রংপুর

উলিপুরে জীবন যুদ্ধে শিশু নাঈম

  প্রতিনিধি ৪ অক্টোবর ২০২৩ , ৪:০৯:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে জীবন যুদ্ধে শিশু নাঈম

যে বয়সে স্কুলে থাকার কথা, সেই বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরিয়েই সংসারের হাল ধরেছেন ১৬ বছরের কিশোর নাঈম। সংসার চালাতেই এখন জীবন যুদ্ধে শিশু নাঈম। বাবা যা আয় করে তাতে সংসার চলে না। তাই মা-বাবা আর ১২ বছর বয়সী ছোট ভাইকে নিয়ে চিন্তা থেকেই রোজগারে নেমেছে শিশু নাঈম।

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ধামশ্রেনী ইউনিয়নের পশ্চিম দড়িচর এলাকার ফুলবাবু মিয়ার ছেলে নাঈম। তিন ভাইয়ের মধ্যে নাঈম দ্বিতীয়। বড় ভাই নাছির (২৫) তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তার বাবা ফুলবাবু ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন। মা নুরজাহান বেগম অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। ছোট ভাই নাজমুল (১২) স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়াশোনা করেন।
১৬ বছর বয়সেই নাঈম জেনে গেছে জীবন খুব কঠিন। এখানে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়।

এ কারণে কিশোর বয়সেই নিতে হয়েছে কাঁধে দায়িত্বের বোঝা। এ দায়িত্ব নিয়েই নাঈম ছুটছে সংগ্রামমুখর জীবনে। ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া আর বাবা-মায়ের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে তাকে ছুটতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাদাম বিক্রি করেন। এছাড়া বেশিরভাগ সময় পৌরসভার বিভিন্ন অলিতে গলিতে বাদাম বিক্রি করেন নাঈম। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে তার পৌর বাজারে। সে সেখানে দোকানদার ও পথচারীদের কাছে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালায়।

নাঈম জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করতে পারেনি অর্থের অভাবে। তৃতীয় শ্রেণী থেকে পড়াশোনা করেছেন নাঈম। অন্য কোনো উপায় না পেয়ে নিজেই নেমেছে রাস্তায়। মায়ের কাছ থেকে ২’শ টাকা নিয়ে নেমে যান ব্যাবসায়। সংসারে জোগান দিতে শিশু অবস্থায় সে হাতে তুলে নেন কঠিন কাজ। সেই থেকে চলছে নাঈমের জীবন সংগ্রাম। প্রতিদিন ২’শ ৫০ টাকা থেকে ৩’ শ টাকা করে উপার্জন হয় তার।

নাঈমকে লেখাপড়া করার কথা জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, ইচ্ছেতো করেই। আমার ইচ্ছে করে লেখাপড়া করে ভালো কিছু করব। তাতো এখন আর হবে না। টাকা-পয়সা কোথায় পাবো? আমার ছোট ভাই ব্র্যাক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের খরচ কোথা থেকে আসবে।

নাঈম ভাঙ্গা কণ্ঠে বলেন, যেখানে ঠিকমতো খাবারই জোটে না সেখানে পড়ালেখার খরচ পাবো কোথায়। তার ছোট ভাইয়ের খুব ইচ্ছে লেখাপড়া করা। তার ছোট ভাই একদিন মানুষের মত মানুষ হবে। নাঈম আরও জানান, বাদামের ব্যাবসা আর করতে চাননা। সে বড় ব্যাবসা করতে চান। এ জন্য সে আর্থিক সহযোগিতা চান।

এলাকাবাসী সুজামিয়া (৩৮), লাল চাঁদ (৪০) ও সাইদুল (৪৫) সহ আরও অনেকের সাথে কথা হলে তারা জানান, নাঈমের পরিবার অত্যন্ত গরিব। তার বাবা তেমন আয় করতে পারে না। তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে খায়। তাদের কোন জমি নেই। নাঈম প্রতিদিন বাজারে বাদাম বেঁচে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনমতে চলে সংসার।

ধামশ্রেনী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাজ্জাক মিয়া জানান, নাঈমেরা নিতান্ত গরীব পরিবার। সে এ বয়সে সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়েছে। অভাবের কারণেই পড়াশোনা করতে পারে নাই। সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদে যে কোন ধরনের বরাদ্দ আসলে তা দেয়ার আশ্বাস দেন বলে জানান তিনি।

Powered by