দেশজুড়ে

শতবর্ষী খাল দখল করে মেয়রের বাড়ির রাস্তা নির্মাণ

  প্রতিনিধি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৭:০৮:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

শতবর্ষী খাল দখল করে মেয়রের বাড়ির রাস্তা নির্মাণ

শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার বালুর মাঠ এলাকায় শত বছরের পুরোনো খাল দখল করে অপ্রয়োজনীয় ড্রেন কাম রাস্তা নির্মাণ করে পৌরমেয়র মো. আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে যাবার নতুন রাস্তা তৈরির অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী বলছেন, এক সময় এ খাল দিয়ে নৌকা চলাচল করতো। এলাকার সাধারণ মানুষ মাছ ধরতো।

নড়িয়া পৌর ভূমি অফি সূত্র জানায়, পূর্বের এসএ রেকর্ড ও বর্তমানের বিআরএস রেকর্ডের ৬৯ নম্বর দাগে এটি খাল উল্লেখ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নড়িয়া পৌরসভার বালুর মাঠ সংলগ্ন পুরাতন একটি খালের মাঝামাঝিতে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। এ কাজটি করার জন্য খালের পাড়ে গড়ে ওঠা পাকা টয়লেট, কারও রান্না ঘর ভেঙে সেখানে দ্রুত গতিতে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ভয়ে আতঙ্কে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তারা বলেন, আপনারা সাংবাদিক তথ্য নিয়ে সংবাদ করবেন, তারা আপনাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আমরা এলাকায় থাকবো, তাই এর জেরে পরবর্তীতে সুদে আসলে আদায় করবে।

নড়িয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সাত্তার খলিফা বলেন, ৫০ বছর ধরে এখানে খাল দেখে আসছি। ছোটবেলায় দেখেছি এখানে নৌকা চলাচল করতো। একটি কাঠের পুল ছিল, পানির অনেক স্রোত ছিল। এখানকার মানুষ চাঁই পেতে মাছ শিকার করতো। সেই ঐতিহ্যবাহী খালটি দখল করে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। আমি আমাদের মন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এর নিকট আবেদন করবো, নাড়িয়া পৌরবাসীর স্বার্থে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ বন্ধ করে খালটি খননের ব্যবস্থা করুন।

স্থানীয় বাসিন্দা হারুন মিয়া বলেন, এ প্রাচীন খাল দখল করে ড্রেন ও রাস্তা তৈরি একেবারেই মূল্যহীন। কারণ এখানকার প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা রয়েছে। কেবল বিশেষ কারও উপকারের জন্য এই ড্রেন ও রাস্তাটি করা। তা ছাড়া পৌরসভার বেশকিছু রাস্তা ভাঙা ও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। বিশেষ করে রাস্তায় খানাখন্দের কারণে লুংশিংয়ের মানুষ পাইকপাড়া ঘুরে পৌরসভায় আসে। ২০ টাকার ভাড়া দিতে হয় ৫০ টাকা। বাংলা বাজার, কালি খোলার রাস্তারও বেহালদশা। তাই কোভিড-১৯ প্রকল্পের ৩১ লাখ টাকা খরচ করে এই ড্রেন ও রাস্তা না করে পৌর এলাকার ভাঙা রাস্তাগুলো মেরামত করলে জনগণ অনেক বেশি উপকার পেতো।

স্থানীয় শম্ভু ঘোষ বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে এখানে খাল দেখে আসছি। এ খালে নৌকা চলতো। বাজারের ব্যবসায়ীরা নৌকা দিয়ে মালামাল এনে বাজারে বিক্রি করতো।

পৌর প্রকৌশলী ফিরোজ আহাম্মদ বলেন, কোভিড-১৯ প্রকল্প এর আওতায় ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ড্রেন কাম রাস্তা তৈরির কাজ চলমান আছে। আমরা কোনো খাল দখল করে এ নির্মাণ কাজ করিনি। আমরা মূলত খালের পাশ দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে এ কাজটি করছি।

নড়িয়া পৌর মেয়র মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার বাড়িতে প্রবেশ করার রাস্তা পূর্বে থেকে আছে, তাই নতুন কোনো রাস্তা প্রয়োজন নেই। এই রাস্তা ও ড্রেনটি মূলত পৌরবাসীর সুবিধার জন্য করা। বিশেষ করে আমার বাড়ির পেছনে বাড়ৈপাড়া এলাকার ৭০টি বাড়ির প্রায় ৪০০ লোকের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এ রাস্তাটি করা। এ খালটির ওপর প্রায় একশোরও বেশি দোকান ও একটি মসজিদ আছে। ভবিষ্যতে যদি এগুলো ভেঙে খাল উদ্ধার করে, তাহলে আমরাও পৌরসভার পক্ষ থেকে এ ড্রেন ও রাস্তাটিকে ভেঙে দিব।

নড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. পারভেজ বলেন, পৌর শহরের ভিতরে খাল দখল করে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে আমি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একাধিকবার ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজটি বন্ধ করে দিয়ে আসি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by