দেশজুড়ে

সান্তাহার রেলওয়ে ষ্টেশনে থাকা শতাধিক ছিন্নমূল মানুষের সেহরি ও ইফতার খাওয়া চলছে

  প্রতিনিধি ৩০ এপ্রিল ২০২০ , ৮:০৩:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি :   করোনার প্রভাবে বর্তমানে সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশেও স্বাভাবিক অবস্থা পুরোপুরি থমকে গেছে। করোনা ভাইরাসের আক্রমণের কারণে গত ২৪ মার্চ থেকে সারা দেশের ন্যায় বগুড়ার সান্তাহার জংশন শহরের লকডাউন শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন, বাসসহ সকল প্রকার দোকানপাট ফলে জনশূন্য হয়ে পড়ে রেলওয়ে স্টেশন এলাকা। ফলে স্টেশন থাকা ছিন্নমূল মানুষ মহা বিপদে পড়েন। এমতাবস্থায় সান্তাহার জংশন স্টেশনের মাস্টার রেজাউল করিম ডালিম আহবানে আজিজুল হক রাজা নামের এক ব্যবসায়ীর উদ্যোগে এই সব ছিন্নমূল ভাসমান মানুষের ৩ বেলা খাওয়ানোর ব্যবস্থা অব্যাহত ছিল। কিন্তু বর্তমান মাহে রমজান উপলক্ষে স্টেশনে থাকা ভাসমান মানুষের এখন সেহরি ও ইফতার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো রোজা মাসে চলবে এই আয়োজন।  জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহি রেলওয়ে জংশন স্টেশন সান্তাহার। কয়েকটি জেলার মোহনায় অবস্থিত এই স্টেশনটি। এই স্টেশনের আশেপাশে বাড়ি-ঘর হারানো মানুষ, ভিক্ষুক, অন্ধ, ফেরিওয়ালা, অসহায়, ঠিকানাবিহীন হতদরিদ্র, পাগলসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির শতাধিক ছিন্নমূল ভাসমান মানুষরা বসবাস করে। তারা সারা দিনে ভিক্ষা করে কিংবা মানুষের বাড়িতে, হোটেলে কাজ করে এই স্টেশনে এসে কোন মতে রাত কাটাতো। যাদের মূল আয়ের উৎসই ছিলো ট্রেন, স্টেশনের আশেপাশের হোটেল ও বাসা বাড়ি। সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সব মানুষরা পড়ে মহাবিপদে। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া অনাহারে-অর্ধহারে তাদের দিন কাটতে শুরু করলে মাষ্টার রেজাউল করিম ডালিমের আহবানে স্থানীয় এক রেল কর্মচারীর ছেলে আজিজুল হক রাজার  উদ্যোগে এই সব ভাসমান মানুষদের স্টেশনে ৩ বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে তা এখনোও চলমান। স্টেশনের ভোজনালয় হোটেল বন্ধ থাকায় সেখানকার কর্মচারীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ছিন্নমুল ভাসমানদের জন্য ৩ বেলা এই খাবার রান্না করে আসছেন। কারণ ভাসমানদের কেউ সাহায্য-সহযোগিতা করতে চায় না তারাও যদি তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে এই মানুষগুলো না খেয়ে মরতে বসবে। বর্তমানে সান্তাহার ও তার আশেপাশের অনেক বিত্তবানরা এই ভাসমানদের ৩ বেলা খাওয়ানোর জন্য সামর্থ মতে সহযোগিতা প্রদান করছেন। যতদিন না সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে ততদিন ভাসমানদের জন্য এই খাওয়ার ব্যবস্থার আয়োজন অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান আয়োজকরা। এছাড়াও যারা অসুস্থ্য ভাসমান তাদের চিকিৎসা সেবাও প্রদান করা হচ্ছে। 
ব্যবসায়ী আজিজুল হক রাজা বলেন, ট্রেন ও স্টেশনের আশেপাশের হোটেল, দোকান, বাসা-বাড়িগুলো ছিলো এই সব মানুষদের আয়ের প্রধান উৎস। কিন্তু সবকিছু বন্ধ হওয়ার পর এই মানুষগুলো মহা বিপদে পড়েন যায়। তখন তাদের কথা চিন্তা করে প্রথমে আমি ১০ কেজি চাল ও কিছু ডাল দিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা শুরু করি। আমার খাওয়ার খবর বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমাজের অনেক বিত্তবান মানুষেরা এগিয়ে আসেন। 
প্রধান উদ্যোক্তা ষ্টেশন মাষ্টার রেজাউল করিম ডালিম বলেন, প্রথমে রাজা কে আমি ছিন্নমুল মানুষকে খাওয়ানোর জন্য দায়িত্ব প্রদান করি। এবং স্টেশনের অন্যান্য কর্মচারীদের সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে এই সব ভাসমান মানুষদের ৩ বেলা খাওয়ানোর চেষ্টা করছি। সকলের উচিত সামর্থ অনুযায়ী এই শ্রেণির মানুষদের পাশে এসে দাঁড়ানো। তাদের নিজস্ব ঠিকানা না থাকায় এরা ভাসমান হওয়ার কারণে এই সব মানুষেরা সরকারের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বি ত। তাইতো সংকটময় সময়ে এই সব মানুষের পাশে সমাজের সকল বিত্তবানরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন এমনটিই তিনি আশা করছেন। তাহলে ইনশাআল্লাহ আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবো।
 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by