প্রতিনিধি ৪ নভেম্বর ২০২৫ , ১২:০৬:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় টানা তৃতীয় মাসেও হ্রাস পেয়েছে। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে ৭.৪৩ শতাংশ। রপ্তানিকারকদের আশঙ্কা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আর ব্যাংক খাতের সংকটের কারণে আগামী মাসগুলোতেও এই পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হবে না।
এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি)-এর তথ্যমতে, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের অক্টোবরে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির আয় হয়েছে ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের বছরের একই মাসে ছিল ৪.১৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও সেপ্টেম্বারের তুলনায় অক্টোবরের আয় কিছুটা বেড়েছে। রপ্তানিকারকরা জানান, জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় অনেকেই নতুন অর্ডার দিচ্ছেন না। যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি শুল্ক আর ইউরোপে চীনের সরবরাহ বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্ডারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি, ব্যাংক খাতের অস্থিরতায় ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার জটিলতাও রপ্তানি কমার একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম. এ. রহিম ফিরোজ বলেন, “বর্তমানে আমাদের অর্ডার আগের তুলনায় অনেক কম। বড় ক্রেতারাও অর্ডার কমিয়েছে। ফলে নিটিং ও ডাইং ইউনিটের কাজ কমে গেছে। নির্বাচনের আগে অর্ডারের প্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।” বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে, আর এককভাবে সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র—যেখানে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২০ শতাংশ। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৮.৩৯ শতাংশ। বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী বলেন, “পোশাক রপ্তানি কমার তিনটি প্রধান কারণ—নির্বাচনকালীন অস্থিরতার আশঙ্কায় অর্ডার হ্রাস, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কের কারণে চীনা রপ্তানিকারকদের ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশ, এবং ব্যাংক খাতের সংকটজনিত কারণে এলসি খুলতে না পারা।” তিনি আরও যোগ করেন, “আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে ক্রেতারা ঝুঁকি নিতে চাইছে না, তাই অর্ডার কমানো হয়েছে। একই সময়ে চীনা রপ্তানিকারকরা ইউরোপীয় বাজারে সক্রিয়ভাবে প্রবেশ করছে, ফলে আমাদের বাজার সঙ্কুচিত হচ্ছে।” অন্যান্য রপ্তানিকারকরাও জানান, সরকারের ঘোষণার পর অনেক আমানতকারী সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছেন। এতে গার্মেন্টস মালিকদের এলসি খোলায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, আর নতুন ব্যাংকে স্থানান্তরও সহজ নয়।
ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে কেবল জুলাই মাসেই রপ্তানি বেড়েছিল, পরের তিন মাসে ধারাবাহিকভাবে হ্রাস দেখা গেছে। তবুও এই সময়ের মোট রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় ২.২২ শতাংশ বেশি—১৬.১৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে গত অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১৫.৭৯ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবরে শুধু তৈরি পোশাকই নয়, হিমায়িত ও জীবিত মাছের রপ্তানি কমেছে ১৩ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য ১২ শতাংশ এবং কৃষিপণ্য ১০ শতাংশ। বিপরীতে, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্যে ৭ শতাংশ এবং হোম টেক্সটাইলে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।











