রাজশাহী

এককালের সেরা মিউজিশিয়ান সন্তোষ কুমার পালের আক্ষেপ

  প্রতিনিধি ৬ জানুয়ারি ২০২১ , ২:৩৩:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি :

আশির দশকে ৬৪ জেলায় এক নামে পরিচিত ছিলেন সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলার সন্তোষ কুমার পাল (৪৮)। নিজের পারদর্শিতার কারণেই এমন খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। পিতা শ্রী রামায়ন পাল ছিলেন নামকরা তবলা বাদক। পরিবারে ৩ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সন্তোষ কুমার পিতামাতার দ্বিতীয় সন্তান।

দরিদ্র পিতার সংসারে হাল ধরতে সন্তোষ কুমার পালের পড়ালেখার দৌড় মাধ্যমিক পর্যন্ত গিয়ে বন্ধ হয়ে হয়। তার স্ত্রী নৃত্যশিল্পী নিভারানী পাল, ১ ছেলে নিরব পাল ও একমাত্র কন্যা পলক পালকে নিয়ে কোনোরকমে অভাবে চলে তার পরিপূর্ণ সংসার।

একান্ত আলাপচারিতায় সন্তোষ কুমার পাল জানান, মৃত শিল্পের কারিগর উত্তরবঙ্গের সনামধন্য তবলা বাদক (তবলচি) বাবা শ্রী রামায়ন পালের হাত ধরে ১৯৮৮ সাল থেকে তবলা বাজানোর যাত্রা শুরু করেন সন্তোষ কুমার পাল। ১৯৯২ সালে ঢাকা শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় যাত্রা উৎসবে সাতক্ষীরার আরজু অপেরায় এক্যুস্টিক ড্রামসেটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নজর কাড়েন সন্তোষ।

পরবর্তীতে ১৯৯০ সাল থেকে দীর্ঘ ৭ বছর সাতক্ষিরায় সংগীত জগতের সফল মিউজিশিয়ানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়াও যাত্রাশিল্পে বাসন্তী অপেরা, চ্যালেঞ্জার, দ্বীপালী, গণেশ, প্রতিমা, বৈশাখি, আরজু অপেরাসহ বিভিন্ন যাত্রাশিল্পে দর্শক মাতিয়েছেন বর্তমানে প্রায় নিভৃতে থাকা মিউজিশিয়ান সন্তোষ কুমার পাল।

যাত্রাপালার পাশাপাশি গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ ও বহন করতে বিভিন্ন সার্কাসে পারফর্ম করেছেন তিনি। সন্তোষ কুমার পাল ঐতিহ্যবাহী ‘দি রওশন সার্কাস, লায়ন সার্কাস, দি বুলবুল সার্কাস, নিউ স্টার সার্কাস, সেভেন স্টার সার্কাস, এশিয়া সার্কাস, সোনার বাংলা সার্কাসে প্রধান মিউজিশিয়ানের দায়িত্বও পালন করেছেন। অনেকটা স্বেচ্ছাশ্রমের মত দায়িত্ব পালন করেছেন বিভিন্ন স্কুলে ড্রামা (বর্তমানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান) অনুষ্ঠানে ও ধামইরহাট শিল্পকলা একাডেমিতে এবং বর্তমানে সোনার বাংলা সংগীত নিকেতনে স্বেচ্ছায় প্রধান তবলাবাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া নিজ হাতে তবলায় প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন ৩ শতাধিক প্রশিক্ষণার্থীকে।

রাজশাহী বিভাগের নাটোর থেকে ১৯৯০ সাল থেকে স‚র্যমনি যাত্রাশিল্পী ক্লাবের মাধ্যমে দর্শকনন্দিত হোন সন্তোষ কুমার পাল। পরবর্তীতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুরে আরজু অপেরা ক্লাবের মিউজিশিয়ান হিসেবে নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করলে মন কাড়েন হাজারও দর্শক শ্রোতার। বিভিন্ন যাত্রা ও সার্কাসে নায়ক-নায়িকাদের ফুটিয়ে তোলা মিউজিশিয়ান সন্তোষকে একনজর দেখতে ছুটে আসেন হাজার হাজার দর্শক। বিনোদনপিয়াসী শিল্পী আছেন অথচ সন্তোষ কুমারের নাম শোনেননি এমন লোক কমই পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে আক্ষেপ করে সন্তোষ কুমার পাল বলেন, এখন আর আমাদের খোজ রাখে না বাবুরা, এখন আর আগের মত গ্রামে গঞ্জে, গান-বাজনা, যাত্রাপালা হয় না, তাই আমাদেরও কেউ খোজ রাখে না, যেন হারিয়ে গেছে আমাদের মত মিউজিশিয়ানের কদর, যে কারণে বাবার সেই পৈত্রিক পেশায় মাটির হাড়ি-পাতিল বানিয়ে কোন রকমে পরিবারের সদস্যদের দুমুঠো ভাত যোগান দিতে প্রাণান্তর চেষ্টা করে চলছি।’
ধামইরহাট উপজেলার শিক্ষা-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উপজেলা প্রকৌশলী আলী হোসেন বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হারিয়ে যেতেবসা অন্যান্য মিউজিশিয়ানদের পাশাপাশি তবলাবাদকদের যথাযথভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by