চট্টগ্রাম

সালামের ভয় গ্রুপিং, আনিসের মহাজোট!

  প্রতিনিধি ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৪:১৬:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

সালামের ভয় গ্রুপিং, আনিসের মহাজোট!

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫(হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম এ সালামের ভয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী শঙ্কায় আছেন মহাজোটের সমর্থন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে। ফলে মনোনয়ন দাখিলের পরও দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মন থেকে ভয় দূর হচ্ছেনা সফলতা নিয়ে।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১০ প্রার্থী। তারা হলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ (নাঙ্গল), চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম, (নৌকা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী শাহাজাদা আলহাজ এডভোকেট সৈয়দ মোখতার আহমেদ সিদ্দিকী (মোমবাতি), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের অধ্যাপক সৈয়দ হাফেজ আহম্মদ (চেয়ার), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (হাত ঘড়ি), তৃণমূল বিএনপি থেকে চাকসুর সাবেক ভিপি নাজিম উদ্দিন (সোনালী আঁশ), সুপ্রীম পার্টি থেকে কাজী মহসিন চৌধুরী (একতারা), মোঃ শাহাজান (স্বতন্ত্র), নাসির হায়দার করিম (স্বতন্ত্র) ও বাংলাদেশ ন্যাশলালিষ্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ আবু মো. শামসুদ্দিন।

জানা গেছে, এই আসনে ১০জন মনোনয়ন দিলেও মূলত দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের সালাম এবং জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদের মধ্যে মোটামুটি ভোট যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোঃ ইব্রাহিমকে যেহেতু কক্সবাজারে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, সেহেতু আসনটি তাকে ছেড়ে দেয়ার আর কোনো পরিকল্পনা আপাতত লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

হাটাহাজারীতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভাবিয়ে তুলেছে নৌকার প্রার্থী এম এ সালামকে। এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী। কমিটি গঠন বিষয় নিয়ে তাদের সাথে এম এ সালামের বিরোধ তুঙ্গে। ফলে উত্তর হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ, ধলই, মির্জাপুর, গুমানমর্দন, নাঙ্গলমোড়া এই ৫ ইউনিয়ন নিয়ে চিন্তায় আছেন এম এ সালাম। কারণ এই পাঁচ ইউনিয়ন ইউনুস গণির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পৌরসদর, ফতেহপুর ও চিকনদন্ডী ইউনিয়ন এলাকা। যা এমএ সালাম বিরোধী হিসেবে সমধিক পরিচিত। এজন্য এম এ সালামের একদিকে দলীয় গ্রুপিং, অন্যদিকে মহাজোটের কারণে আসন ছাড়তে হয় কিনা তাও ভাবাচ্ছে এম এ সালামকে।

দলীয় কোন্দলের কারণে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফটিকছড়ির নুরুল আলমের ইন্তেকালের পরে গত ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী ওবায়দুল কাদের জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে এম এ সালামকে সভাপতি এবং শেখ আতাউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন। এই কমিটিতে বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরী, সদস্য মঞ্জুল আলম চৌধুরীসহ অনেক নেতাকর্মীর নাম বাদ দেওয়া হয়। এতে আরও প্রকট আকার ধারণ করে দলীয় কোন্দল।

এরপরও এম এ সালাম সভাপতি হয়ে আবারও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক পর্যন্ত দায়িত্ব নেন। এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন এবং সবই তিনি একা পাচ্ছেন বলে অন্যদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাছাড়া হাটহাজারীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতি ৬টি গ্রুপে বিভক্ত। তারমধ্যে প্রকাশ্যে সালাম, ইউনুস গণি ও মঞ্জুরুল আলম এই ৩ গ্রুপের দ্বন্ধ ওপেন সিক্রেট যা কেন্দ্র পর্যন্ত অভিহিত। এছাড়া ভিতরে ভিতরে জসিম উদ্দিন শাহ, রাশেদুল ইসলাম রাসেল এবং রাশেদুল আলমও গ্রুপে বিভক্ত বলে দলীয়সূত্রে জানা যায়।

অন্যদিকে ১৯৯৬ সাল থেকে হাটহাজারীর জনপদে চষে বেড়ানো এমএ সালামকে ভয় পাচ্ছেন মহাজোটের নৌকায় চড়ে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি। এদিকে এই আসনটি নিয়ে আওয়ামী লীগের নজর থাকলেও বরাবরই আওয়ামী লীগ তাদের (জোট) শরীক দল জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে আসছে। কিন্তু এবার ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। তাই জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপিও এবার ছাড় পাওয়ার বিষয় এখনও দ্বিধাদ্ধন্ধে রয়েছেন।

চট্টগ্রাম ৫ সংসদীয় (২৮২) আসনটি বরাবরের মত গুরুত্ববহন করে। ১টি পৌরসভা, ৯টি ইউনিয়ন ও ২টি সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসনে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ভোটার।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে বিজয়ী হন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মরহুম এম আবদুল ওয়াহাব। পরবর্তী ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে বিজয়ী হন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

এরপর তিনি একটানা ১৯৮৬ সালের ৭ই মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন। তারপর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনপির চেয়ারপার্সনের তৎকালীন উপদেষ্টা মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম।

এরপর তিনি ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের অনুষ্ঠিত সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আরও দুইবার বিজয়ী হন। তারপর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে হারিয়ে বিজয়ী হন। সেই হিসেবে স্বাধীনতার পর থেকে মাত্র একবার এ আসনে নৌকা প্রার্থী জয়লাভ করেছিলো। সে হিসেবে এবার আসনটি আওয়ামী লীগ নিজেদের দখলে রাখতে চায়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by