চট্টগ্রাম

চকরিয়ায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ফিরেছে প্রাণ চাঞ্চল্য বাড়তে শুরু করেছে দর্শনার্থী

  প্রতিনিধি ২৪ আগস্ট ২০২১ , ৭:৪৭:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

বি এম হাবিব উল্লাহ:

সারা দেশে অবশেষে সরকারি নির্দেশনার আলোকে করোনা সংকট কাটিয়ে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের পর্যটন স্পটসমুহ। এর অংশ হিসেবে গত শুক্রবার ২০ আগস্ট থেকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক। দীর্ঘদিন করোনা সংক্রমণের কারণে বন্ধ থাকলেও সরকারি ঘোষনার আলোকে সম্প্রতিসময়ে পর্যটন স্পটসমুহ খুলে দেয়ার পরপর দেশের অপারপর পর্যটন জোনের মতো ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও বেড়েছে দর্শনার্থীর ভিড়।

গত শুক্রবার খোলার প্রথম দিনে সাফারি পার্কে বেশ পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে বলে জানিয়েছেন পার্কের ইজারদার পক্ষের পরিচালকরা। সাফারি পার্ক সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণের কবলে প্রায় ১৭ মাস বন্ধ থাকার পর ইতোমধ্যে ভ্রমন পিপাসু পর্যটক-দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক। দর্শনার্থীদের কাছে চিত্র-বিনোদন আরো আকষর্ণীয় করতে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পার্কের সবগুলো পর্যটন স্পট।

পাশাপাশি চলতি ২০২১ অর্থবছরে অন্তত ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে পার্কের আধুনিকায়নে বাস্তবায়ন করা হয়েছে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প। তৎমধ্যে নতুনরূপে সাজানো হয়েছে বাঘ সিংহ ও তৃনভোজী প্রার্ণীর বেস্টনী।

বড়পরিসরে তৈরী করা হয়েছে বাঘের নিরাপদ আবাসস্থল। এছাড়ার পার্কের ভেতরে দর্শনার্থীদের চলাচল নিশ্চিতে সংস্কার করা হয়েছে সাত কিলোমিটার ভঙ্কুর সড়ক। আধুনিকায়ন করা হয়েছে পর্যবেক্ষন টাওয়ার। একই সঙ্গে রংয়ের তুলিতে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে পার্কের প্রতিটি অবকাঠামো এবং পাখিশালা গুলোও।

করোনাকালীন সময়ে মুক্ত পরিবেশ থাকালেও ছিলনা পর্যটক-দর্শনার্থীদের আগমন। ওই সময় বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল পার্কের প্রাণীকুল। সেই সুযোগে করোনাকালের অন্তত কোলাহলমুক্ত পরিবেশে প্রাণিকুলে যেমন প্রাণচাঞ্চল্য ছিল, তেমনি আগমন ঘটেছে একের পর এক প্রাণীদের প্রসব করা নতুন নতুন অতিথির। বেড়েছে প্রাণী গুলোর পরিবারের সদস্য সংখ্যাও। পার্কের প্রতিটি প্রাণিকুলে বংশবিস্তার ঘটেছে। জন্ম নেওয়া প্রাণীর মধ্যে হরিণ, বানর, ভাল্লুক, জলহস্তি। পাশাপাশি জন্মলাভ করেছে ময়ূরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির। করোনা মহামারিতে পার্কে অন্তত শতাধিক বন্যপ্রাণী নতুন অতিথি জন্ম দিয়েছে বলে জানিয়েছে পার্কের কর্তৃপক্ষ। এসব জন্ম নেওয়া বেশির ভাগ প্রাণী নিবিড় পরিচর্যায় বড় করে তুলছেন পার্কের ভেটেরিনারি বিভাগের সদস্যরা।

সাফারি পার্কের পটভুমি-

প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর এ জেলায় রয়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। জেলার চকরিয়া উপজেলাতেই ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক। এটি ‘ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক’ নামেও পরিচিত। নান্দনিক ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বুনো জীবজন্তুর সমাহারে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ভিড় করছেন অগণিত দেশি-বিদেশি পর্যটক।প্রধান ফটকের বাম পাশে রয়েছে ডিসপ্লে ম্যাপ। বেষ্টনীর ভেতরেই বাঘ, সিংহ ও তৃণভোজী প্রাণীর বিচরণ। এরা পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করছে। বেষ্টনীর ভেতরেই প্রাণীরা থাকায় সাফারি পার্ক হিসেবে মেনে নেন না অনেকেই। তারপরেও প্রাণী বৈচিত্র্যের অপার সৌন্দর্য আপনাকে মোহিত করবেই। অনায়াসে বাঘ-সিংহসহ অন্য প্রাণী পর্যবেক্ষণ করার জন্য রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। যে কেউ চাইলেই বাসে করে ঘুরে ঘুরে পুরোপার্ক দেখতে পারবেন। পাশাপাশি পার্কে তথ্য শিক্ষাকেন্দ্র, প্রাকৃতিক ঐতিহাসিক জাদুঘর এবং বিশ্রামাগার রয়েছে।

প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত নির্জন উঁচু-নিচু টিলা, প্রবহমান ছড়া, হ্রদ, বিচিত্র গর্জনের মতো সুউচ্চ ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক বৃক্ষ চিরসবুজ বনের জানা-অজানা গাছ-গাছালি, ফল-ভেষজ উদ্ভিদ, লতার অপূর্ব উদ্ভিদের সমাহার ও ঘন আচ্ছাদনে গড়ে উঠেছে এ সাফারি পার্ক। ছায়াঘেরা পথ, সবুজ বনানী, জানা-অজানা গাছের সারি, পাখি আর বানরের কিচিরমিচির সব কিছু মিলিয়ে যেন এক অসাধারণ অনুভূতি। অস্বচ্ছজলে জলহাতির মুখ উঁচিয়ে থাকা বা বেষ্টনীর ভেতর বাঘের হালুম, হাজার পাখির কিচিরমিচির মুগ্ধ করবে যে কাউকে।

 

কিছুদিন আগে যোগ হওয়া জেব্রার দল, বুনোহাতির বিচরণ ও বানরের দুষ্টুমি প্রাকৃতিক পরিবেশ পাবেন। ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক মূলত হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।এ পার্কে স্বাদু পানির কুমির যেমন আছে, তেমনি আছে লোনা পানির কুমির। এখানে বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে জেব্রা, বাঘ, সিংহ, হাতি, ভালুক, গয়াল, জলহস্তী, মায়া হরিণ, সাম্বা হরিণ, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণসহ পাখ-পাখালির সমাহার। পথের ধারে উঁচু ওয়াচ টাওয়ারে উঠে যে কেউ দেখতে পারবেন পুরো পার্কের সীমানা পর্যন্ত। উপভোগ করতে পারবেন অপার সৌন্দর্য। পার্কজুড়েই রয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য। আছে পার্কের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। ভেতরে রয়েছে দর্শনীয় বাংলো।এছাড়া ডাটাবেজ থেকে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ধারনা পাবে। পার্কের প্রধান ফটকের পাশে রয়েছে অর্কিড হাউজ। সেখানে দেশ-বিদেশী অন্তত ৫০ প্রজাতির অর্কিড সম্পর্কে বিশদ ধারনা পেতে পারবে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা। পার্কের বাইরে প্রধান ফটকের পাশে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নান্দনিক ভার্স্কয। পার্কে বিশ্রামের জন্য রয়েছে একাধিক ছাতা, শেড ও বে । প্রকৃতিক কাজ সারতে রয়েছে পাবলিক টয়লেট।

কীভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী সৌদিয়া, এস আলম, গ্রিনলাইন, হানিফ, শ্যামলী প্রভৃতি পরিবহনের বাসে সরাসরি ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের সামনে নামতে পারবেন। শ্রেণিভেদে বাসগুলোর প্রতি সিটের ভাড়া জনপ্রতি ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ট্রেনে ভ্রমণ করতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশন হতে সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলি, চট্টগ্রাম মেইলে চট্টগ্রাম আসতে হবে।এরপর নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে কক্সবাজার যাওয়া যাবে। বা আগেই ডুলাহাজারা পার্কের রাস্তায় নেমে যেতে পারেন। বিভিন্ন ধরন ও মানের বাসে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে আসতে পারবেন। এ ছাড়া কক্সবাজার এসে সিএনজি, মাইক্রো কিংবা লোকাল বাসে চড়ে অনায়াসেই ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে যেতে পারবেন।

চকরিয়া থেকে দক্ষিণে ৭-৮ কিলোমিটার। তাই একেবারেই কাছের চকরিয়াতেও থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। লম্বা ছুটির দিনে বা বিশেষ দিনগুলোতে প্রচন্ড রকমের ভিড় থাকে। ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের তত্তাবধায়ক জানান, সরকারি নির্দেশনার আলোকে করোনা সংকট কাটিয়ে অবশেষে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের পর্যটন স্পটসমুহ। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার ২০ আগস্ট থেকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে দেশের প্রথম ডুলাহাজারা ইউনিয়নে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক। শুক্রবার খোলার প্রথমদিনে সাফারি পার্কে বেশ পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে।করোনাকালীন সময়ে কোলামুক্ত পরিবেশ থাকায় ছিল না পর্যটক-দর্শনার্থীদের আগমন।

ওই সময় বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল পার্কের প্রাণীকুল। আর সেই সুযোগে করোনাকালের অন্তত কোলাহলমুক্ত পরিবেশে প্রাণিকুলে যেমন প্রাণচাঞ্চল্য ছিল, তেমনি প্রতিটি প্রাণিকুলে বংশবিস্তার ঘটেছে। সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার সরকারী ঘোষনা মতে সাফারি পার্ক বন্ধ থাকে। তবে বিশেষ দিবসে ছুটির দিনেও পার্ক খোলা থাকে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পার্কে ভ্রমন করতে পারবেন পর্যটকরা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by