খুলনা

ঝিনাইদহে নদ-নদীতে বাধ দিয়ে মাছ স্বীকার হুমকির মুখে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ

  প্রতিনিধি ২২ আগস্ট ২০২১ , ৭:৩০:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

মোমিনুর রহমান মন্টু, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ নদীতে বাধ দিয়ে দেশীয় মাছ স্বীকার করছে এক ধরনের অসাধু মানুষ। তারা মাছের বিচরণ ক্ষেত্র বন্ধ করে এসব দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরে বিক্রি করছে। ফলে দেশীয় এসব মাছের অভয়ারণ্য ও বংশ বিস্তার হুমকির মুখে পড়েছে।

রোববার সকালে জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার ইকড়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীতে গিয়ে দেখা যায় মাত্র দেড় কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি বাধ। এই বাধের কারণে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ছোট-বড় সব মাছই ধরা পড়ায় ভবিষ্যতে নদ নদীতে দেশীয় মাছের সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয় জেলেদের।
ইকড়া গ্রামের আবু সাইদ নামে এক বাধ মালিক জানান, সদর উপজেলার গান্না এলাকার কিছু মানুষ নদীতে এ বাধ দেয়। তার বাবা সাইদুল ইসলাম মাত্র ১৫ দিন আগে তাদের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় একটি বাধ কিনেছেন। তার দাবি এই বাধ থেকে দুই থেকে তিন মাস মাছ ধরবেন। সে মাছ বিক্রি করেই টাকা রোজগার করবেন। তবে দেশীয় মাছের বংস বিস্তার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন প্রশ্নে জানান, আমরা বহু বছর ধরেই এভাবে মাছ ধরছি কোন ক্ষতি তো দেখছি না। তবে আবু সাইদের দাবি করেন, নদীতে বাধ দিয়ে মাছ না ধরার নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আইনের কথা তিনি জানেন না। এখন জানার পর বাধ সরিয়ে নেবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি কোনো জবাব দেন।

ভারতীয় সীমান্তবর্তী এ জেলায় নদ-নদী রয়েছে ১২টি। ৩৫ বাওড় ও ১০৪ বিল রয়েছে। খাল রয়েছে ৪৩টি এবং পুকুর রয়েছে ২৭ হাজার ৬৪৯টি। এক হাজার ৯৪৯ বর্গ কিলোমিটার আয়োতনের এ জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। এই পরিমাণ মানুষের বাৎসরিক মাছের চাহিদা ৩৮ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে চাহিদার থেকে বেশি মাছ উৎপাদন হলেও দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন ব্যহত হয়। মা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই স্বীকারিরা ধরে ফেলা ও সময় মত বৃষ্টি না হওয়াসহ নানা কারনে দেশীয় মাছ উৎপাদন একেবারে নীম্ন পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান জেলার মৎস অফিসগুলো।

কালীগঞ্জ উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা পাড়ের গ্রাম মস্তবাপুরের বাসিন্দা বিপুল সরকার জানান, আমাদের গ্রামের কয়েকজন মানুষ নদীর মধ্যে বাঁশের বেড়া আর জাল দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করছে। তাদের দাপটে আমরা খাওয়ার জন্য মাছও ধরতে পারিনা। এভাবে নদীর মাছ ধরা পড়লে কোনো মাছ বংশ বিস্তার করতে পারবে না।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আলফাজ উদ্দীন শেখ জানান, নদীতে আড়া আড়িভাবে বাঁশের বাধ ও জাল দিয়ে মাছ ধরা বেআইনি। এ বাধের কারণে মাছ বড় হাওয়ার সযোগ পায় না। সব ধরনের ছোট ছোট মাছ ধরা পড়ে। যে সব মাছ খাওয়ার উপযোগী নয় কিন্তু নষ্ট হয়। ইতিমধ্যে আমরা জেলার বিভিন্ন নদ নদীতে যে সকল বাধ দেওয়া আছে তা অপসারণ শুরু করেছি। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে জেলার নদী থেকে সব বাধ অপসারণ করতে পারবো।

Powered by