স্বাস্থ্য

ডেঙ্গুতে নতুন আক্রান্ত ১২৩৯, মৃত্যু ৫

  প্রতিনিধি ১৩ জুলাই ২০২৩ , ৭:৪৩:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক :

নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ২৩৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। নতুন রোগীদের ৭৫৬ জন ঢাকার বাসিন্দা। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ২২০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত সাত মাসে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জন মারা গেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছে, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই রক্তক্ষরণজনিত হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ডেঙ্গুর শেষ ধাপ শক সিনড্রোমে এদের মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো যাবে। সকল সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্ণার চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, টিভিতে স্ক্রল, রেডিও বার্তা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা শহরে ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে মহাখালীর ৮০০ শয্যাবিশিষ্ট ডিএনসিসি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসে। তখন প্লাটিলেট কমে রক্তক্ষরণে রোগীরা শক সিনড্রোমে চলে যায়। রক্তক্ষরণ ও শরীরের পানিশূন্যতার কারণে রোগী অচেতন হয়ে পড়া এই শক সিনড্রোমে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আর কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিয়ে ভাবার চেয়েও বেশি জরুরি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা। এমনটা না হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে পুরো দেশজুড়েই।

আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সারা দেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে যত লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে তারমধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। মোট আক্রান্তের শতকরা ৬০ ভাগই ঢাকার বাসিন্দা। এখন সারা দেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। পানি জমে থাকছে। এতে ডেঙ্গুর লার্ভা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার মেয়ররা ডেঙ্গুর বিস্তার প্রতিরোধে কাজ করছে। তবে এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

হাসপাতালে চিকিৎসকদের ডেঙ্গু বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরজনিত মৃত্যু হ্রাসে আপডেটেড ডেঙ্গু চিকিৎসা গাইডলাইন সরবরাহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

ডেঙ্গু রোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা অফিস পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানের ভবন ও আশপাশে মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থলে যাতে পানি জমতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা অফিসগুলোকে। এ ছাড়া ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার বিস্তার রোধে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে সব শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ সময়ের আলোকে বলেন, আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে উচ্চ তাপমাত্রা থাকে, শরীর ব্যথা, গিরায় গিরায় ব্যথা, মাথা ব্যথা বা চোখে ব্যথা থাকে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে জ্বর আপনাআপনি কমে যায়। এ সময় প্ল্যাটিলেট কমে এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে। ব্রাশ করতে গিয়ে দাঁতের গোড়া থেকে বা নাক থেকে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে। তবে এবারের চিত্রটা অনেকটাই ভিন্ন। এবারের ডেঙ্গুর লক্ষণটাই ভিন্ন। তিনি বলেন, এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এর আরেকটি কারণ হলো, এসব রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই এর আগেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। হয়তো তারা আগে সামান্য জ্বর, কাশি ভেবে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। ফলে যাদের দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থবার আক্রান্ত হচ্ছে তারা এই ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জটিলতাগুলো এড়ানো সম্ভব। এ নিয়ে অবহেলা করলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন অনেক সময়ই চিকিৎসকদের কিছু করা থাকে না। তখন আইসিইউতে ভর্তি হতে হয়। তাছাড়া এর তো কোনো নির্দিষ্ট এন্টি ভাইরাস বা ওষুধ নাই। জ্বরে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ওষুধ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ সেবন না করার পরামর্শ দেন তিনি।

উল্লেখ্য, দুই দশকের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু বাংলাদেশে বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিবছর বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by