রাজধানী

‘হায় হোসেন, ‘হায় হোসেন’ ধ্বনিতে মুখরিত হোসেনি দালান

  প্রতিনিধি ২০ আগস্ট ২০২১ , ১০:০১:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

আজ মহরমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা। এই দিন মুসলমান, খ্রিষ্টান ও ইহুদিসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের কাছে খুবই গুরত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। এদিন রাজধানীর বকশীবাজারে অবস্থিত শিয়া উপাসনালয় এবং কবরস্থান ইমামবাড়া বা হোসেনি দালানে দেখা গেছে মানুষের ভীড়। কেউ এসেছেন মনের বাসনা পূরণের আশায়, কেই এসেছেন মনের শান্তি লাভের আশায়। শুধু তাই নয়, সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো মোগল আমলের ঐতিহ্যের এই নিদর্শনে ‘হায় হোসেন, ‘হায় হোসেন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে।

এছাড়া করোনার কারণে হোসেনি দালানের ভেতরেই ছোট ছোট তাজিয়া মিছিল বের করেন শতাধিক তরুণসহ নানা বয়সের মানুষ। এসময় শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষসহ অনেকের হাতেই লাল, সবুজ ও কালো পতাকা দেখা যায়। কারবালার তৃষ্ণার্ত শহীদদের স্মরণে পানি বিতরণ করা হয় জিয়ারতিদের মাঝে। এছাড়া অনেককেই নামাজরত অবস্থায় দেখা যায়।

এদিন ঘোড়াকে সাজিয়ে কাচা দুধ দিয়ে গোসল করানো হয়। সেই দুধ যখন ঘোড়ার খুড় বেয়ে পড়ছিলো তখন অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে সেই দুধ পান করতে। যারা পাননি তারা মাটিতে পড়ে থাকা দুধ দিয়ে মুখ ধৌত করেন, মাথায় দেন এবং খাওয়া শুরু করেন। এ দিনে শেষ নবীর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.), তার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচররা বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালায় শহীদ হন সেই স্মৃতি চারণ করে একজন শরণার্থী বলেন, কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতি আমাদেরকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা যোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে চলার।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা মীর মোহাম্মদ আদিল হোসেন জানান, এদিনে আমাদের প্রিয় নবীর হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার অনুসারিদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আজ পবিত্র আশুরার দিন আমরা মহানবীর উম্মাত হিসাবে এ দিনটি উদযাপন করি।

তাজিয়া মিছিলে অংশ নেওয়া শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা জানান, যেই সত্য প্রকাশে কারবালার ময়দানে জীবন দিতে হয়েছে ইমাম হোসাইনকে (রা.) সেই বাণীয় প্রচার করে যাচ্ছে তারা। তার দেখানো পথেই অবিচল থাকবে মুসলিম সম্প্রদায়।

তারা আরো জানান, পূর্ব পুরুষের রীতি মেনে তারাও প্রতিবছর ইমামবাড়ায় আসেন। দোয়া করেন পরিবারের জন্য। পাশাপাশি অনেকেই মানত করেন পরিবারের সদস্যদের রোগ মুক্তি চেয়ে। কেউ কেউ আসেন মনের আশা পূরণে, প্রতীকী কবরে মুরগি, ফল, মোমবাতি দিয়ে দোয়া করেন।

আগত ব্যক্তিরা তাদের মনেরভাব প্রকাশ করে বলেন, করোনার বৈশ্বিক মহামারির প্রেক্ষাপটে এই দিনে আমরা মহান আল্লাহর কাছে এই সংকট থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করবো।

হোসেনি দালানে কামরাঙ্গীর চর থেকে আগত মরিয়ম বেগম বলেন, ভাল লাগা, মনের শান্তির জন্য এখানে প্রতি বছর তিনি আসেন। এছাড়া মানত করে তিনি বারবার সুফল পেয়েছেন।

 আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল রোজা, নামাজ, দান-খয়রাত, জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করবেন।

এদিকে প্রতিবছর পুরান ঢাকার হোসেনি দালানসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে তাজিয়া মিছিল বের হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে গতবারের মত এবারও তাজিয়া মিছিল করতে নিষেধ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

করোনায় সীমিত আয়োজনে মধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল শক্ত অবস্থানে। এছাড়া সরেজমিনের ঘুড়ে দেখা যায় শোক মিছিলে নিষিদ্ধ ছিল সব ধরনের ধাতব বস্তু।

এ বিষয়ে লালবাগ জেনের উপ কমিশনার মো. জসিম উদ্দিন জানান, সরকারের বিধিনিষেধ মেনেই আয়োজন চলছে তাজিয়া মিছিলের। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্তক রয়েছে পুলিশ।

অন্যদিকে হোসেনী দালানের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ফিরোজ হোসেন জানান, করোনার কারণে আয়োজন সীমিত করছেন তারা। রীতি মেনে গত সাড়ে ৩০০ বছর ধরে এই হোসেনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করা হয়।

প্রসঙ্গত, কারবালার প্রান্তরে এদিন নির্মমতার শিকার হয়েছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর দৌহিত্র এবং হযরত আলী ও বিবি ফাতেমার আদরের সন্তান হযরত হোসাইন (রা.)। ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম ইমাম হোসাইন (রা.) সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে সপরিবারে অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। কারবালার প্রান্তরে হজরত হোসাইন (রা.) নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করার যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এ আত্মত্যাগ বিশ্বের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by