দেশজুড়ে

গরীবের ডাক্তার সুনীল চন্দ্র আচার্য্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

  প্রতিনিধি ৩ আগস্ট ২০২১ , ৬:৪১:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

গরীবের ডাক্তার সুনীল চন্দ্র আচার্য্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ‘গরীরের ডাক্তার’ খ্যাত পল্লী চিকিৎসক সুনীল চন্দ্র আচার্য্যের (৫৫) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে ডৌহাখলা ইউনিয়নের তাঁতকুড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে সোমবার (২ আগস্ট) রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে তিনি আত্নহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে তার আত্নীয়রা।

সুনীল চন্দ্র আচার্য এই গ্রামের মৃত সুধীর চন্দ্র আচার্য্যের ছেলে। তার স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, তাঁতকুড়া বাজারে তার ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতেন সুনীল চন্দ্র আচার্য। এলাকায় খুবই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। ‘গরীবের ডাক্তার’ বলে খ্যাতি রয়েছে তার।

সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চেম্বার থেকে বাড়ি ফিরে নিজ ঘরে ঘুমাতে যান তিনি। পরে ওই দিন রাত ১টার দিকে পরিবারের লোকজন ঘরের বারান্দার একটি কক্ষে রশিতে সুনীলের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

স্থানীয়রা আরও জানান, দীর্ঘদিনের পারিবারিক কলহ ছিল তাদের। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সুনীল মানসিক ভাবে খুব বিষন্ন ছিলেন। দীর্ঘদিন স্বামী-স্ত্রী এক বাড়িতে বসবাস করলেও তারা আলাদা ঘুমাতেন। ঘটনার দিন তার স্ত্রী ছাড়া কেউ বাড়িতে ছিলো না। রাতে ঘরে তাকে দেখতে না পেয়ে স্বজনরা আশেপাশের সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। পরে রাত ২টার দিকে বারান্দার ঠাকুর ঘরে তার ঝুলন্ত মরদেহ পেয়ে পুলিশে খবর দেন। তারপর পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।

তারা বলেন, এ সময় তার গলায় ঝুলানো একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে তিনি তার ‘স্ত্রী, শ্বশুড় ও দুই শ্যালককে মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করেন।’

গ্রামের প্রাণেশ চন্দ্র ভৌমিক জানান, ‘সুনীল ডাক্তারের মৃত্যুতে অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো। গত পরশু আমি তার কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে আসলাম। আর ২০/৫০ টাকার ডাক্তার দেখাতে পারবো না। আমার পরিবার চিকিৎসায় তার উপর নির্ভরশীল ছিলাম।

নয়ন চন্দ্র দাস বলেন, ‘সুনীল দা’র মৃত্যুতে যে শূণ্যতা তৈরি হয়েছে তা এলাকার মানুষ অনেকটা অনুভব করবে। নরম ও হাসিখুশি মেজাজের লোকটা যে এমন কাজ করবে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’

রব্বানী বলেন, ‘কষ্টে বুকটা ফাইট্যা যাইতাছে। পয়সা কম বা না দিলেও কিছু কইতনা। যা দিছি তাই নিছে। এমন মানুষ আর অইতনা।’

চন্দন কুমার দাস বলেন, ‘মা’র চিকিৎসায় আমি পুরোটাই তার উপর নির্ভর করতাম। দশ গ্রামের মানুষ তার সুনাম করতো।’

গৌরীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক জানান, ‘তার পরিবার জানায়, বেশ কিছুদিন যাবত তিনি মারা যাবেন বলতেন। তার মানসিক বিষন্নতা ছিল।’

চিরকুট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৯৯৪ সাল থেকে কি ঘটেছে তা তিনি একটি বড় কাগজে লিখে গেছেন। নির্দিষ্ট এক-দুইজনকে দায়ী করে নয়, তিনি অনেককের কথাই লিখে গেছেন। তার পরিবার ও ছেলেরা মামলা করতে, এমনকী পোস্টমর্টেম করতেও রাজি ছিলেন না।’

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তার পরিবার কোনও অভিযোগ করতে রাজি নয়। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ ঘটনা তদন্ত করছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by