দেশজুড়ে

করোনা দুর্যোগে শ্রীপুরে চিকিৎসক স্বাস্থ্য কর্মীদের তৎপরতায় খুশি সাধারণ মানুষ 

  প্রতিনিধি ২২ মে ২০২০ , ৫:৩৫:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মঞ্জুর হোসেন মিলন, গাজীপুর : করোনাভাইরাসের সংক্রমণকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন জেলার শ্রীপুর উপজেলার চিকিৎসাকর্মীরা। ৩১ শয্যার লোকবল দিয়েই চলছে ৫০ শয্যার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মহামারীর মধ্যে করোনা চিকিৎসা সহ সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক নার্স ও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মীরা।

কমিউনিটি ক্লিনিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও উপসহকারী মেডিকেল অফিসার সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ এবং সচেতনতায়ও কাজ করছেন বলে জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: প্রণয় ভূষণ দাস। 

হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, করোনা দুর্যোগেও শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়নি। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও জেলার শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালে সীমিত উপকরণ দিয়েই চলছে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা। করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় উন্নতমানের পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট পিপিই, গ্লাভস ও জীবাণুনাশকের চাহিদা বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকেও করোনার নমুনা সংগ্রহ করেছেন। 

সুত্র জানায়, ৮লাখ মানুষের বসবাস শিল্প এলাকা খ্যাত শ্রীপুর উপজেলা। এসব মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রতিনিয়ত আসেন হাসপাতালে। বর্তমানে চারদিকে বিরাজ করছে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক। এই পরিস্থিতির মধ্যেও হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে চেষ্টা করছেন। 

শ্রীপুর পৌর এলাকার বৈরাগীরচালায় ভাড়ায় থাকেন আয়েশা আক্তার। শুক্রবার সকালে মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে গেলে তাকে নেয়া হয় শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালে। আয়েশা বলেন, করোনার আতঙ্কের মধ্যে ভয়ে ছিলাম চিকিৎসা পাই কি না। ডাক্তার আমাকে দেখেছেন এবং ওষুধ দিয়েছেন। আমি এখন বাসায় আছি- মোটামোটি ভালো আছি। 

কুষ্টিয়ার এনামূল হক পৌর এলাকার ইশরাক স্পিনিং মিলে কাজ করার কারণে মাধখোলায় বাসা নিয়ে স্ত্রী সহ থাকেন। স্ত্রী শামসুন্নাহার গর্ভবতী, শুক্রবার সকালে শ্রীপুর হাসপাতালে জান চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। শরীরে অন্য সমস্যাও রয়েছে তাঁর। মহামারির এই সময় শ্রীপুর হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে পেরে খুশি শামসুন্নাহার। 

উপজেলার বরর্মী এলাকার মোফাজ্জল হোসেন রডের কাজ করেণ। সকালে রডের আঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে তিনি শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নেন। কথা হয় মোফাজ্জলের সাখে, হাসপাতার থেকে ওষুধ সহ বাড়িতে বিশ্রামে আছেন বলে জানান তিনি। 

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: ফাতে আকরাম বলেন,  প্রতিদিনই করোনা উপসর্গ জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এ অবস্থায় তাদের সংস্পর্শে  আসায় ভয় আর উৎকন্ঠায় থাকতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা অনেকটাই ঝুঁকি নিয়েই রোগী দেখছি।

জরুরী বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মঈনুল আতিক বলেন, আমার বাসায় ছোট একটি বাচ্ছা রয়েছে। আতঙ্ক-ভয় থাকার পরও ছুটিরদিন শুক্রবারে মহামারির এই সময় রোগী দেখছি। আমরা  মানুষদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। 

চিকিৎসা সেবায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা উল্লেখ্য করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: প্রণয় ভূষণ দাস জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমন  ঠেকাতে হাসপাতালের নতুন ভবনে ৫টি শয্যা এবং বরর্মী মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র ২০শয্যা সহ প্রস্তত রাখা হয়েছে ২৫ শয্যার করোনা ইউনিট। রোগীদের আরো বেশী সেবা নিশ্চিত করতে স্থানিয় সংসদ সদস্য প্রয়োজনীয় জনবল এবং নতুন একটি এ্যাম্বুলেন্স চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দিয়েছেন। 

তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। সম্প্রতি ২৩ করোনা জয়ীকে মাননীয় সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে সম্মাননা জানানো হয়েছে। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীদেরও নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। মনিটরিং সেল গঠন করে মনিটরিং করা হচ্ছে এলাকাভিত্তিক।

করোনা মহামারীর মধ্যে সেবা অব্যাহত রাখার পরও একটি মহল গুজবসৃস্টি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই চিকিৎসক-স্বাস্থ্য কর্মীসহ সকলের দায়িত্ব। 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by