অ্যান্ড রেজোল্যুশন বিভাগের পরিচালক রান্ডা স্লিমের মতে, ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে হিজবুল্লাহর ছোটখাট সংঘাত এখন নিয়মিত ব্যাপার। তবে বর্তমানে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের জেরে মধ্যপ্রাচ্যের যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি— তাতে যে কোনও সময় দু’পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত বেধে যেতে পারে।

এবং যদি সেই সংঘাত বাধে— সেক্ষেত্রে তার প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে ইরান। রান্ডা স্লিম বলেন, ‘ইরান গত কয়েক বছর ধরেই ন্যাটোর অনুকরণে নিজের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিরোধী পক্ষ তৈরির চেষ্টা করছে। অর্থাৎ এই পক্ষের কোনও একটি দেশ বা শক্তি যদি আক্রান্ত হয়— সেক্ষেত্রে পক্ষের অন্যান্য সদস্যরাও তাতে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

‘বর্তমানে এই প্রতিরোধী পক্ষ তৈরির কাজ অনেকখানি এগিয়েও গেছে। এই পক্ষের সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড় হিজবুল্লাহ।’

ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর প্রথম বড় আকারের যুদ্ধ বাধে ২০০৬ সালে। ওই বছরের জুলাই মাসে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত থেকে দুই ইসরায়েলি সেনা সদস্যকে অপহরণ করে হিজবুল্লাহ। এই অপহরণের জবাবে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।

৩৪ দিন স্থায়ী হওয়া সেই যুদ্ধে জয়ী হয়নি কোনো পক্ষই। তবে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, এই সময়সীমার মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় লেবাননে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১ হাজার ১০০ জনেরও বেশি লেবানিজ এবং ধ্বংস হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার বাড়িঘর, ১০৯টি সেতু এবং ৭৮টি হাসপাতাল।

ওয়াশিংটনভিত্তিক অপর থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের হিজবুল্লাহ বিশেষজ্ঞ নিকোলাস ব্ল্যানফোর্ড আলজাজিরাকে জানান, ওই যুদ্ধের সময় সময় ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা এবং সেই অনুপাতে গোলাবারুদ, আগ্নেয়াস্ত্র ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সম্বল ছিল হিজবুল্লাহর।

‘তবে গত ১৭ বছরে হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে,’ আলজাজিরাকে বলেছেন ব্ল্যানফোর্ড।

  • কত শক্তিশালী হিজবুল্লাহ

ব্ল্যানফোর্ড বলেন, তার কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে নিয়মিত ও রিজার্ভ মিলিয়ে হিজবুল্লাহ বাহিনীতে যোদ্ধা রয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার। এছাড়া গোষ্ঠীটির মজুতে বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ২০০৬ সালে মাত্র ১৪ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছিল হিজবুল্লাহর।

এসব ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকাংশই স্বল্পপাল্লার। তবে সেগুলো লেবানন থেকে ইসরায়েলের যে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মতো শক্তিশালী। তাছাড়া ইরানের তৈরি মাঝারি পাল্লার প্রিসিশন গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে হিজবুল্লাহর, যেগুলোর গড় রেঞ্জ ৩০০ কিলোমিটার।

‘বর্তমানে যে পরিমাণ সামরিক সক্ষমতা রয়েছে হিজবুল্লাহর, তা ইসরায়েলের গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি সাধনের জন্য যথেষ্ট। সম্ভবত এ কারণেই গত কয়েক বছর ধরে হিজবুল্লাহকে নিজেদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করছে ইসরায়েলের কর্মকর্তারা,’ বলেন ব্ল্যানফোর্ড।

রান্ডা স্লিম জানান, অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ ও যোদ্ধাদের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নিজেদের গোয়েন্দা তৎপরতারও ব্যাপক উন্নতি করেছে হিজবুল্লাহ। আলজাজিরাকে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘তারা সিরিয়ার দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এবং সেই যুদ্ধে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তাদের। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তারা নিজেদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কেরও ব্যাপক উন্নতি করেছে।’

আরও খবর

Sponsered content

Powered by