আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল-জর্ডান সফরে বাইডেন: লক্ষ্য কী?

  প্রতিনিধি ১৭ অক্টোবর ২০২৩ , ৮:২০:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

ইসরায়েল-জর্ডান সফরে বাইডেন: লক্ষ্য কী?

হামাসের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম মিত্র ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানাতে ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার ইসরায়েলে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধে গাজা উপত্যকার মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ও লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর উত্তেজনার মাঝে এই সফরে যাচ্ছেন তিনি।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পরপরই মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশে চারদিনের সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। দেশে ফিরে যাওয়ার আগে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরায়েল সফরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। হামাসের সাথে যুদ্ধে ইসরায়েলের লক্ষ্য সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পেতে ও গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে বাইডেন ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

নেতানিয়াহু, আব্দুল্লাহ, আল-সিসি, আব্বাসের সাথে বৈঠক

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের জন্য বুধবার তেল আবিবে বাইডেন তার সফরের কিছু অংশ কাটাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গাজায় হামাসের যোদ্ধাদের নির্মূল করার লক্ষ্যে ইসরায়েলের স্থল হামলার প্রস্তুতির মাঝে এই সফর করছেন তিনি।

নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠকের পর গাজায় মানবিক সহায়তা ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনার জন্য জর্ডানের রাজধানী আম্মানে যাবেন বাইডেন। আম্মানে জর্ডানের বাদশাহ 
দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

গাজায় মানবিক উদ্বেগ

চলতি বছরে যুদ্ধ কবলিত অঞ্চলে দ্বিতীয় সফর করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর আগে, গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে ইউক্রেন সফরে গিয়েছিলেন তিনি।

এবারে তার সফরের লক্ষ্য ইরান ও তার লেবাননিজ মিত্র হিজবুল্লাহ এবং সিরিয়া যাতে এই যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে সেটি নিশ্চিতের চেষ্টা করা। বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধ এড়ানোর চেষ্টার পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি মার্কিন সংহতি প্রদর্শনও তার সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের জন্য শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে একটি বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতির ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটায় দ্বিতীয় আরেকটি রণতরী ইসরায়েল উপকূলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর গাজা উপত্যকায় ২ হাজার ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলায় গাজায় মানবিক বিপর্যয় এড়াতে চান জো বাইডেন। মিসরের সিনাই উপদ্বীপে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে পাঠানো কয়েকশ’ টন সহায়তা আটকা রয়েছে। গাজায় নিরাপদে এসব সহায়তা পৌঁছানো এবং মিসরের সাথে গাজার একমাত্র পারাপার পয়েন্ট রাফাহ ক্রসিং দিয়ে বিদেশি পাসপোর্টধারীদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাইডেনের সফরে চুক্তি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেছেন, আমরা মানবিক সহায়তা এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করতে ইসরায়েলসহ এই অঞ্চলে আমাদের সব অংশীদারদের সাথে কাজ চালিয়ে যেতে চাই। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েল সফরে গিয়ে এটা পরিষ্কার করবেন।

মতবিভেদ থাকলেও যুদ্ধের ক্ষেত্রে ঐক্য

মধ্যপ্রাচ্যে এগিয়ে চলার পথে বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মাঝে গভীর রাজনৈতিক মতবিভেদ থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধের ক্ষেত্রে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। গাজায় ব্যাপক মানবিক সংকট কাটিয়ে ওঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন বাইডেন।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর বেশ কয়েকবার টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও নেতানিয়াহু। গাজায় স্থল হামলার আগে সেখানকার সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও উদ্বেগের বিষয়ে এবার সামনাসামনি কথা বলবেন তারা। এ সময় হামাসের হাতে জিম্মিদের বিষয়েও হালনাগাদ তথ্য পাবেন বাইডেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তর বলছে, ইসরায়েলে হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত ২৯ জন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও ১৫ জন মার্কিন নাগরিক ও একজন বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছেন।

ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেছে। তেল আবিবে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার আলোচনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সাংবাদিকদের বলেছেন, বাইডেন এটা পরিষ্কার করে বলবেন যে, ‘ইসরায়েলের জনগণকে হামাস ও অন্যান্য সন্ত্রাসীদের থেকে রক্ষা করার এবং ভবিষ্যতের হামলা প্রতিরোধের অধিকার রয়েছে।’

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইসরায়েল তার যুদ্ধের লক্ষ্য ও কৌশল এবং বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা হ্রাস করে কীভাবে স্থল অভিযান পরিচালনা করা হবে সে সম্পর্কে অবহিত করবে।

ব্লিনকেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে সম্মত হয়েছে। এর মাধ্যমে দাতা দেশ ও বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে মানবিক সহায়তা গাজার বেসামরিক লোকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by