উপ-সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু নিয়ে আগাম সতর্কতা ও সচেতনতা

  প্রতিনিধি ৩০ মার্চ ২০২০ , ১:৪২:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

অলোক আচার্য : সারাবিশে^ এখন করোনার প্রভাব চলছে। করোনার প্রভাবে সারাবিশ^ আতঙ্কিত। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার প্রভাবে বিশে^র অর্থনীতিও যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। আমরাও সতর্ক এবং সচেতন। আমাদের মধ্যে আরও একটি ভীতি কাজ করছে। তা হলো ডেঙ্গু জ¦র। গত বছরের বর্ষা মৌসুমের পুরোটা সময়জুড়েই ডেঙ্গু ছিল আতংকের নাম। বহু মানুষের প্রাণও নিয়েছে এই ডেঙ্গু। ছড়িয়ে পড়েছিল জেলা ও উপজেলাগুলোতেও। গত বছরের আগেও ডেঙ্গু তার প্রভাব বিস্তার করেছে। তবে তা প্রকট আকার ধারণ করেছিল গত বছরই। ডেঙ্গু ইস্যু এত প্রভাব বিস্তার করে যে রাজনীতিতেও রীতিমতো আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। কারণ এর নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া। জনগণই যেহেতু সব ক্ষমতার মূলে তাই কেবল ডেঙ্গু ভীতির কারণে সেই আস্থা কমবে তা ঘটতে দেয়া যায় না। বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। মশাবাহিত রোগের মধ্যে অন্যতম মারাত্মক হলো ডেঙ্গু। মশা খুব ছোট প্রাণী হলেও এটি অনেক বড় প্রাণীর চেয়ে মারাত্মক। এমনকি পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে তার মধ্যে এই কীট অত্যন্ত ভয়ংকর। এটি বহন করে মারাত্মক ভাইরাস, ব্যকটেরিয়া। সামান্য কামড়েই শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে রোগ। এসব রোগের ফলশ্রুতিতে মৃত্যুও ঘটতে পারে। এদের মধ্যে ভয়ংকর হলো এডিস মশা। স্ত্রী এডিস মশার কামড়েই ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়। এছাড়া চিকনগুনিয়াও ভীতিকর। ডেঙ্গু তাই আমাদের কাছে এক ভয়ের নাম। জানা যায়, এই রোগটি অত্যন্ত প্রাচীন। এর উৎপত্তি চীনে, ৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে। আরও জানা যায়, এই মশার জন্ম আফ্রিকায়। চারশো বছর আগে। ক্ষুদ্র এই প্রাণীটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ যে চীন করোনা ভাইরাসের কারণে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। সেখান থেকে বিস্তার লাভ করে তার বিশে^র শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পরেছে। এশিয়া মহাদেশসহ অন্যান্য মহাদেশেও ডেঙ্গু একটি পরিচিত রোগের নাম। অনেক উন্নত বিশে^ও এর কুপ্রভাব দেখা যায়। ডেঙ্গু জ¦র হিসেবে নামকরণ করা হয় ১৭৭৯ সালে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ডেঙ্গু মহামারী আকারে দেখা দেয় ১৯৫০ সালে ফিলিপিন্স-থাইল্যান্ডে। গত বছরের সেই ভীতি মানুষের কাটেনি। সামনে বর্ষা মৌসুম। আর ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা বর্ষার এই মৌসুমেই বংশ বিস্তার করে। ডেঙ্গুর সতর্কবাণীও মানুষের কাছে আজ অনেকটাই পরিচিত। পানি জমে থাকতে দেয়া যাবে না। ফলে মজা পুকুর বা খাল বা ড্রেন এসব ডেঙ্গু মশা বিস্তারের উপযুক্ত জায়গা। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও কিছু কাজ রয়েছে। এডিস মশার বংশ বিস্তার করতে পারে এমন জায়গা আমরা অনায়াসেই বিনষ্ট করতে পারি। ইতিমধ্যেই আসন্ন বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেশের প্রতিটি পৌরসভাকে আগাম প্রস্তুতি নিতে বলেছে। দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের বহু পৌরসভার মশক নিধন বা নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই। গত বছর সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর পৌরসভাগুলোকে এককালীন ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। প্রতিটি পৌরসভা গড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা করে পেয়েছে। এবার অবশ্য সব মহলে ব্যাপক সচেতনতা রয়েছে।

 

তারপরও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এই চ্যালেঞ্জের কারণ পরিবেশ এবং নিজেদের দায়বদ্ধতা। জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং পরিবেশের কারণে ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হবে। গত বছরের পর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমেই ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম চোখে পড়েছে। তারপরেও শুরু থেকে এবছর ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন সেমিনার,ওয়ার্কশপ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান যেখানে মানুষের সমাগম হয় সেরকম স্থানে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। এডিস মশার প্রজননের ক্ষেত্রে ঢাকার পরিবেশ যেহেতু বেশি অনুকূল তাই এখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। করোনার পর যেন এডিস মশার কারণে জনগণ ভোগান্তিতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 তবে এই কার্যক্রমের দায়িত্ব কেবল কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করে বসে থাকা উচিত হবে না। নাগরিক হিসেবে আমাদের যে দায়িত্বগুলো রয়েছে তা পালন করতে হবে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় গ্রামে গঞ্জে যেখানে ময়লা আবর্জনা বা সহজেই বৃষ্টির পানি জমে থাকতে পারে সেসব স্থান কর্তৃপক্ষের ভরসায় না থেকে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে পারি। যেহেতু এডিস মশার বংশবিস্তার এবং এর ক্ষতিকর দিক আজ আমরা সবাই জানি। ফলে কোনো জানা বিষয়ে প্রতিরোধ করা সহজ হয়। প্রয়োজন আমাদের সদিচ্ছা। আমরা নিজেরা এবং কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টা এই দুই-য়ে মিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে গত বছরের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হবে না বলেই বিশ^াস।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by