প্রতিনিধি ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৬:১৪:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ
মুক্তার হাসান, চৌহালী (সিরাজগঞ্জ):
বিকল্প স্থানে পাঠদানের চিন্তা ২৮ টি স্কুলের : ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা, স্কুল আঙ্গিনায় ঝোপঝাড়
সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনা নদীর ক্রমাগত ভাঙনে গত দেড় বছরে প্রায় ২৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রাস করেছে যমুনা নদী। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন ঘোষনার পর থেকে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঝোপঝাড়, বাথরুমসহ আসবাবপত্রের ধুলো পরিস্কার করা হচ্ছে। তবে ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় চিন্তিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। স্কুল গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, পাঠদান কার্যক্রম ও পরীক্ষা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
চৌহালী উপজেলা শিক্ষা অফিস ও প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ৭টি ইউনিয়নে ১২৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, এছাড়া কলেজ ৫টি, কারিগরি কলেজ ৩টি, ফাজিল মাদরাসা ৩টি, আলিম মাদরাসা ১টি, দাখিল মাদরাসা ১৫টি, হাই স্কুল ১৮টি ও নিম্নমাধ্যকি বিদ্যালয় রয়েছে ২টি। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২৬ হাজার ও মাধ্যমিকের প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। করোনার কারনে প্রায় দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। অনেকেই বাল্য বিয়ের পিঁড়িতে বসে সংসার গড়েছে। কেউ কেউ কর্মের তাগিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ, শ্রেনী কক্ষের দরজা-জানালায় মাকড়শা বাসা বেঁধেছে। পড়েছে বালুর আস্তরণ। এজন্য কিছু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ এখনও নিশ্চিত হয়নি। ক্লাস চালু হলেও এবছর বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লেগে যাবে। কারন যমুনার চরাঞ্চলে অধিকাংশ অভিভাবক অসচেতন ও আথির্ক সংকটের কারনে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী বাড়িতে গৃহ শিক্ষকের ব্যবস্থা করতে পারেনি। বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক সমস্যার কারনে চরাঞ্চলে অনলাইন ক্লাস ছিলো না বললেই চলে।
দীর্ঘ দিন পড়াশোনা বন্ধ থাকার কারনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাড়াশোনার কোন আগ্রহ নেই। যে কারনে ক্লাস চালু হলেও সহজেই তারা স্বাভাবিক পড়াশোনায় খাপখাইয়ে নিতে পারা কষ্টকর হবে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক। একারনে দেড় বছর পর ক্লাস চালু হলেও চরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিতি ও পরীক্ষায় অংশ গ্রহন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এছাড়া বন্যার পানি প্রবেশ করেছে মুরাদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকুটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাপানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়া উত্তর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাষমধ্যশিমুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বীরমাশুকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোদালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরমুরাদারপুর ও বৈন্য সহ প্রায় ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
বিশেষ করে এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই যমুনা নদী ভয়ংকার মূর্তি ধারন করে ক্রমাগত ভাবে বসত-বাড়ি, ফসলি জমি, দোকান পাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়। এর সাথে উমারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউসা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউসুফ শাহী সলঙ্গী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিলঝলহর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধুপুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এদিকে গত দেড় বছওে শাহাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মালিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরবোয়ালকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেহাইমৌশা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বারবয়লা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থলনওহাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরমাশুকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রিদাশুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, এ্যাওয়াজিকাঠালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘুশুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হিজুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পয়লা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়াপূর্ব পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাষমধ্যশিমুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম হাটাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচশিমুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধুপুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শৈলজানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উমারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউসা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউসুফ শাহী সলঙ্গী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিলঝিলহর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরপাচুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আগবিয়ানপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
বর্তমানে প্রায় ৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর নতুন স্থানে পাঠদান কক্ষ নির্মান হয়েছে। তবে এবছর বিলীন হয়ে যাওয়া স্কুল গুলোর টিন কাঠ সহ আসবাবপত্রের ঠাঁই হয়েছে কারো বাড়ির উঠান, খোলা মাঠে অথবা ওয়াবদাবাঁধে।
এ কারনে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবশে নিয়ে শঙ্কায় অভিভাবকরা। বিশেষ করে এবছর স্কুল গুলোতে স্কাল পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকদেও মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, করোনায় বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নিশ্চিত করা সহ প্রতিদিনই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্টাফসহ সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সহ স্কুলবিহীন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে চৌহালী উপজেলাটি রাশজাহী বিভাগের মধ্যে একমাত্র দুর্গম উপজেলা হওয়ায় চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানান, নদীতে বিলীন হওয়া স্কুলগুলি অন্যের বাড়ি অথবা খোলাস্থানে ঘড় তুলে পাঠদানের ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে।
আর স্কুল খোলার বিষয়ে ঘোষনা আসার পর থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য উপযুক্ত করা হচ্ছে। তবে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভার:) আনিছুর রহমান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস চালুর জন্য সব রকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বন্যা কবলিত ও ভাঙনে বিলীন বিদ্যালয় গুলোতে পাঠদানে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে।