দেশজুড়ে

৫০ টাকার ডাব বিক্রি হচ্ছে ২’শ টাকায়

  প্রতিনিধি ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩:৫০:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

৫০ টাকার ডাব বিক্রি হচ্ছে ২’শ টাকায়

দেশের মোট নারকেল উৎপাদনের বড় অংশই উৎপাদন হয় উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে। ১৪৫৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে ডাব বা নারকেল গাছ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারিকেল গাছ রয়েছে সদর উপজেলায়।

এতদিন নারকেলের জন্য এ জেলার সুনাম থাকলেও এখন ডাবের জন্যও সারাদেশে সুপরিচিত লক্ষ্মীপুর। কিন্তু সম্প্রতি ডেঙ্গুজ্বরের প্রভাব পড়েছে ডাবের বাজারে। লক্ষ্মীপুরের ৫০ টাকার ডাব চার হাত ঘুরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে ২শ’ টাকার বেশি।
ব্যবসায়ীদের মতে, গ্রাম থেকে শহরের একজন ক্রেতার হাতে এক একটি ডাব পৌঁছাতে এরমধ্যে প্রায় ৪ বার হাত বদল হয়। প্রতিটি হাতেই থাকে লাভের হিসাব। আবার, ডাব প্রতি ২০-৩০ টাকা লাভ নেয় শহরের মধ্যসত্ত্বভোগী কিংবা আড়ৎদার। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনীমোহন ইউনিয়নের ডাবের স্থানীয় আড়ৎদার ও ডাব ব্যবসায়ী আমির হোসেন খা। তিনি ২০ বছর থেকে ডাবের ব্যবসা করছেন।

তিনি স্থানীয় বাগান মালিক ও ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের থেকে ডাব কিনে পরে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লার বড় পাইকারি আড়তে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, প্রথমত, তারা বাগানের বা বাড়ির মালিকদের থেকে বর্তমানে প্রতিটি ডাব গড়ে কিনেছেন ৪৫-৫০ টাকায়।

দ্বিতীয়ত, গাছ থেকে প্রতিটি ডাব নামাতে স্থানীয় পাড়িয়াদের (যারা গাছ থেকে ডাব কাটে) জন্য খরচ করতে হয় ৫ টাকা। তৃতীয়ত, স্থানীয় ভ্যানচালক বা ছোট ট্রাক ড্রাইভারকে দিয়ে স্থানীয় আড়তে জড়ো করতে খরচ ২ টাকা। এরপর শুরু হয় ডাব ঢাকায় নিয়ে আসার কর্মযজ্ঞ। এতে ডাব ট্রাক যোগে ঢাকার আড়তে পৌঁছাতে খরচ হয় আরো ৪-৫ টাকা। আড়ত পর্যন্ত পৌঁছাতে একজন স্থানীয় ব্যবসায়ীর প্রতিটি ডাবে খরচ হয় ১০-১৪ টাকা। যখন স্থানীয় একজন বিক্রেতা ঢাকার বাজারে যখন ডাব নিয়ে পৌঁছান, তখন বাগানে কেনা ৪৫-৫০ টাকা দামের ডাবের মূল্য দাঁড়ায় কমপক্ষে ৭০ টাকায়। তার সাথে নিজের খরচ, বিনিয়োগ এবং শারীরিক পরিশ্রম মিলে জেলার একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী ৪-৫ টাকা লাভে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা আড়ৎদারদের নিকট ডাব বিক্রি করেন গড়ে ৭৫-৯০ টাকায়।

আমির খা আরো জানান, “গ্রাম থেকে অনেক রকম কষ্ট করে ডাব নিয়ে বড় শহরে এনে আমরা সর্বোচ্চ ৪-৫ টাকা লাভ করি। মাঝে শাঝে লোসকানও গুনতে হয়। যখন লোসকান হয় তখন অনেক টাকা চলে যায়। কিন্তু শহরের আড়তদাররা ডাব আমাদের চোখের সামনে অনেক টাকা লাভে বিক্রি করছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডাব বাণিজ্যের পেছনের দুষ্টু চক্রে জড়িত আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীরা। গাছ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় কেনা একটি ডাব ব্যাপারীর হাত ঘুরে আড়তে এসে হয়ে যায় ৭৫ থেকে ৯০ টাকা। আর আড়ত থেকে খুচরা বিক্রেতার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে যে যেভাবে পারছেন, দাম বাড়িয়ে তা ২০০ টাকা পর্যন্ত ঠেকাচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে নারিকেল আবাদ হয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে নারকেলগাছ থেকে ডাব কিনে নেন। প্রতি বছর ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে ডাবের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদার কারণে এখন গ্রামে প্রতিটি ডাব ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়। সেই ডাব ঢাকায় গিয়ে আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি হয় ৭৫-৯০ টাকা।

স্থানীয় পাইকারদের দাবি, খুচরা বিক্রেতারা সবচেয়ে বেশি লাভ করেন। চার হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে পৌঁছতে ডাবের দাম তিন-চার গুণ বেড়ে যায়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by