রংপুর

গাইবান্ধায় নদ-নদীতে নাব্য সংকট

  প্রতিনিধি ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৭:১৫:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

মো. রাহুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা :

তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনাসহ গাইবান্ধার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সবগুলো নদ-নদীর পানি কমে গিয়ে সেগুলো শাখা-প্রশাখায় ভাগ হয়ে এখন শীর্ণকায় রূপ নিয়েছে। এখানকার নদীর অবস্থা দেখে ভাবাই যায় না এসব নদীই বর্ষাকালে ভয়ংকর রূপ নেয়। আকস্মিক পানি শূন্যতায় নৌ ঘাটগুলোর অস্তিত্ব এখন বিপন্ন। ইতিমধ্যে অনেক নৌ ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। যে সব নৌ ঘাট এখনও কোন রকমে টিকে রয়েছে সেগুলোরও এখন বেহাল দশা।

চ্যানেলের অভাবে নৌযান কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। যে কোন সময় নৌ চলাচল সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মূলত: পানি সংকটের কারণে নৌ যোগাযোগ এখন হুমকির মুখে। যে সব রুটে এখনও যান্ত্রিক নৌকাগুলো চলছে, জেগে ওঠা চরের কারণে ঘুর পথে চলাচল করতে হচ্ছে বলে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে সময় লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি। অপরদিকে, ছোট ছোট নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ওইসব নদীতে ইতিপূর্বে স্থাপিত সেচ যন্ত্রগুলো এখন পানি সংকটের মুখে পড়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট সেচ যন্ত্রের আওতাধীন বোরো জমি পানির অভাবে এখন শুকিয়ে যাচ্ছে।

নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনাসহ ছোট বড় সবগুলো নদ-নদীর পানি দ্রæত কমতে শুরু করে। অব্যাহত পানি হ্রাসের ফলে নদীগুলো নিজেদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এ তিনটি নদীর পানি এখন সর্বনিম্ন পর্যায়। বিশাল বিশাল চর জেগে উঠেছে এখন নদীর বুকে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ নদীতে নাব্য থাকার সময় স্বাভাবিকভাবে নৌকায় চলাচল করতো। এখন নদী বুকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চর এবং শীর্ণকায় নদীর শাখাগুলো পায়ে হেঁটে গন্তব্যস্থলে তাদের পৌঁছতে হয়। ইতিমধ্যে অনেক চরে ভূট্টা, বাদাম ও মরিচসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়েছে।

এদিকে নদীগুলো নাব্যতা হারানোর ফলে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেক রুটে যান্ত্রিক নৌকাগুলো চলাচল করতে পারছে না। ব্রহ্মপুত্রে সবচেয়ে বড় ঘাট হচ্ছে বালাসী নৌ ঘাট। এরপরও এই ঘাট এলাকায় নদী পাড় থেকে ১৩টি রুটে যাত্রবাহী যান্ত্রিক নৌকা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। অথচ আগে ৩০টি রুটে এখান থেকে অবাধে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করতো। বর্তমানে এ ঘাট থেকে যে সব রুটে নৌ চলাচল করছে সেগুলো হচ্ছে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও কর্তীমারী, সদর উপজেলার মোল্লার চর, কুন্দেরপাড়া ও পারদিয়ারা, ফুলছড়ির সানন্দবাড়ী, ফুটানী বাজার, জিগাবাড়ী, হরিচন্ডি, খাটিয়ামারী এবং জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ, ও দেওয়ানগঞ্জ। আগে যেখানে একেক রুটে ৪টি করে নৌকা চলাচল করতো এখন সেখানে মাত্র দু’টি করে নৌকা চলাচল করছে।

সাবেক ফুলছড়ি উপজেলা হেড কোয়ার্টার থেকে আগে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও বাহাদুরাবাদসহ ফুলছড়ি উপজেলার গলনা, ফজলুপুর, খাটিয়ামারী, পিপুলিয়া, গাবগাছি, দেলুয়াবাড়ী, জিগাবাড়ী, ভাজন ডাঙ্গা, জিয়াডাঙ্গা ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ রুটে ২০টি নৌকা প্রতিদিন যাতায়াত করতো। এখন সেখানে ৫টিও চলাচল করে না। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও জামালপুরের ১২টি রুটে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানানো হয়েছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে নদীগুলো আরও ভরাট হয়ে যাবে এবং নাব্য সংকটের সৃষ্টি হবে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র বা অন্য নদী ড্রেজিংয়ের এখনও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে দেশের নদীগুলো ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য ফিরিয়ে আনার সরকারের একটি মহাপরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে সিপি গাড়ামারা মৌজার আজিমুদ্দিন জানান, বালুর মধ্যদিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি থেকে জুমারবাড়ী হাটে আসতে খুবই কষ্ট হয়। আমাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে আনি কিভাবে? তাই ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। চর নলছিয়া গ্রামে সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, নৌকা চলাচল না করায় আমাদের জমির ফসল বেগুন, মরিচ, লাউ, কুমড়া, মুলা বাজারে বিক্রয়ের জন্য আনা কষ্টকর হওয়ায় এসব ফসল জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি’।

ফুলছড়ি ইউনিয়নের নৌকার মাঝি জয়নাল বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদ এখন প্রায় পানি শূন্য। বালুর স্তরে এবং ঘাটে আটকে আছে মাঝিদের অসংখ্য নৌকা। শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই নদী শুকিয়ে মরুভূমির মত ধু ধু বালুচর হয়ে গেছে। বিশাল বালুচরের ওপর দিয়ে এখন চলছে গরু, মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানী নৌ-ঘাটের ইজারাদারের পার্টনার মো. শহীদুজ্জামান শাহীন জানান, আমরা সরকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে ঘাট লিজ নিয়েছি। কিন্তু চর জেগে উঠে নৌ-ক্যানেল বন্ধ হওয়ায় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরেছি।

এ ব্যাপারে সাঘাটার হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী প্রধান জানান, সামান্য ৪০ মিটার ক্যানেলের মুখের বালি খনন করে অপসারণ করা হলে আমার হলদিয়া ইউনিয়নের ৭ টি মৌজার মানুষ নৌকাযোগে অতি সহজে অল্প সময়ে যাতায়াত করাসহ তাদের উৎপাদিত ফসল ও পন্য সামগ্রী পরিবহন করা সহজতর হবে। ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হানিফ প্রামাণিক বলেন, বর্ষায় নৌকায় যাতায়াত করলেও এখন শুকনো মৌসুমে হেঁটে চলাচল করছি। ব্রহ্মপুত্রের বুকে এখন মোটর সাইকেল চলছে।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by